মুর আদা দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বর্ষজীবী গুল্ম

আদা পরিবারের প্রজাতি

মুর আদা

বৈজ্ঞানিক নাম: Zingiber montanum (Koen.) Dietr in L., সমনাম: Amomum montanum Koen. (1731), Zingiber purpureum Rosc. (1807), Cassumunar roxburghii Colla. (1830), Zingiber cassumunar var. subglabrum Thw. (1861), Zingiber montanum auct. non (Koen.) Dietr. (1976). ইংরেজী নাম: জানা নাই। স্থানীয় নাম: বন আদা, মুর আদা
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae, বিভাগ: Angiosperms, অবিন্যাসিত: Monocots, অবিন্যাসিত: Commelinids, বর্গ: Zingiberales, গোত্র: Zingiberaceae, গণ: Zingiber Boehmer, প্রজাতি: Zingiber montanum (Koen.) Dietr in L.

বর্ণনা: মুর আদা জিঞ্জিবার গণের বর্ষজীবি পত্র কান্ডসহ রাইজোমসমৃদ্ধ বীরুৎ। এরা ১২ মিটার, লম্বা, রাইজোম তীব্র সুগন্ধী, ভিতরে গাঢ় হলুদ। পাতা ল্যান্সাকার, ৩০-৪৫ x ৫.০-৭.৫ সেমি, অবৃন্তক বা প্রায় অবৃন্তক, নিচতল রোমশ বা শুধু মধ্যশিরা বরাবর রোমশ, লিগিউল খুব খাটো, ১ মিমি বা আরো কম, দ্বিখন্ড, রোমশ, সীথ রোমশ। ভৌম পুষ্পদন্ড মুলজ, স্পাইক ৭-১৫ X ২-৪ সেমি, ডিম্বাকার থেকে আয়তাকার, মঞ্জরীদন্ড ১৫-৩০ সেমি লম্বা। মঞ্জরীপত্র চওড়া-ডিম্বাকার, ৩.০-৪.৫ x ২-৩ সেমি, দীর্ঘাগ্র, মসৃণ বা রোমশ, বেগুনে-বাদামী, ঘনভাবে প্রান্ত-আচ্ছাদী, প্রতিটি একটি ফুল ধারণ করে, উপ-মঞ্জরীপত্র চওড়া-ডিম্বাকার, ৩.০-৩.৫ সেমি লম্বা, রোমশ, ঝিল্লিবৎ কিনারা সম্পন্ন, পেঁচানো। বৃতি প্রায় ১.৫ সেমি লম্বা, কাটা, খাট ৩-দন্তুর, একপাশ বিদীর্ণ, মসৃণ। দলমন্ডল ফিকে হলুদ, নল প্রায় ২.৫ সেমি লম্বা, পাপড়ি ৩টি, পাশের খন্ড ২.৩-২.৫ সেমি লম্বা, ল্যান্সাকার, পৃষ্ঠ খন্ড চওড়া, নৌকাকার। লেবেলাম ফিকে হলুদ, ২-৩ x ১.৮-২.৫ সেমি, মাঝের খন্ড উপবৃত্তাকার, দ্বিখন্ড, পাশের খন্ড (ষ্টেমিনোড) ডিম্ব-আয়তাকার, প্রায় ৮ x ৫ মিমি। পরাগধানী প্রায় বৃন্তহীন, কোষ ১ সেমি এর উপর, ঝুটি পরাগধানীর চেয়ে কিছুটা লম্বা। গর্ভাশয় ৪-৬ X ৩ মিমি, রোমশ, গর্ভাশয় উপরস্থ গ্রন্থি রেখাকার। ক্যাপসিউল ডিম্বাকার, প্রায় ১.৫ সেমি ব্যাস। ফুল ধারণ ঘটে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২২ (Kumar and Subramanium, 1986).

আরো পড়ুন:  একাঙ্গী বা মহা-বরি বচ আদা দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার গুল্ম

আবাসস্থল: ছায়াযুক্ত বনতল, চাষও করা হয়।

বিস্তৃতি: ভুটান, ভারত, মালয়-পেনিনসুলা, ফিলিপাইন ও শ্রীলংকা। বাংলাদেশে প্রজাতিটি ঢাকা, টাঙ্গাইল, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বনে পাওয়া যায়।

মুর আদার ফুল, আলোকচিত্র: কামরুজ্জামান বাবু, সিসি বাই এসএ

অর্থনৈতিক ব্যবহার/গুরুত্ব/ক্ষতিকর দিক: ফিলিপাইন এ গাছটি ঔষধ হিসাবে হাঁপানি, বাত, উদরাময় এবং চর্মরোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়। রাইজোমে ১.৮৪% উদ্বায়ী তেল থাকে, যাতে প্রধান উপাদান হিসাবে আছে terpinen-4-ol (৪৫.৪৪%)। এই তেল ৯ টি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকরী, এগুলি হল Klebsiella pneumoniae, Salmonella paratyphi, Salmonella typhi, Escherichia coli, Enterobacter aerogennes, Proteus vulgaris, Proteus mirabilis, Arizona sp., Pseudomonas aeruginosa এবং ছত্রাকের ৪ টি প্রজাতি, যাদের নাম Candida albicans, Microsporum canis, Sporothrix schenckii, Rhizopus sp.। ইন্দোনেশিয়াতে রাইজোম মসলা এবং ঔষধ হিসাবে ব্যবহার হয়। ভারতে এটিকে পাকস্থলীর শক্তি বর্ধক, বায়ু নিরোধক, উত্তেজক হিসাবে গন্য করা হয় এবং ডায়রিয়া ও পেটের শূলবেদনায় ব্যবহার হয় (Oliveros, 1996; Riswan and Setyowati, 1996)।

আমরা যে খাবার জন্য আদা (Zingiber officinale) খাই সেটির ভেষজ গুনাগুণ সম্পর্কে জানতে বিস্তারিত পড়ুন

আদা ও শুঠের ১০টি ভেষজ গুনাগুণ

জাতিতাত্বিক ব্যবহার: মহেশখালি দ্বীপে সন্তান জন্মের পর রাইজোম রান্না করে দুর্বলতা কাটিয়ে উঠার জন্য মাকে খেতে দেওয়া হয়। এছাড়াও কক্সবাজার, চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন এলাকায় এটি আদার বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

বংশ বিস্তার: রাইজোম দ্বারা সহজেই বংশ বিস্তার করা যায়।

প্রজাতিটির সংকটের কারণ: প্রজাতিটির সংকটের কোনো বড় কারণ জানা নেই।

সংরক্ষণ: বর্তমান অবস্থা ও আশংকা মুক্ত (lc)।

গৃহীত পদক্ষেপ: সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

প্রস্তাবিত পদক্ষেপ: আশু কোনো পদক্ষেপের প্রয়োজন নাই।

তথ্যসূত্র:

১. মোহাম্মদ ইউসুফ, (আগস্ট ২০১০)। অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১২ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৪৮৯-৪৯০। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

আরো পড়ুন:  জিঞ্জিবার জিঞ্জিবারাসি বা আদা পরিবারের একটি গণের নাম

Leave a Comment

error: Content is protected !!