বৈজ্ঞানিক নাম: Aquilaria agallocha Roxb., Fl. Ind. 2: 422 (1880). ইংরেজি নাম: Agar. স্থানীয় নাম: আগর।
ভূমিকা: আগর (বৈজ্ঞানিক নাম: Aquilaria agallocha, ইংরেজি নাম: Agar) হচ্ছে থাইমেলাসিয়াস পরিবারের অন্তর্ভুক্ত চিরসবুজ প্রজাতি। এই গাছ পাহাড়ি অঞ্চলে জন্মে ও নানা ভেষজ গুণে ভরা।
অন্যান্য নাম: এর কয়েকটি পর্যায়িক নাম রয়েছে- আগর, অগুরুসার, স্বাদু, সুধুম্যো, গন্ধধূমজ, ক্রিমিজ। বিভিন্ন ভাষায় এর বিভিন্ন নাম আছে: সংস্কৃতে- অগুরু, হিন্দিতে- অগর; তামিল- আগলিচল; আরবীতে- উদ; ইউনানীতে- উদগরকী, উদহিন্দি, আগর।
আগর-এর বর্ণনা:
বৃহৎ চিরসবুজ বৃক্ষ। উচ্চতায় ৩০ মিটার পর্যন্ত লম্বা ও খাড়া। গুড়িবিশিষ্ট, বাকল সাদাভ, কচি অংশ রেশমের ন্যায়, লোমযুক্ত। পত্র একান্তর, প্রায় ১০ x ২.৫ সেমি, পত্রবৃন্তক ২ মিমি লম্বা, উপবৃত্তাকার, আয়তাকার-বল্লমাকার, পুচ্ছের ন্যায়-দীর্ঘা, মসৃণ, পার্শ্বীয় শিরা ক্রমে ফ্যাকাশে। পুষ্পবিন্যাস প্রান্তীয়, আম্বেলেট সাইম। পুষ্প পুষ্পবৃন্তি কাযুক্ত, পুষ্পপুট সাদা, ঘন্টাকার, খন্ডক ৫টি, গোলাকার, ছড়ানো, ভিতরের দিক ঘনভাবে অতিরোমশ, গোড়ায় সংযুক্ত।
পুংকেশর ১০টি। গর্ভাশয় অধিগর্ভ, ২কোষবিশিষ্ট, অতিরোমশ, গর্ভমুন্ড মুন্ডাকার। ক্যাপসিউল ডিম্বাকার, ৪ সেমি পর্যন্ত লম্বা, ঘনভাবে ঘন ক্ষুদ্র কোমল। রোমাবৃত, দীর্ঘায়িত বাদামী বীজ প্রথমে বের হয়ে আসে। এবং আঠালো ডিম্বক নাড়ির সাথে একদিন অথবা দুই দিনের জন্য ঝুলে থাকে এবং তারপর উদ্ভিদের সাথে তখনও সংযুক্ত থেকে ঝরে পড়ে।
আরো পড়ুন: আগর বা অগুরু গাছের ভেষজ গুণাগুণ ও বিবিধ ব্যবহার
চাষাবাদ: সাধারণত ঘন অর্ধ-চিরসবুজ বনের বৃক্ষ। এই গাছের বংশ বিস্তার হয় বীজ থেকে। ফুল ও ফল ধারণ মে থেকে সেপ্টেম্বর। জুন মাসে ফুল এবং আগস্ট মাসে ফল হয়।
বিস্তৃতি: ভারতের উত্তর পূর্ব পাহাড়ি এলাকা। বাংলাদেশে উদ্ভিদটি প্রাকৃতিকভাবে মৌলভীবাজার বনে জন্মে অর্থাৎ সিলেট এলাকায় জন্মে। সিলেট এলাকার বন বিভাগ মাঝে মাঝে চাষ করে থাকে।
আগর-এর অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
যখন ছত্রাকের রোগ সংক্রমন দেখা দেয় তখন কাঠ অলিও-রেজিনাস উপাদান দ্বারা পূর্ণ হয়। তারপর বৃদ্ধিপ্রাপ্ত এলাকায় বাষ্প পাতন দ্বারা প্রাপ্ত নির্যাস ধূপের (এগার) জন্য ব্যবহার করা হয়। জাতিতাত্বিক ব্যবহার: ধূপ এবং পোকামাকড় বিতারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৯ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) আগর প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বনহীনের কারণে প্রাকৃতিক আবাস নিষ্পেষিত হচ্ছে এবং বাংলাদেশে এটি আশংকা মুক্ত (le) হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে আগর মৌলভীবাজারের বন বিভাগ এবং চা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত অস্তিত্বপূর্ণ এলাকায় আবাদের অগ্রসর ঘটাতে হবে। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. ড. সামসুদ্দিন আহমদ: ওষুধি উদ্ভিদ (পরিচিতি, উপযোগিতা ও ব্যবহার), দিব্যপ্রকাশ, বাংলাবাজার, ঢাকা, জানুয়ারি ২০১২, পৃষ্ঠা, ১৪৫-১৪৭।
২. এম কে পাশা (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৮৪-৩৮৫। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Vinayaraj
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।