শীল বাটনা বাংলাদেশের বিপন্ন বৃক্ষ

বৈজ্ঞানিক নাম: Castanopsis indica (Roxb. ex Lindl.) A.DC., 1863 সমনাম: Castanea indica Roxburgh ex Lindl.; Castanopsis macrostachya Hu; Castanopsis sinensis A. Chev.; Castanopsis subacuminata Hayata; Quercus acutissima (Endl.) A. Camus; Quercus dubia Lindl. ex Wall.; Quercus indica Drake; Quercus prinodes Voigt; Quercus prinoides Willd.; Quercus roxburghii Endl.; Quercus serrata Roxb.; বাংলা ও স্থানীয় নাম: শীল বাটনা (চট্টগ্রাম), হিনগুড়ি, গোল সিনগ্রা (সিলেট), নিকারি, ছাক্কুম-ছহক্রান বা ছারাং (গারো) ইত্যাদি।ইংরেজি নাম: Indian Chestnut.

জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: জগৎ/রাজ্য: Plantae – Plants,  শ্রেণী: Eudicots, উপশ্রেণি: Rosids, বর্গ:  Fagales, পরিবার: Fagaceae, গণ: Castanopsis, প্রজাতি: Castanopsis indica.

বিবরণ: শীল বাটনা ছোট থেকে মাঝারি আকৃতির এবং ডালপালা বিশিষ্ট চিরসবুজ বৃক্ষ,উচ্চতায় ২০-২৫ মিটার এবং বুক সমান (১.৩ মিটার) উচ্চতায় গুঁড়ি কান্ডের বেড় প্রায় ১.০০ মিটার পর্যন্ত হয়। এদের গুঁড়ি কাণ্ড সরল, সোজা এবং গোলাকার। বাকল রুপালি ধূসর বর্ণের এবংবাকলের উপরিভাগ লম্বালম্বি ফাটলযুক্ত। এদের পাতা সরল, আয়তাকার,লম্বায় ১২-২০ সেন্টিমিটার, কিনারা করাতের ন্যায় খাঁজ বা দাঁত কাটা এবং আগা সূচালো। মার্চ-এপ্রিল মাসে স্পাইক ধরনের পুষ্পবিন্যাসে ফুল ধরে। একই গাছে পুংফুলের স্পাইক ও স্ত্রীফুলের স্পাইক বিন্যস্ত থাকে। ফল নাট ধরনের,২.৫-৪.০ সেন্টিমিটার ব্যাসযুক্ত,১.৩ সেন্টিমিটার লম্বা কাঁটায় আবৃত এবং ফলগুলো গুচ্ছাকারে বিন্যস্ত। জুলাই-আগস্ট মাসে পরিপক্ক ফল কমলা-বাদামি বর্ণের হয়। প্রতি ফলে ১টি করে বীজ থাকে। প্রতি কেজিতে বীজের সংখ্যা ১,০০০-১,৩০০টি। সাধারণ তাপমাত্রায় বীজ বায়ুরোধক পাত্রে ২০-২৫ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখা যায়।

প্রজনন ও বংশবিস্তার: সাধারণত বনাঞ্চলে বীজ থেকে শীল বাটনারচারা জন্মায় ও বংশবিস্তার হয়। নার্সারিতেসংগৃহীত বীজ পলিব্যাগে বপন করে চারা উৎপাদন করা হয়। চারা গজানো বা বীজের অঙ্কুরোদগমের হার শতকরা প্রায় ৪০-৫০ ভাগ। চারা গজাতে সময় লাগে ৯০-১২০ দিন। শীল বাটনা গাছ কপিচিং (coppicing) ক্ষমতা সম্পন্ন। অর্থাৎ কর্তণকৃত গাছের গোড়া বা মুথা থেকে প্রাকৃতিকভাবে একাধিক চারা বা কুশি জন্মায়এবং পর্যায়ক্রমে বড় গাছে পরিণত হয়।

আরো পড়ুন:  দিয়েন্দ লাকরাও বা কলাপাতা চিরহরিৎ বনের বৃক্ষ

ভৌগোলিক বিস্তৃতি: বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস ও দক্ষিণ চীন।

বাংলাদেশে বিস্তৃতি ও প্রাপ্তিস্থান: চট্টগ্রামের করেরহাট, আন্দারমানিক ও হাজারিখিল, পার্বত্য চট্টগ্রামের কাসালং পাহাড়ি চির সবুজ বনাঞ্চলে এবং ময়মনসিংহের গজনি পাতাঝরা শাল বনে বিক্ষিপ্তভাবে জন্মানো শীল বাটনার গাছ কদাচিৎ দেখা যায়।

গুরুত্ব ও ব্যবহার: কাঠ হালকা ধূসর-বাদামি বর্ণ,শক্ত, মজবুত, টেকসই এবং ঘুন পোকা ও কীটপতঙ্গ প্রতিরোধী। গৃহ নির্মাণ, আসবাবপত্র এবং কুড়ালের হাতল তৈরিতে কাঠ ব্যবহৃত হয়। বাকলে প্রচুর ট্যানিন রয়েছে। ধুমপানের “বিড়ি” বানাতে পাতা ব্যবহৃত হয়। বীজের শাঁস ভক্ষণীয়। নেপালে ফল খেয়ে থাকে। পাতা গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

সংরক্ষণের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ: আরণ্যক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এর সহযোগিতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ২০১২ ও ২০১৩ সালে কালা বাটনার চারা লাগিয়ে সংরক্ষণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!