ভূমিকা: বাওবাব (বৈজ্ঞানিক নাম: Adansonia digitata ইংরেজি: Annatto, Arnotto, Lipstict Plant) হচ্ছে মালভেসি পরিবারের অ্যাাডানসোনিয়া গণের উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলের উদ্ভিদ। এই গাছের বাণিজ্যিক গুরুত্ব অনেক।
বৈজ্ঞানিক নাম: Adansonia digitata L., Syst. Nat. ed. 10, 2: 1144 (1759). সমনাম: Bixa katagensis Delpierre (1970). ইংরেজি নাম: Baobab Tree, Monkey Bread Tree, African Calabash, Sour Gourd. স্থানীয় নাম: বাওবাব।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae – Plants অবিন্যাসিত: Angiosperms অবিন্যাসিত: Eudicots অবিন্যাসিত: Rosids বর্গ: Malvales পরিবার: Malvaceae গণ: Adansonia প্রজাতি: Adansonia digitata.
বাওবাব গাছের বিবরণ
বাওবাব পর্ণমোচী বৃক্ষ। এর বাকল মসৃণ ও মূলীয় অংশের ঘের প্রায় ৩৫ মিটার। জানা গেছে এই প্রজাতির অন্যতম একটি বৃহৎ গাছ এক হাজার বছর পর্যন্ত জীবিত আছে। তরুণ বৃক্ষে পত্র সরল, পরিণত বৃক্ষে করতলাকার যৌগিক, পত্র একান্তর, উপপত্র আশুপাতী। বৃন্ত ১৬ সেমি পর্যন্ত লম্বা, পত্রক ৫ থেকে ৭ টি, কদাচিৎ ৯ টি, অবৃন্তক বা ক্ষুদ্র বৃন্ত যুক্ত।
পুষ্প উভলিঙ্গ, একল বা জোড়াবদ্ধ কাক্ষিক, লম্বা পুষ্পদন্ডে ঝুলন্ত। বৃতি ৩-৫ খন্ড যুক্ত, ৫-৯ X ৩-৭ সেমি, ভিতর মখমল সদৃশ। ফুলের পাপড়ি ৫ টি, সাদা, বিডিম্বাকার। ফুলের দৈর্ঘ্য ৫ থেকে ১০ ও প্রস্থ ৪.৫ থেকে ১২.০ সেমি। পুংকেশর অসংখ্য, নিম্নাংশে যুক্ত, মুক্ত অংশ সমূহ সমান, বক্র। গর্ভাশয় ৫ থেকে ১০ কোষী, গর্ভদন্ড লম্বা বহির্মুখী, গর্ভমুন্ড ৫ থেকে ১০ খন্ডযুক্ত। ফল কাষ্ঠল, অবিদারী ক্যাপসিউল, গোলাকার থেকে দীর্ঘায়ত-বেলনাকার। ফলের বাহ্যিক অংশ মখমল সদৃশ। বাওবাদের বীজ অনেক হয়। বীজ দেখতে বৃক্কাকার, নরম, সাদা মন্ডের মধ্যে সন্নিবিষ্ট।
চাষাবাদ ও বংশ বিস্তার:
বাওবাদের আবাসস্থল পার্বত্যাঞ্চলের উপরি পৃষ্ঠের বালুকাময় ও অন্তর্ভূমির দো-আঁশ মাটিতে জন্মে। ‘ব্যক্তিগত বাগান, রমনা পার্ক ও ধানমণ্ডি লেক পার ছাড়া সম্ভবত বাংলাদেশের কোথাও নেই। শীতে পাতা ঝরে ও নতুন পাতা গ্রীষ্মের শেষে গজায়। এর ফল দেখতে শশার মতো, আকারে বড় ও ঝুলন্ত।’[১] সাধারণত শাখা কলামের সাহায্যে বংশ বিস্তার ঘটে। বীজের সাহায্যে প্রজনন হলেও বীজের অঙ্কুরোদগমের হার কম। ফুল ও ফল ধারণ জুলাই থেকে আগস্ট।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ৯৬, ১২৮, ১৪৪, ১৬৯ (Bosch et al., 2004).
বিস্তার: বাওবাবের আদিনিবাস আফ্রিকা। তবে ভারতের মতো উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলীয় অঞ্চলে জন্মানে। বাংলাদেশে অল্প কিছু গাছ বিভিন্ন উদ্যানে রোপণ করা হয়েছে। ঢাকা শহরের রমনা পার্কে এরূপ একটি গাছ আছে।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব
বাওবাব গাছের পাতা সবজিরূপে রান্না করে খাওয়া হয়। কচি কান্ড ও চাড়া গাছের মূল একই পদ্ধতিতে ব্যবহার চলে। ফুল ও বীজ কাঁচা অবস্থায় খাওয়া হয়। ফলের ভিতর পুষ্টিকর আহার্য মন্ড বিদ্যমান। গাছটির বিভিন্ন অংশে ভেষজ গুণাবলী বিদ্যমান এমন কি ম্যালেরিয়া রোগেরও চিকিৎসা করা হয়। আফ্রিকায় বিভিন্ন ব্যবহারের জন্য এই গাছটি জন্মানো হয়।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) বাওবাব প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে এর অল্প কয়েকটি গাছ রয়েছে। এদের আকস্মিক মৃত্যুর জন্য প্রজাতিটির বিলোপ ঘটাতে পারে এবং বাংলাদেশে এটি বিরল হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে বাওবাব সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে শাখা কলমের সাহায্যে নতুন গাছ উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন উদ্যানে রোপণ করা প্রয়োজন। [২]
আলোকচিত্রের ইতিহাস: দক্ষিণ আফ্রিকার সুনল্যান্ড বাওবাব গাছের এই ছবিটি তুলেছেন JTeessen ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে।
তথ্যসূত্র:
১. দ্বিজেন শর্মা লেখক; বাংলা একাডেমী ; ফুলগুলি যেন কথা; মে ১৯৮৮; পৃষ্ঠা- ৩২, আইএসবিএন ৯৮৪-০৭-৪৪১২-৭
২. এম এ হাসান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩১-৩২। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।