বউলাগোটা বাংলাদেশের সর্বত্রে জন্মানো ভেষজ বৃক্ষ

বৃক্ষ

বউলাগোটা

বৈজ্ঞানিক নাম: Cordia dichotoma Forst. f., Fl. Ins. Austr. Prodr. 18: 110 (1876). সমনাম: Cordia suaveolens Blume (1826), Cordia griffithii C. B. Clarke (1883), Cordia myxa auct. non L. (1912), Cordia obliqua auct. non Willd. (1912), Cordia premnifolia Rid. (1915). ইংরেজি নাম: Indian Cherry, Sebesten Plum, Soap Berry, Clammy Cherry. স্থানীয় নাম: বোহাল, বোহারি, বহুবরা, লারহোরা, বউলাগোটা।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ:  Angiosperms. অবিন্যাসিত:  Tracheophytes. অবিন্যাসিত: Eudicots. বর্গ: Boraginales পরিবার:  Boraginaceae. গণ: Cordia. প্রজাতি: Cordia dichotoma.

ভূমিকা: বউলাগোটা (বৈজ্ঞানিক নাম: Cordia dichotoma) বাংলাদেশের সব জেলাতেই জন্মে। এছাড়াও ভেষজ চিকিৎসায় কাজে লাগে।

বউলাগোটা-এর বর্ণনা:

মধ্যম আকৃতির পর্ণমোচী বৃক্ষ, প্রায় ২০ মিটার উঁচু, কান্ড বাঁকানো, শাখা প্রশাখা নিম্নাভিমুখী ঝুলন্ত, বাকল ছাইয়ের ন্যায় ধূসর বা বাদামী, অগভীর খাজযুক্ত।

পত্রের আকার আয়তন পরিবর্তনশীল, পত্র সরল, একান্তর, ৪-১০ x ৩-৭ সেমি, ডিম্বাকার থেকে ডিম্বাকৃতি-ভল্লাকার, কখনও প্রশস্ত ডিম্বাকার থেকে অর্ধ-বর্তুলাকার, অখন্ড বা অনেকটা তরঙ্গিত বা উপরের দিক সামান্য দপ্তর, দীর্ঘাগ্র থেকে গোলাকার;

মূলীয় অংশ কতিতাগ্র বা স্থূলাগ্র, অঙ্কীয় পৃষ্ঠ পতলা রোমশ, উপর পৃষ্ঠ বিক্ষিপ্ত গোলাকার মনিক কোষ যুক্ত, উভয় পার্শ্বে পার্শ্বীয় শিরা ৪-৫ টি, বৃন্ত ২-৫ সেমি লম্বা।

পুষ্পবিন্যাস শীর্ষীয় বা অক্ষীয়, স্বল্প সংখ্যক পুষ্প বিশিষ্ট করিম্ব বা প্যানিকেল সাইম। পুষ্প সাদা, ক্ষুদ্র, অবৃন্তক, সুগন্ধি, দ্বিরুপ, পুং এবং উভলিঙ্গ পুষ্প একই বৃক্ষে মিশ্রিত জন্মে।

বৃতি নালি সদৃশ ঘন্টাকার, কুড়ি অবস্থায়। গোলাকার, নিম্নাংশ ডিশ আকৃতি বিশিষ্ট, ৫-খন্ডিত, রৈখিক-ভল্লাকার, অসম, ফলে আড়াআড়ি ২ সেমি।

দলমন্ডল সাদা বা হলুদাভ সাদা, ২.৫ – ৩.০ মিমি লম্বা, নালিকাকার, অভ্যন্তর রোমশ, খন্ড ৪-৬ টি, দীর্ঘায়ত বিস্তৃত ও বক্র। পুংকেশর দলখন্ডের সংখ্যার সমান, দলনালির অভ্যন্তরে সন্নিবেশিত।

গর্ভাশয় অধিগর্ভ ৪-কোষী, প্রতিকোষে ডিম্বক ১টি, গর্ভদন্ড দ্বিধা বিভাজিত। গর্ভমুন্ড চমসাকার। ফল ড্রপ, ডিম্বাকার, হলুদ পরিপক্ক অবস্থায় লাল বা কালো, ১-ডিম্বক বিশিষ্ট। বীজ ডিম্বাকার চ্যাপ্টা, স্বচ্ছ আঠালো মিষ্ট মন্ডের মধ্যে সন্নিবিষ্ট।

আরো পড়ুন:  শাল গাছের ১৮ টি ভেষজ গুণাগুণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:

তৃণভূমি, বেলেমাটির অরণ্য, উন্মুক্ত অঙ্গন, গাছগাছড়া কম বৃদ্ধির অরণ্য, গ্রামের ঝোপ ঝাড়ারে জন্মে। ফুল ও ফল ধারণ ফেব্রুয়ারি-আগস্ট। বীজ ও শাখাকলম দ্বারা বংশ বিস্তার হয়।

বিস্তৃতি:

অস্ট্রেলিয়া, কম্বোডিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, লাওস, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম। বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায়

বউলাগোটা-এর ব্যবহার:

অতি গুরুত্বপূর্ণ সর্বার্থসাধক বৃক্ষ, এই বৃক্ষ থেকে খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ ও কাষ্ঠ পাওয়া যায়। ফল ও বীজের শাস খাদ্যরূপে গ্রহণ করা হয়, শাঁস দাদ নিরাময়ে খুব উপকারী (Benthall, 1933).

গ্রামবাসীরা গার্হস্থ্য ব্যববহারের জন্য এর পাকা ফলের আঠা পছন্দ করে। বাকলে ২০% টেনিন আছে, কান্ডের বাকলের ক্বাথ অজীর্ণ, উদরাময়, জ্বর, শিরঃপীড়া, পাকস্থলীর পীড়া ইত্যাদি ব্যধি নিরাময়ে এবং টনিকরূপে কার্যকরী।

টিউমার ও ঘা নিরাময়ে ভিজা বাকল গরম করে ব্যবহার করা হয়। মূত্রনালির সংক্রমণ এবং ফুসফুস ও প্লীহার রোগে ফল উপকারী (Chopra et al., 1956).

কাষ্ঠ দ্বারা নৌকা, বন্দুকের কুঁদা, কৃষিকাজের যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহার হয় (Mia and Huq, 1986). মানুষ ও পশুপাখি সুস্বাদু ফল খেয়ে থাকে।

জাতিতাত্বিক ব্যবহার:

ফলের স্বচ্ছ আঠা পাখি শিকার করতে, ঘুড়ি তৈরিতে এবং বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের ছাত্ররা পুস্তকের মলাট লাগাতে ব্যবহার করে থাকে (Das and Alam, 2001).

ভারতের লোধা আদিবাসীরা মূলের ছাল লেই করে ফুসকুড়ি নিরসনে এবং সাওতাল আদিবাসীরা পাকা ফল রেচক রূপে ব্যবহার করে।

ভারতের উত্তর প্রদেশের থারাস আদিবাসী অপক্ক ফল খাদ্য সামগ্রী সংরক্ষণের জন্য তরলবস্তু তৈরিতে ব্যবহার করে এবং পাকা ফল বালক-বালিকারা খেয়ে থাকে (Maheswari et al., 1981).

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) বউলাগোটা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।

আরো পড়ুন:  তেঁতুল গাছের পাতা, ফল, বীজের বারোটি ঔষধি ব্যবহার

বাংলাদেশে বউলাগোটা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির ব্যাপক চাষাবাদ প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র:

১. বি এম রিজিয়া খাতুন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৮-৩৯ আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Mark Marathon

Leave a Comment

error: Content is protected !!