চা গাছ পৃথিবীর জনপ্রিয় পানীয়র চাহিদা পূরণ করে

চা

বৈজ্ঞানিক নাম: Camellia sinensis (L.) 0. Kuntze, Acta Horti Petrop. 10: 195 (1887). সমনাম: Thea sinensis L. (1753), Camellia thea Link (1822), Camellia theifera Griff. (1854). ইংরেজি নাম: Tea Plant. স্থানীয় নাম: চা, চা গাছ। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Angiosperms অবিন্যাসিত: Eudicots অবিন্যাসিত: Rosids বর্গ: Ericales পরিবার: Theaceae গণ: Camellia প্রজাতির নাম: Camellia sinensis

ভূমিকা: চা বা চা গাছ বা চিয়া (বৈজ্ঞানিক নাম: Camellia sinensis, ইংরেজি নাম: Tea Plant) হচ্ছে সপুষ্পক একটি গুল্ম আকারের সবুজ উদ্ভিদ। এটির পাতা থেকে উৎপন্ন চাপাতি জনপ্রিয় পানীয় হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

চা গাছ-এর বর্ণনা:

গুল্ম অথবা ছোট বৃক্ষ, কচি কান্ড এবং শাখা মসৃণ। পত্র একান্তর, ৪-২৫ x ১.৫-৬.০ সেমি, বিডিম্বাকার-বল্লমাকার, দন্তকযুক্ত, শীর্ষ স্থূলাগ্র হতে সামান্য তীক্ষ্মাগ্র দীর্ঘাগ্র, গোড়া কীলকাকার, ঝিল্লিময় হতে চর্মবৎ, উপরের তল মসৃণ, নিবতল লোমযুক্ত, পত্রবৃন্তক খাটো, ৬-১০ মিমি লম্বা।

চায়ের পুষ্প সাদা, অক্ষীয়, একক অথবা ২-৬ গুচ্ছাকারে বিন্যস্ত, সুগন্ধিযুক্ত, মঞ্জরীপত্রিকা ২-৩টি, শীঘ্রমোচী। বৃত্যংশ ৫-৭টি, অসমান, স্থায়ী। পাপড়ি ৫-৭টি, সাদা, ডিম্বাকার, প্রশস্তভাবে ডিম্বাকার হতে বর্তুলাকার, অবতল। পুংকেশর ১০০-৩০০টি, প্রতিটি ৮-১০ মিমি লম্বা, বাইরেরটি গোড়ায় সংযুক্ত এবং পাপড়ির গোড়ার দিকে সংযুক্ত, মসৃণ, উপরেরটি মুক্ত, পরাগধানী ২-কোষবিশিষ্ট, হলুদ। এদের গর্ভাশয় অধিগর্ভ, ৩-৫ প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট, ঘনভাবে লোমযুক্ত, প্রতি প্রকোষ্ঠে ডিম্বক ৪-৬, গর্ভদন্ড ৫-৭ মিমি লম্বা, মসৃণ অথবা কদাচিৎ হালকা লোমযুক্ত।

ফল একটি উপগোলাকার ক্যাপসিউল, ৩-বীজবিশিষ্ট। বীজ এক কিনারায় উপগোলাকার অথবা সমতল, মসৃণ, বাদামী অথবা লালচে-বাদামী। চায়ের ফুল ও ফল ধারণ ঘটে জুন থেকে জানুয়ারি মাসে।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ৩০, ৬০ (Kumar and Subramaniam, 1986)। আবাসস্থল ও চাষাবাদ: রৌদ্রজ্জ্বল অথবা অংশত ছায়াযুক্ত, সুনিষ্কাশিত এসিড (pH ৪.৫-৬.০) মাটি যা জৈব পদার্থে সমৃদ্ধ। শাখা কলম এবং বীজ দ্বারা চারা করা হয়।

আরো পড়ুন:  আখ বা ইক্ষু নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলের জনপ্রিয় ও অর্থকরী ফসল

চা গাছ-এর বিস্তৃতি:

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে স্থানীয়, চীন হতে ভারত এবং শ্রীলঙ্কা। চা উদ্ভিদ ব্যাপকভাবে গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং অর্ধগ্রীষ্মমন্ডলীয় এলাকায় আবাদ করা হয়। বাংলাদেশে ইহা সিলেট, মৌলভী বাজার, চট্টগ্রাম এবং পঞ্চগড় জেলা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে পাওয়া যায়।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

চা একটি উদ্দীপিত গরম পানীয় যা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। চা হজম সংক্রান্ত গঠনতন্ত্রের রোগ সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। চায়ের পাতা অপূর্ব CNS উদ্দীপক, মূত্রবর্ধক এবং রক্তরোধক। তারা অণুজীবের বিপরীতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল কার্যক্রম প্রদর্শন করে যা আন্ত্রিক সমস্যার কারণ ঘটায়। চায়ের পাতা, কান্ড এবং পল্লবের লায়োফিলাইজড জলীয় দ্রবণ কসমেটিক এবং তৃক-ফামাসিউটিক্যাল সৌন্দর্য সামগ্রীতে ব্যবহৃত হয়। ফামাসিউটিক্যাল চা নির্যাস এবং অন্যান্য উপকরণ বহন করে যা টিউমার, ডায়াবেটিক এবং অ্যানথ্রাইটিসে ব্যবহৃত হয়।

চায়ের বহুবিধ উপকারিতা

চায়ের ক্যাফেইন ব্যাপকভাবে আধুনিক ঔষধে মাইগ্রেইন, আধ কপালে মাথা ধরা, স্নায়ুশূল এবং অন্যান্য নার্ভযুক্ত অনুভূতিতে ব্যবহৃত হয়। চায়ের পাতা হতে নির্যাসিত থিয়েফ্ল্যাভিন একটি কার্যকরী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বাহক। চায়ের পাতায় স্যাপোনিন হাইপারটেনসিভ ইঁদুরের অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ প্রভাব তৈরী করে। সবুজ চা ক্যান্সার প্রতিরােধে কার্যকরী (Ghani, 2003)।

জাতিতাত্বিক ব্যবহার:

চীন, জাপান, ভিয়েতনাম এবং কিছু অন্যান্য দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ান দেশের লোকেরা সবুজ চা পান। করে। মায়ানমারে এটি আচার জাতীয় খাদ্য হিসেবে ভক্ষণ করে যাকে লেপেট বলে (van Der Vossen and Wessel, 200O)। বাংলাদেশে চা বাগানের কর্মীরা নিমক চা গ্রহণ করে (চার সাথে লবন চিনির পরিবর্তে)।

অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১০ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) চা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে চা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে এটি সংরক্ষণের তেমন প্রযোজন নেই।[১]

তথ্যসূত্র:

১.  এম. আহসান হাবীব (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ প্রাণী জ্ঞানকোষ ১০ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৭৮-৩৭৯। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

আরো পড়ুন:  চা পানের বহুবিধ উপকারিতা ও অপকারিতা

Leave a Comment

error: Content is protected !!