নারকেল উষ্ণমন্ডলীয় ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের জনপ্রিয় ফল

ফল

নারকেল

বৈজ্ঞানিক নাম: Cocos nucifera L., Sp. Pl.: 1189 (1753), সমনাম: জানা নেই। ইংরেজি: কোকোনাট পাম। স্থানীয় নাম: নারকেল, ডাব । জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Angiosperms অবিন্যাসিত: Monocots অবিন্যাসিত: Commelinids বর্গ: Arecales পরিবার: Arecaceae গণ: Cocos প্রজাতির নাম: Cocos nucifera

ভূমিকা: নারকেল বা নারকোল বা নারিকেল বা ডাব (বৈজ্ঞানিক নাম: Cocos nucifera, ইংরেজি: কোকোনাট পাম) হচ্ছে হচ্ছে এরিকাসি পরিবারের কোকোস গণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ প্রজাতি। এই গণের এরাই একমাত্র প্রজাতি যারা টিকে আছে। এই প্রজাতিটি লম্বা আকারের হয়ে থাকে।

বর্ণনা: নারকেল বহুবর্ষজীবী উঁচু পাম । কান্ড একল, ধূসর, গোলাকার ঋজু, বলয় যুক্ত, ১০ থেকে ৩০ মিটার উঁচু, পাতা পক্ষবৎ অতিখন্ডিত, উভয় পৃষ্ঠ সবুজ, ৩-৭ মিটার লম্বা প্রায়। ১.৫ মিটার প্রশস্ত, বৃন্ত ১-২ মিটার লম্বা প্রায় ৮ সেমি প্রশস্ত , দৃঢ়, প্রতি ফলকে পত্রকের সংখ্যা ১৮০, পত্রক ৩.৫ সেমি ১.৫ মিটার লম্বা, ২.৫ সেমি প্রশস্ত, খড়গাকৃতি, চর্মবৎ, প্রধান শিরা সুস্পষ্ট।

পুষ্পবিন্যাস ১-২ মিটার লম্বা, পাতলা, বৃন্ত হলুদাভ-সবুজ, চমসা আবৃত, বৃন্ত ৩০-৫০ সেমি লম্বা, প্রায় ৪ সেমি প্রশস্ত, ২০-৩০টি, পুরু, বেলনাকার, হলুদাভ সবুজ শাখা সমৃদ্ধ, শাখার উপরের অংশে পুংপুষ্প এবং নিচের অংশে স্ত্রীপুষ্প বা কখনও উভলিঙ্গ পুষ্প বিদ্যমান । চমসা ৬০ সেমি থেকে ১ মিটার লম্বা, প্রায় ১৫ সেমি প্রশস্ত, ৩ মিমি পুর, লম্বালম্বি বিভক্ত হয়ে চমসামঞ্জরী মুক্ত করে, পুংপুষ্প অপ্রতিসম, পুষ্পপুট খন্ড চর্মবৎ ২ সারিতে বিভক্ত, বাইরের সারি ৩টি ক্ষুদ্র, প্রান্তস্পর্শী, ভিতরের ৩টি দীর্ঘায়ত, সূক্ষ্মাগ্র, প্রান্তস্পর্শী, পুংকেশর ৬ টি, পুংদন্ড সূঁচ্যাকৃতি, পরাগধানী রৈখিক, ঋজু, বন্ধ্যা গর্ভকেশর ক্ষুদ্র বা অনুপস্থিত।

স্ত্রীপুষ্প পুংপুষ্প অপেক্ষা বৃহত্তর, প্রায় ২ সেমি ব্যাস যুক্ত, ডিম্বাকার, পুষ্পপুট অতিশয় বাড়ন্ত, বাইরের ৩টি খন্ড প্রান্ত আচ্ছাদী, ভিতরের ৩টি ক্ষুদ্রতর, মুকুল বিন্যাসের সাথে সংবর্ত, গর্ভপত্র ৩ টি যুক্ত, গর্ভাশয় ৩ প্রকোষ্ঠী, ডিম্বক সাধারণত একল, অর্ধমূলীয়, গর্ভদন্ড খাটো, গর্ভমুণ্ড বক্র।

আরো পড়ুন:  সুপারি এশিয়ার উষ্ণ ও আর্দ্র অঞ্চলের বৃক্ষ

ফল বিডিম্বকার, ৩ কোণাকার, সবুজ বা হলুদাভ, ২০-৩০ সেমি লম্বা, ১৫-২০ সেমি ব্যাস যুক্ত, শক্ত তন্তুময় তুষাবৃত, ধূসর বর্ণের অন্তকে ৩টি মূলীয় ছিদ্র বিদ্যমান, বৃহৎ গহ্বর মিষ্টি রসে পূর্ণ, ১ বীজ অন্তত্ত্বকের সাথে সংযুক্ত। এদের ফুল ও ফল ধারণ ঘটে মার্চ থেকে জুলাই মাসে।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ৩২ (Fedorov, 1969) ।

আবাসস্থল ও চাষাবাদ: বালুকাময় সৈকত এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চল। এছাড়া বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মাটিতেও জন্মিতে পারে । পাহাড়ী মাটিতে ভাল জন্মে। বীজের সাহায্যে বংশ বিস্তার ঘটে।

বিস্তৃতি: আদি নিবাস প্রশান্ত মহাসাগরের নিকটবর্তী পানামা উপকূলে। বর্তমানে পৃথিবীর উষ্ণমন্ডলীয় ও নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলে চাষাবাদ করা হয়। পানামার ৩০০ কিমি পশ্চিমে, ককস দ্বীপ আবিস্কারের পর দেখা গেছে পুরো দ্বীপটিই নারকেল গাছে ভর্তি। কোনো জনবসতি ছিল। বাংলাদেশের সর্বত্র জন্মে।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: চাষাবাদকৃত সব পামের মধ্যে নারিকেল অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কোপ্রা থেকে তৈল এবং ফলের ছোবড়ার আঁশ থেকে প্রাপ্ত তন্তু দড়িদড়া তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

মঞ্জরীদন্ড কেটে সংগৃহীত তাড়ি থেকে মদ ও চিনি তৈরি করা হয়। পাকা ফলের সাদা শাঁস বা অন্তর্বীজ কাঁচা অবস্থায় খাওয়া হয় এবং এর দ্বারা অনেক প্রকার মিঠাই ও নানা প্রকার ব্যঞ্জনাদিত্ত তৈরি করা হয়।

নারকেলের কাঠ থেকে যষ্টি, বল্লম ও বিভিন্ন প্রকার মনোহারী বস্তু তৈরি করা হয়। মূলের রস কণ্ঠনালীর ক্ষত নিরাময়ের একটি উৎকৃষ্ট মানের সঙ্কোচন সাধক গার্গ। ওই একই উদ্দেশ্যে অপরিপক্ক কাষ্টল বীজের ব্যবহারও প্রচলিত।

কাশি নিরাময়ের মলম তৈরিতে এবং অন্ত্র কৃমিমুক্ত করার জন্য তেল ব্যবহার করা হয়। ফলের কাষ্ঠল অংশ উত্তাপের মাধ্যমে প্রাপ্ত তরল বস্তু দাদ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। নারকেল থেকে তৈরি দুধ একটি বিরেচক।

জাতিতাত্বিক ব্যবহার: ডাবের জল জ্বর বা মূত্র সংক্রান্ত ব্যাধি নিরাময়ে উপকারী। পাতা খড়ের ছাউনি, বেড়া ও জ্বালানিরূপে ব্যবহার করা হয়। শক্ত মধ্যশিরা দ্বারা ঝাড় তৈরি হয়।

আরো পড়ুন:  জোড়া নারকেল বা কোকো ডুম বা সমুদ্রফল সেশেলজ্‌ দ্বীপের বিপন্ন নারকেল গাছ

অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১১তম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০)   নারিকেল প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে নারকেল সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে বাগানে ও বাসা বাড়িতে অধিক আবাদের উৎসাহ করা যেতে পারে।[১]

তথ্যসূত্র:

১.  এম. এ হাসান  (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১১ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১০১-১০২। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Diego Torres Silvestre

Leave a Comment

error: Content is protected !!