গোলাপী শিরিষ উষ্ণ-নাতিশীতোষ্ণ দেশের শোভাবর্ধক ও ভেষজ বৃক্ষ

বৃক্ষ

গোলাপী শিরিষ

বৈজ্ঞানিক নাম: Albizia julibrissin Durazz, Mag. Tosc. 3 (4): 13 (1772). সমনাম: Acacia julibrissin (Durazz) Willd. (1806), Albizia 1molis (Wall.) Boiy. (1838). ইংরেজি নাম: Pink Siris, Mimosa, Silk Tree. স্থানীয় নাম: গোলাপী শিরিষ, কালকোরা।

ভূমিকা: গোলাপী শিরিষ (বৈজ্ঞানিক নাম: Albizia julibrissin) উষ্ণ-নাতিশীতোষ্ণ দেশে জন্মে। এটি বাগান ও উদ্যানের শোভাবর্ধনের জন্য লাগানো হয়। এছাড়া গাছটি ভেষজ গুণসম্পন্ন।

গোলাপী শিরিষ-এর বর্ণনা:

মাঝারি আকারের পত্রঝরা বৃক্ষ। গাছটি ১৫ মিটার উঁচু ও ছড়ানো চূড়াবিশিষ্ট। বাকল রুক্ষ, গাঢ় বাদামী অথবা প্রায় কালো, ফাটলবিশিষ্ট, ক্ষুদ্র ও অনিয়তাকার কাষ্ঠল খন্ডে উঠে যায়। কচি বিটপ এবং পুষ্পমঞ্জরী হলুদাভ রোমে আবৃত।

পাতা দ্বি-পক্ষল যৌগিক, একান্তর, অণুপর্ণী, উপপত্র ৫-৭ মিমি লম্বা, রৈখিক, উপকাস্তে আকৃতিতে তুরপুন আকার, রোমশ, পত্রাক্ষ ১০-২৫ সেমি লম্বা, নিম্নপ্রান্ত থেকে ২ সেমি উপরে ১টি সুস্পষ্ট গ্রন্থি বর্তমান, কখনও কখনও সর্বদূরবর্তী পক্ষ জোড়ার মাঝখানে আরো ১টি বা ২টি গ্রন্থি বর্তমান, পক্ষ ৪-৮ জোড়া, কখনও কখনও ১৫ জোড়া পর্যন্ত হতে পারে, ৫-১২ সেমি লম্বা, পত্রক ১০-২০ জোড়া, ১২-১৫ x ৩-৭ মিমি, কাস্তে আকৃতির দীর্ঘায়ত, তির্যক, প্রায় অবৃন্তক, উভয়পৃষ্ঠ রোমশ, তীক্ষ্ণ, মধ্যশিরা অগ্রভাগের কাছাকাছি পর্যন্ত পৌছে, প্রশস্ত অংশ খাতাগ্র, এবং ২-শিরাল, উপরের পৃষ্ঠ গাঢ় সবুজ এবং নিম্নপৃষ্ঠ ফ্যাকাশে সবুজ।

পুষ্পমঞ্জরী মঞ্জরীদন্ডক শির, প্রান্তীয় বা সর্বনিম্ন পাতার কক্ষে জন্মায়, একক অথবা ২-৩টি মঞ্জরীদন্ড একসাথে একটি গুচ্ছে, ৩.৫-৭.০ সেমি লম্বা, প্রতিটি শির ২০-৩৩টি পুষ্পের সমন্বয়ে গঠিত। পুষ্প গোলাপী বর্ণের, সহপত্রী, সুগন্ধিময়, ৫-গুণিতক, মঞ্জরীপত্র ৩-৬ মিমি লম্বা, রৈখিক বা তুরপুন আকার, পুষ্পবৃন্তিকা ১-২ মিমি লম্বা। বৃতি ৩-৪ মিমি লম্বা, নলাকার, দন্তক ৫টি, খর্বাকার, ত্রিকোণাকার, তীক্ষ। দলমন্ডল ৭-৮ মিমি লম্বা, নলাকার, হলুদাভ সবুজ, বাইরের পৃষ্ঠ রোমশ, খন্ডাংশগুলো ২-৩ মিমি লম্বা, দীর্ঘায়তভল্লাকার, তীক্ষ্ণ।

পুংকেশর অসংখ্য, পুংদন্ড ২.৫-৩.২ সেমি লম্বা, সূত্রাকার, উপরের অংশ গোলাপী-পাটল বর্ণের এবং দলনলের সমান লম্বা। ফল পড, ৭.৫-১২ x ১.৫-২.০ সেমি, দীর্ঘায়ত, চেপটা, পরিণত হওয়া পর্যন্ত রোমশ, ফ্যাকাশে বাদামী বা হলুদাভ, বীজ প্রতি পডে ৪-৮টি।

আরো পড়ুন:  স্বর্ণচাঁপা ফুল, ফল, গাছের ছালের নানাবিধ ভেষজ গুণাগুণ

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২৬ (Senn, 1938).

গোলাপী শিরিষ-এর চাষাবাদ ও বংশ বিস্তার:

প্রধানত রাস্তার ধার যেখানে ইহা রাজপথ বীথি ও ছায়াপ্রদানকারী বৃক্ষ হিসেবে লাগানো হয়। ফুল ও ফল ধারণ মে-আগষ্ট। বীজ থেকে নতুন চারা জন্মে। বিস্তৃতি: দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়া, চীন, জাপান, অ্যাবিসিনিয়া এবং গ্রীষ্ম প্রধান থেকে উষ্ণ-নাতিশীতোষ্ণ আফ্রিকা এবং রাশিয়া। বাংলাদেশে ইহা একটি রাজপথ তরু হিসেবে প্রবর্তিত।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

ইহার কাঠ আসবাবপত্র তৈরির জন্য উপযোগী এবং চকচকে ও মসৃণ হয়। ইহা শিরিষ গাছ (Albizia lebbeck) এর অনুরুপ ভেষজ গুণাবলী সম্পন্ন (Caius, 1989).

অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের  ৯ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) গোলাপী শিরিষ প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে গোলাপী শিরিষ সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বনায়ন বৃদ্ধি করা যেতে পারে। 

তথ্যসূত্র:

১. বি এম রিজিয়া খাতুন (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৯ম, পৃষ্ঠা ১৫৯-১৬০। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Famartin

Leave a Comment

error: Content is protected !!