ভূমিকা: তেজপাতা (বৈজ্ঞানিক নাম: Cinnamomum tamala) গাছ এশিয়ার উষ্ণমন্ডলীয় ও শীতপ্রধান দেশে জন্মে। এছাড়া অনেকে বাড়ির উঠানে লাগিয়ে থাকে। এগাছের অনেক ভেষজ গুণ আছে; গাছটি আমাদের দৈনদিন জীবনের সাথে মিশে আছে।
তেজপাতা গাছ- এর বর্ণনা:
মাঝারি আকৃতির চিরহরিৎ বৃক্ষ, ১৫ মিটার পর্যন্ত উচু, বাকল গাঢ় বাদামি বা কালচে, সামান্য কর্কশ। পত্র প্রতিমুখ, প্রায় প্রতিমুখ বা একান্তর, ১০-১৫ x ২.৫-৬.২ সেমি, ডিম্বাকার-আয়তাকার বা উপবৃত্তাকার থেকে আয়তাকার-বল্লমাকার, শীর্ষ দীর্ঘাগ্র বা সূক্ষ্মা, গোড়া সংকীর্ণ, অর্ধ-ত্রিশিরাল, কীলকাকার, নিম্নপৃষ্ঠ চকচকে, মসৃণ, কচি অবস্থায় ফ্যাকাশে লাল, পত্রবৃন্ত ০.৭-১.২ সেমি লম্বা।
পুষ্পমঞ্জরী প্যানিকেল, ৮-১৫ সেমি লম্বা, শাখা ও পুষ্পবৃন্তিকা ধূসর রোমশ, পুষ্পবৃন্তিকা ০.৩-০.৫ সেমি লম্বা। পুষ্প আড়াআড়িভাবে ০.৫-০.৮ সেমি, বাইরে ধূসর ও ভেতরে হলুদ। পুষ্পপুট রেশমি, খন্ড প্রায় সমান, ০.৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা, আয়তাকার বা উপবৃত্তাকার-আয়তাকার, উভয় পৃষ্ঠ রেশমি রোমশ। পুংকেশর অতিরোমশ। গর্ভাশয় পৃথক, অতিরোমশ, গর্ভদণ্ড মসৃণ, সূত্রাকার। ফল ডুপ জাতীয়, প্রায় ১ সেমি লম্বা, পরিপক্ক অবস্থায় কালো, ডিম্বাকার বা গোলকাকার, পুরু মঞ্জরীদণ্ড কর্তৃক উর্ধ্বে উত্তোলিত।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ২৪ (Kumar and Subramaniam, 1986)
তেজপাতা গাছ-এর চাষাবাদ:
তেজপাতা গাছ চিরহরিৎ অরণ্যে জন্মে। এছাড়া বাড়ির বাগানে আবাদ করা হয়। বাড়ির উঠানে এক কোণায় তেজপাতা গাছ লাগিয়ে রাখলে যত্ন ছাড়ায় ধীরে ধীরে বেড়ে উঠবে। ফুল ও ফল ধারণ সময়কাল ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর। বংশ বিস্তার হয় বীজ ও কলমের মাধ্যমে।
বিস্তৃতি:
উষ্ণমণ্ডলীয় ও উপ-উষ্ণমণ্ডলীয় হিমালয় অঞ্চল, ভুটান, ভারত ও নেপাল। বাংলাদেশে ইহা বৃহত্তর সিলেট জেলার পাহাড়ী বনাঞ্চলে পাওয়া যায়। তাছাড়া, অন্যান্য অঞ্চলেও এর চাষাবাদ করা হয়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
বাণিজ্যিকভাবে পাতা মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাকল দারুচিনির বিকল্প হিসেবে ব্যাবহার করা হয় (Kinjilal et al., 1)())। এর পাতা চর্মরোগ, অর্শ, হৃদপিণ্ড জনিত সমস্যায় প্রয়োগ করা হয়। ইহা মস্তিষ্কের বলবর্ধক, কৃমিনাশক, মূত্রবর্ধক হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং যকৃত ও প্লীহার জন্যও উপকারী। ইহা প্রদাহ ও চোখের ক্ষতের জন্য উপকারী এবং মুখের লালা হ্রাস করে (Kirtikar et al., 1935)।
আরো পড়ুন: তেজপাতা রান্নাসহ রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়
জাতিতাত্বিক ব্যবহার:
পাঞ্জাব অঞ্চলে পাতা বাতের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়, ইহা উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে, তলপেটে সংকোচন জনিত ব্যথা ও ডায়রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। বাকলের ক্বাথ বা চূর্ণ গনোরিয়া রোগের চিকিৎসায় প্রয়োগ করা হয় এবং তা সন্তান প্রসবের পর স্রাব দমন করে (Kirtikar et al., 1935)
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৮ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) তেজপাতা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বন্য অবস্থায় আবাসস্থল ধ্বংস এর সংকটের কারণ হিসাবে দেখা যায় এবং তবে বাংলাদেশে এটি অনেকটাই আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে তেজপাতা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে বন্য জীবসংখ্যার উপর চাপ কমাতে এর চাষাবাদকে উৎসাহিত করা যেতে পারে।
তথ্যসূত্র:
১. এম কে মিয়া (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৮ম, পৃষ্ঠা ৩৪৫-৩৪৬। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Sanjay ach
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।