ভূমিকা: কদম বা বুল কদম (বৈজ্ঞানিক নাম: Neolamarckia cadamba, ইংরেজি নাম: burflower tree, laran, Leichhardt pine) রুবিয়াসি পরিবারের এন্থোসেফালুস গণের একটি মধ্যম বা বৃহৎ-আকৃতির সপুষ্পক বৃক্ষ। পত্রমোচী এই উদ্ভিদটি আনুভূতিক ডাল বিশিষ্ট্য। এদের শাখা-প্রশাখা ঘন পাতায় ভরা থাকে। অনেকে প্রতিষ্ঠানে, উদ্যান বা গৃহের বাগানে শোভাবর্ধনের জন্য লাগানো হয়।
বৈজ্ঞানিক নাম: Neolamarckia cadamba. সমনাম: Nauclea cadamba Roxb, Anthocephalus cadamba (Roxb.) Anthocephalus indicus var., glabrescens H.L.Li, Anthocephalus morindifolius, Nauclea megaphylla, Neonauclea megaphylla (S.Moore) S.Moore, Samama cadamba (Roxb.), Sarcocephalus cadamba (Roxb.) Kurz. ইংরেজি নাম: burflower tree, laran, Leichhardt pine . স্থানীয় নাম: কদম, বুল-কদম। এছাড়াও কদমের অন্যান্য নাম হল: বৃত্তপুষ্প, মেঘাগমপ্রিয়, কর্ণপূরক, ভৃঙ্গবল্লভ, মঞ্জুকেশিনী, পুলকি, সর্ষপ, প্রাবৃষ্য, ললনাপ্রিয়, সুরভি, সিন্ধুপুষ্পও। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Eudicots বর্গ: Gentianales পরিবার: Rubiaceae গণ: Neolamarckia প্রজাতি: Neolamarckia cadamba.
কদম গাছের বিবরণ:
কদম মধ্যম বা বৃহৎ-আকৃতির বৃক্ষ। এই গাছ ৪০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। যা আনুভূমিক শাখা-প্রশাখাযুক্ত। পাতা উপপত্রযুক্ত এবং বৃন্তক, উপপত্র সরুভাবে ত্রিকোণাকার। পাতা ২ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়। তবে শীর্ষস্থ কুঁড়ি দ্রুত ঝরে পড়ে এবং পত্রবৃন্ত ৩ সেমি পর্যন্ত লম্বা। পত্রফলক ডিম্বাকার থেকে উপবৃত্তাকার-আয়তাকার বা বিডিম্বাকার। যার দৈর্ঘ্য ১২-২৮ ও প্রস্থ ৫-১৬ সেমি। কদমের শীর্ষ ভোঁতাভাবে দীর্ঘা, গোড়া গোলাকার বা কীলকাকার, চর্মবৎ।
পুষ্পবিন্যাস শীর্ষক, একল হেড, গোলাকার ও আন্ত:পুষ্পীয়। মঞ্জরীপত্র অনুপস্থিত, মঞ্জরীদন্ড ৪ সেমি পর্যন্ত লম্বা যা ৩ পর্বযুক্ত। পুষ্প প্রায় বৃন্তহীন। বৃতি ৩ মিমি পর্যন্ত লম্বা, খন্ডক সরুভাবে ত্রিকোণাকার, ৩ মিমি পর্যন্ত লম্বা। পরাগধানী আয়তাকার, ২ মিমি পর্যন্ত লম্বা, পাদলগ্ন। গর্ভদন্ড ২০ মিমি পর্যন্ত লম্বা, গর্ভমুন্ড মাকু-আকৃতির, গর্ভাশয়ের উপরের অংশ স্পষ্টভাবে ৪-প্রকোষ্ঠী যা ৪টি ফাঁপা শক্ত গঠনবিশিষ্ট। ফলের হেড গোলাকার, ফল ২.৫ মিমি পর্যন্ত লম্বা, অবিদারী, স্থায়ী বৃতি দ্বারা অগ্রস্থ অংশ আবৃত। বীজ খুবই ছোট, পক্ষযুক্ত নয়।[১]
কদম গাছের বংশ বিস্তার ও চাষাবাদ:
শীতকালে পাকা ফল সংগ্রহ করা হয়। গ্রীষ্ম বা বর্ষায় বীজ থেকে চারা তৈরি করা হয়। অতি উর্বর মাটিতে খুব দ্রুত চারা বাড়ে। প্রথম বছরে দুই মিটারের বেশি বাড়তে পারে। পাঁচ বছর বয়সের গাছে ফুল আসে।
বয়স্ক কদম গাছ বড় বড় সবুজ পাতায় গোল হয়ে থাকে। বর্ষায় হলুদাভ সাদা ছোট ফুলে গাছ ভরে যায়। পুরাতন বনভূমি এবং সমভূমিতে সাধারণত আবাদ করা হয়। তবে নরম, উর্বর মাটি গাছটির জন্য উপযুক্ত।[২] ফুল ও ফল ধারণ জুলাই থেকে নভেম্বর মাস।
কদমের বিস্তৃতি:
শ্রীলংকা, নেপাল, ভারত, মায়ানমার, মালয়েশিয়া এবং নিউ গিনি। বাংলাদেশের সর্বত্র বিস্তৃত এই গাছ বিস্তৃত। বিভিন্ন শিক্ষা ও সেবা প্রতিষ্ঠানে এই গাছ লাগানো হয়। কথিত আছে, কদম গাছ মঙ্গলের বয়ে আনে। তাই গ্রাম অঞ্চলে কদমের দেখা মেলে প্রচুর।
অর্থনৈতিক ব্যবহার: কদম গাছ থেকে প্রশস্ত তক্তা হয়। এছাড়া কাঠের পাটাতন এবং চা-বাক্স তৈরীতে ব্যবহৃত কিন্তু টেকসই নয় (Heinig, 1925).
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: বাকল জ্বরের ঔষধ এবং টনিক হিসেবে ব্যবহৃত। পাতার সিদ্ধ কৃাথ মুখের আলসার এবং বিভিন্ন রোগে কুলকুচা করা হয় (Kirtikar et al., 1935).
আরো পড়ুন: কদমের অনেকগুলো ঔষধি ব্যবহার
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১০ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) কদম প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে কদম সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।[১]
তথ্যসূত্র:
১. এম আতিকুর রহমান এবং এস সি দাস (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১১৫-১১৬। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
২. সুবিমল চন্দ্র দে বিজ্ঞানভিত্তিক পুষ্পচর্চা প্রথম প্রকাশ জানুয়ারি ১৯৯৩ কলকাতা, দে’জ পাবলিশিং, পৃষ্ঠা ৪৫। আইএসবিএন 81-7079-275-4
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।