ভূমিকা: কার্পূর (বৈজ্ঞানিক নাম: Cinnamomum camphora) সমতল ভূমিতে চাষকৃত ও শোভাবর্ধক বৃক্ষ। এছাড়াও বাড়ি, উদ্যান ও বাগানের শোভাবর্ধনের জন্য লাগানো হয়।
কার্পূর-এর বর্ণনা:
ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি ধরণের বৃক্ষ, চূড়া ছড়ানো, উপশাখা সরু, মসৃণ, বাকল গাঢ় ধূসর। পত্র একান্তর বা সর্পিলাকারে সজ্জিত, মসূন, কাগজতুল্য থেকে প্রায় চমবৎ, ডিম্বাকার-উপবৃত্তাকার থেকে উপবৃত্তাকার অথবা প্রায় ডিম্বাকার-উপবৃত্তাকার, ৬-১০ X ৩-৫ সেমি, গোড়া সূক্ষ্মাগ্র অথবা ক্রমশ সরু-কীলকাকার, উভয় পৃষ্ঠ সূক্ষ্মভাবে জালিকাকার অথবা উপরের পৃষ্ঠ মসৃণ, প্রধান শিরা সরু, পত্রবৃন্ত ১.২-৩.৮ সেমি লম্বা, সরু।
পুষ্পমঞ্জরী প্যানিকেল, অক্ষীয়, সরু, মসৃণ, অনেক পুষ্পবিশিষ্ট, ১০ সেমি পর্যন্ত লম্বা, কিছু খাটো শাখাযুক্ত, পুষ্পবৃন্তিকা ১-২ মিমি লম্বা, উল্টা মোচাকার। পুষ্পপুটাংশ ডিম্বাকার, সূক্ষ্মাগ্র, স্ফীত, প্রায় ২ মিমি লম্বা।
পুংকেশর প্রায় ১.৫ মিমি লম্বা, পরাগধানী চওড়া, পুংদণ্ড দৈর্ঘ্যে পরাগধানীর সমান, কোমল দীর্ঘ রোমযুক্ত, ভেতরের পরাগধানী কর্তিতা, উপরের কোষ ক্ষুদ্রতর, অনুদৈর্ঘ্যে ও পার্শ্বীয়ভাবে বিদারী, গ্রন্থি বৃহৎ, পুংদণ্ডের গোড়ার দিকে সংযুক্ত, বন্ধ্যা পুংকেশর ক্ষুদ্র, দণ্ডযুক্ত।
গর্ভদণ্ড দৈর্ঘ্যে গর্ভাশয়ের সমান, গর্ভমুণ্ড ছত্রবদ্ধ, ত্রিতলীয়। ফল গোলকাকার, সামান্য রসালো, ৫-১০ মিমি। চওড়া, অগভীর, পাতলা টুপির উপরে অবস্থিত, ৩-৫ মিমি চওড়া, ১-২ মিমি গভীর, গোড়া রসালো, উল্টা মোচাকার, সাধারণতঃ উল্টা মোচাকার বৃন্তিকা থেকে পৃথক করা যায় না।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ৩৪ (Kumar and Subramaniam, 1986)
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
সমতল ভূমি যেখানে ইহা আবাদ করা হয়। ফুল ও ফল ধারণ সময়কাল মার্চ-জুলাই। বংশ বিস্তার হয় বীজ ও কলমের মাধ্যমে।
বিস্তৃতি:
চীন ও জাপানে দেশীয়, সমগ্র বিশ্বে ব্যাপকভাবে আবাদ করা হয়। বাংলাদেশে ইহা বাগানে ও অন্যান্য স্থানে আবাদ করা হয়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
উদ্ভিদটির প্রতিটি অংশই উপকারী, ইহা স্নায়বিক উত্তেজনা ও মানসিক অস্থিরতা প্রশমিত করে, বেদনা উপশমকারী এন্টিস্পাজমোডিক, ঘর্ম উদ্রেককারী ও কৃমিনাশক (Kirthikar et al., 1935)।
উদ্ভিদ আভ্যন্তরীণভাবে ঠাত প্রয়োগ করা হয়। ইহা কীটনাশক বস্তু তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। (Chopra et al., 1956)। শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবেও ইহা ব্যবহৃত হয়।
কার্পূর-এর অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৮ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) কার্পূর প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, শীঘ্র সংকটের কোন কারণ নেই। বাংলাদেশে এটি আশংকা মুক্ত হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশে কার্পূর সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। তবে প্রস্তাব করা হয়েছে ঔষধি গুণাগুণ ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য এর চাষাবাদ বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
তথ্যসূত্র:
১. এম কে মিয়া (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৮ম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৪১-৩৪২। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Krzysztof Golik
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।