লিচু বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতে চাষ করা হয়। বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতের লিচু জন্মে। পশ্চিম বাংলা, বিহার, উত্তর প্রদেশের স্থানবিশেষে উৎকৃষ্ট মানের লিচু প্রচুর পরিমাণে ফললেও দক্ষিণ ভারতে এর চাষ তেমন একটা হয় না। অথচ এই গাছটি নিম্নভূমির প্রায় সর্বত্র এবং শীতপ্রধান অঞ্চলের বহু অঞ্চলে চাষের উপযোগী।
ছায়াদার গাছ হিসেবেও লাগানো যেতে পারে, এর দ্বারা জনসাধারণ দু’ভাবে লাভান্বিত হতে পারবেন। লিচুর গাছে প্রচুর পরিমাণে ফুল আসে, যেমনটা আম গাছে দেখা যায়। ঐ সময় মধুমক্ষিকার চাক লিচু বাগানের আশেপাশে বসিয়ে অনেকে ব্যক্তিগতভাবে, আবার কোন কোন সংস্থাও মধু সংগ্রহ ক’রে থাকে। ভারতে লিচুর চাষ প্রথমে বাংলার বিভিন্ন স্থানে আরম্ভ হয়, তখন অবশ্য অবিভক্ত বাংলা, তারপর ভারতের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে।
যে লিচুতে বীজ ছোট, সেটিকে ভাল জাতের লিচু বলা হয়। খাদ্যাংশটি সুমিষ্ট ও সুস্বাদু। বীজ থেকে গাছ হলেও তাতে ফল ধরতে দীর্ঘ সময় লাগে এবং ফলনও আশানুরূপ হয় না। সেজন্য কলম পদ্ধতিতে চারা তৈরী করেই গাছ লাগানো হয়ে থাকে। লিচুকে অধিকাংশ স্থানে লিচি কিংবা লিচু বলা হয়। লিচুর খাদ্যাংশকে জেলির মত কিংবা সরবতের (Syrup) মত করে সংরক্ষণ করা যায়। এই যে লিচু আমরা খাই এটিই চীন দেশ থেকে আগত এবং এর বোটানিক্যাল নাম Litchi chinensis Sonn.
লিচু গুণ-এর বিবরণ
ফলের শাঁস বা খাদ্যাংশটি সুগন্ধযুক্ত, স্বাদে মিষ্ট, রসাল, সুপাচ্য, পুষ্টিকর, বলকারক, হৃদয় ও মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধক, পিপাসানাশক এবং যকৃতের ক্রিয়াবর্ধক। এটি বিশ্লেষণ ক’রে দেখা গেছে যে, এতে প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বহাইড্রেটস, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, থায়ামিন, নিকোটিনিক এসিড, রিবোফ্লাভিন, এসকররিক এসিড প্রভৃতি বিদ্যমান।
ঔষধি গুণ:
ফল হৃৎপিন্ড, মস্তিস্ক এবং যকৃতের টনিক। সবুজ ফল শিশুদের গুটি বসন্তের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। মূল, বাকল এবং পুষ্প সিদ্ধ ক্বাথ গলার সংক্রমনে কুলকুচি করায় ব্যবহৃত হয়। বীজ বিভিন্ন স্নায়বিক অসুবিধায় ব্যবহৃত, আরচাইটিসেও। বীজ পাউডার বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সমস্যায় ব্যবহৃত হয়। জাতিতাত্বিক ব্যবহার হিসেবে দেখা যায়, এদের সবুজ পাতার লেই প্রাণীয় কামড়ের স্থানে প্রয়োগ করা হয়।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্র:
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ১৩৯-১৪০।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।