ভূমিকা: গগণ শিরিষ (বৈজ্ঞানিক নাম: Albizia richardiana) আলবিয়িয়া গণের ফেবিয়াসি পরিবারের একটি সপুষ্পক বৃক্ষ। এই প্রজাতি উদ্যান, রাস্তার পাশে, প্রতিষ্ঠানে লাগিয়ে শোভাবর্ধন করে। নৌকা তৈরিতে এই গাছের কাঠ ব্যবহৃত হয়।
গগণ শিরিষ-এর বর্ণনা:
সুদৃশ্য, দ্রুত বর্ধনশীল বৃক্ষ, অপ্রকৃত দ্ব্যগ্রশাখা ও সোজা গুঁড়িবিশিষ্ট, সুদৃশ্য চূড়া গঠন করে। পাতা দ্বি-পক্ষল যৌগিক, অণুপর্ণী, উপপত্র খর্বাকার, আশুপাতী। পত্রাক্ষ ১২ সেমি (প্রায়) লম্বা, উপরের পৃষ্ঠে খাজকাটা, অণুরোমশ, সচরাচর পত্রবৃন্তের গোড়ার কাছাকাছি একটি পেয়ালাকৃতির উপবৃদ্ধি বর্তমান, সবচেয়ে দূরবর্তী পক্ষদ্বয়ের পাদদেশের মাঝখানে ১-৩টি অনুরুপ উপবৃদ্ধি বর্তমান। পক্ষ ৮-১৪ জোড়া, ৪.৫-৭.৫ সেমি লম্বা এবং স্ফীত পত্রধারবিশিষ্ট, উপরের পৃষ্ঠ খাঁজকাটা, কোমল ও সাদা রোমাবৃত।
পত্রক ৬০-১০০ জোড়া, ৬ X ১ মিমি (প্রায়), রৈখিক-কাস্তে আকৃতি, অবৃন্তক, তীক্ষ্ণ, অখন্ড, নিম্নপ্রান্ত অসম, নিচের অংশ। কর্ণসদৃশ, মধ্যশিরা উপরের কিনারার কাছাকাছি, মসৃণ, উপরের পৃষ্ঠ মসৃণ গাঢ় সবৃজ, পত্রকগুলো খুব কাছাকাছি অবস্থিত। শীতের শেষে বৃক্ষটিতে নুতন পাতা গজায় এবং গ্রীষ্মের প্রারম্ভে পাতা ঝরে যায় (Benthall, 1933).
পুষ্পমঞ্জরী কাক্ষিক অথবা প্রান্তীয় যৌগিক মঞ্জরী, পাতা থেকে খর্বাকার। পুষ্প খর্ব মঞ্জরীদন্ডবিশিষ্ট, গোলকবৎ শিমঞ্জরীতে, মঞ্জরীদন্ড ১.০-১.৪ সেমি লম্বা, শির অনেক পুষ্প সমন্বিত। পুষ্প খর্বাকার, সবুজাভ সাদা, অবৃন্তক। বৃতি চুঙ্গি আকৃতির, বাইরের পৃষ্ঠ রোমশ, দন্তক ৫টি, অতি খর্বাকার। দলমন্ডল ঘন্টাকার, খন্ডক ৫টি, দীর্ঘায়ত-ভল্লাকার, তীক্ষ। পুংকেশর ২৫-৩০টি, সূত্রাকার, বহির্গামী, পরাগধাণী ক্ষুদ্রাকার। গর্ভাশয় অবৃন্তক।
ফল পড, ৮-১০ x ২.০-২.৩ সেমি, পাতলা, দৃঢ়, চেপটা এবং চামাটি আকার, খর্বাকার একটি বীকবিশিষ্ট, বিবর্ণ ধূসর-বাদামী, বিদারী। বীজ প্রতি পডে ৮ থেকে ১২টি, আকারে ৬-৮, অগ্রভাগেরদিকে ডিম্বকনাড়ির সংযোগস্থলের কাছাকাছি তীর্যক, ডিম্বকনাড়ি হলুদ ও বীজের সামনে লম্বা।
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
রাস্তার ধার এবং কখনও কখনও শহরের উদ্যান ও বাগান লাগানো হয়। এর ফুল ও ফল ধারণ সময়কাল আগস্ট থেকে ডিসেম্বর মাসে।
বিস্তৃতি: আদি নিবাস মাদাগাস্কার এবং উনিশ শতকে বাংলাদেশে ইহা একটি রাজপথ বীথি হিসেবে প্রবর্তিত হয়েছে।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
ইহা একটি অতি সুপরিচিত বিদেশী উদ্ভিদ এবং পাতার বাহার ও দ্ব্যগ্রশাখাযুক্ত বৈশিষ্টের জন্য রাস্তার পাশে, বাগানে ও নগরোদ্যাণে রাজপথ বীথি হিসেবে লাগানো হয়। ইহার তলায় আংশিক ছায়াযুক্ত স্থানে ঘাস ও অন্যান্য ছোট উদ্ভিদ বেড়ে উঠতে পারে (Benthall, 1933). বাংলাদেশের বরিশাল জেলায় ইহার কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরি হয় (Das and Alam, 2001).
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: বাংলাদেশে ইহা রাস্তার পাশে, নগরোদ্যাণে এবং অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গনের সামনে। রাজপথ বীথি হিসেবে লাগানো হয়।
গগণ শিরিষ-এর অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৯ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) গগণ শিরিষ প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে গগণ শিরিষ সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র ও টীকা:
১. বি এম রিজিয়া খাতুন (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৯ম, পৃষ্ঠা ১৬৬-১৬৭। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
টীকা: শীতের শেষে পাতা ঝরে যায় আর গ্রীষ্মের শুরুতে নুতন পাতা গজায় (Benthall, 1933).
ব্যবহৃত ছবিটি ফেসবুক থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: বেণুবর্ণা অধিকারী
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।