ভূমিকা: দইগোটা বা বিলাতী হলদি বা লটকন (বৈজ্ঞানিক নাম: Bixa orellana ইংরেজি: Annatto, Arnotto, Lipstict Plant) হচ্ছে বিক্সাসি পরিবারের বিক্সা গণের উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলের উদ্ভিদ। এই গাছের বাণিজ্যিক গুরুত্ব অনেক।
বৈজ্ঞানিক নাম: Bixa orellana L., Sp. Pl.: 512 (1753). সমনাম: Bixa katagensis Delpierre (1970). ইংরেজি নাম: Annatto, Arnotto, Lipstict Plant. স্থানীয় নাম: দইগোটা, বিলাতী হলদি, লটকন।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae – Plants অবিন্যাসিত: Angiosperms অবিন্যাসিত: Eudicots অবিন্যাসিত: Rosids বর্গ: Malvales পরিবার: Bixaceae গণ: Bixa প্রজাতি: Bixa orellana.
দইগোটা গাছের বর্ণনা
দইগোটা বৃহৎ গুল্ম বা খাটো বৃক্ষ আকৃতির। তরুণ গাছে পুষ্পিত বিটপে গাঢ় বাদামী গ্রন্থিল রোম বিদ্যান। পাতার দৈর্ঘ্য ১৫ সেমি ও প্রস্থ ১০ সেমি। বৃন্ত প্রায় ৬ সেমি লম্বা। পুষ্পবিন্যাস শীর্ষীয় প্যানিকেল। বৃতি ৫ টি ও দৈর্ঘ্য ১.০ ও প্রস্থ ০.৭ সেমি। মূলীয় অংশ সাদা দাগ যুক্ত, উপরের অংশ গ্রন্থিল রোমশ, পর্ণমোচী।
ফুলের পাপড়ি ৫ টি। ফুলের রঙ সাদা ও আকার ২.০ x ১.২ সেমি। পুংকেশর অসংখ্য ১.৫ সেমি লম্বা, মুক্ত, পরাগধানী হলুদ। গর্ভাশয় প্রায় ২ সেমি লম্বা, গর্ভদন্ড সরু, গর্ভমুন্ড খাঁজযুক্ত। ক্যাপসিউল প্রায় ৩.০ x ৩.৫ সেমি, কোষ্ঠীবিদারী, ২-কপাটিকা যুক্ত, কন্টক প্রায় ০.৭ সেমি লম্বা, গাঢ় বাদামী । বীজ প্রায় ৩০-৫০ টি, ০.৫ x ০.৪ সেমি, ত্রিকোণাকার, মাঝখানে চাপা। বেগুনি লাল বীজোপাঙ্গ দ্বারা চতুর্দিক পরিবেষ্টিত।
চাষাবাদ ও বংশ বিস্তার: ঢাকায় রমনা পার্ক, বলধা গার্ডেন, বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ অনেকে ব্যক্তিগত সংগ্রহেও লাগিয়ে থাকে। বীজ থেকে চারা করা হয়। ফুল ও ফল ধারণ অক্টোবর থেকে জুন মাসে।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ১৪, ১৬ (Fedorov, 1969).
বিস্তৃতি: দইগোটার আদিনিবাস আমেরিকার উষ্ণাঞ্চলে। তবে উষ্ণমন্ডলীয় দেশসমূহে এই গাছের বিস্তার বেশি। বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: বীজোপাঙ্গ থেকে স্বাদ বিহীন উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের রং উৎপাদিত হয় যার নাম অ্যানাটো ডাই। এই রং দ্বারা মাখন, মারজারিন, দই, পনির এবং অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী রং করা হয়। এছাড়া রেশম, সুতি বস্ত্র, রঞ্জক পদার্থ, বার্ণিশ, সাবান ইত্যাদি রংয়ের কাজেও বীজোপাঙ্গ ব্যবহৃত হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ চলছে।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: বীজোপাঙ্গ খাদ্য সামগ্রী হলুদ রং করার জন্য ব্যবহার প্রচলিত।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) দইগোটা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে দইগোটা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে অঞ্চল ভিত্তিক সংরক্ষণ ব্যবস্থার পাশাপাশি অধিক বনায়নের সুপারিশ ও আবাসস্থান নিশ্চিত করা।[১]
আলোকচিত্রের ইতিহাস: দইগোটার ফল পাতা ও ফুলের ছবিটি তুলেছেন Joan Simon বার্সেলোনা থেকে ৯ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে।
তথ্যসূত্র:
১. মাহবুবা খানম (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩০-৩১। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।