মনিরাজ বাংলাদেশের পাহাড়িঞ্চলে জন্মানো সংকটাপন্ন বৃক্ষ

বৃক্ষ

মনিরাজ

বৈজ্ঞানিক নাম: Cycas pectinata Griff., Notul. Pl. Asiat. 4, t 360, f. 3 10 t (1854). সমনাম: Cycas circinalis L. subsp. vera var. pectinata (Griff.) Schuster (1932). ইংরেজি নাম: নেপাল সাইকাস। স্থানীয় নাম: মনিরাজ।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Cycadophyta. অবিন্যাসিত: Tracheophytes. অবিন্যাসিত: Cycadopsida. বর্গ: Cycadales পরিবার: Cycadaceae. গণ: Cycas. প্রজাতি: Cycas pectinata.

ভূমিকা: মনিরাজ (বৈজ্ঞানিক নাম: Cycas pectinata) প্রজাতিটির দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশে জন্মে। বাংলাদেশের পাহাড়িঞ্চলে জন্মে। এই প্রজাতি ভেষজ চিকিৎসায় কাজে লাগে।

মনিরাজ-এর বর্ণনা:

এই প্রজাতিটি চিরহরিৎ নারিকেল বা খেজুর সদৃশ বৃক্ষ, ৩ মি, পর্যন্ত লম্বা, প্রায়শঃ দুই বা অধিক শাখায় বিভক্ত, আগাগোড়া মসৃণ। পাতা ২ মি. পর্যন্ত লম্বা, পিছনে বা নিচের দিকে বাঁকানো, পত্রবৃন্ত প্রায় ৪৬ সেমি লম্বা, অল্প কয়েকটি, ছোট, দূরবর্তী কন্টক বিশিষ্ট, পত্রক ২৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা এবং প্রায় ১ সেমি চওড়া, রৈখিক, ক্ষুদ্র কন্টকে সমাপ্ত।

মেগাস্পোরোফিল ঘন পিঙ্গল, রেশমী, ফলক প্রায় বলয়াকৃতি, ৭ সেমি পর্যন্ত চওড়া, প্রান্ত কন্টকিত, তুরপুন আকার এর দাঁতসহ ঘন চিরুনীর মতো, ক্রমাগত সরু শীর্ষ প্রায় ২.৫ সেমি লম্বা, বৃন্ত ফলকের দৈর্ঘ্যের প্রায় সমান, মধ্যাংশের উপরে ২-৩ জোড়া ডিম্বক বিশিষ্ট। বীজ প্রায় ৪.০-৪.৫ সেমি লম্বা, ডিম্বাকার হতে গোলাকার, মসৃণ, কমলা-লাল অথবা হলুদ।

পুং শঙ্কু ৪৫-৪৬ X ১৬-১৭ সেমি, নলাকার-ডিম্বাকার, পুংধানীধর শল্ক ৩.৫ সেমি লম্বা, ২.৫ সেমি ব্যাসযুক্ত, ত্রিকোণীয়-মুষলাকৃতি, শীর্ষ অধিক পুরু, হঠাৎ সূক্ষ্মাগ্রী, সরু শীর্ষ ৩.৫-৪.০ সেমি লম্বা।

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:

পাহাড়ের অনাবৃত ঢাল, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭০০ মিটার পর্যন্ত উঁচুতে। ফুল ও ফল ধারণ মাস নভেম্বর থেকে জানুয়ারী। বংশবিস্তার হয় বীজ দ্বারা।

মনিরাজ-এর বিস্তৃতি:

পূর্ব ভারত, মায়ানমার এবং নেপাল। বাংলাদেশে চট্টগ্রামের বারিয়াঢালার কাছে কয়েকটি পাহাড়ে সীমাবদ্ধ এবং উত্তর ময়মনসিংহের শালবনে কদাচিৎ দেখা গেছে।

আরো পড়ুন:  কামরাঙা গাছ-এর নানাবিধ ভেষজ গুণাগুণ ও প্রয়োগ

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

পাতা ফুলের তোড়া বানানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। বীজকে কাম উদ্দীপক হিসাবে চিন্তা করা হয় বলে মেগাস্পোরোফিল বাজারে বিক্রী হয়। ভারতে (আসাম এবং মেঘালয়) কচি কান্ড সবজি হিসাবে ব্যবহৃত হয় এবং বীজও খাওয়া হয় (Sahni. 1990)। ভারত এর আসামে চূর্ণকৃত মাংসল কান্ড চুল ধোলাই হিসাবে ব্যবহৃত হয় (Kanjilal et al., 1939) ।

জাতিতাত্ত্বিক ব্যবহার: সিকিম এর পাহাড়ী অধিবাসীরা কান্ড থেকে সংগৃহীত মোটা সাগু ফলের সাথে খায় (Watt, 1889)।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৫ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) মনিরাজ প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, স্থানীয় ঔষধি হাতুড়ে ডাক্তার দ্বারা নির্বিচারে সংগ্রহ এবং বনশূন্য করার কারণে আবাসস্থল ধ্বংস হওয়ায় বাংকাদেশে এই প্রজাতি সংকটাপন্ন। বাংলাদেশে মনিরাজ সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড এবং বারিয়াঢালার পাহাড়ে স্বস্থানে প্রজাতির সংরক্ষণ জরুরী প্রয়োজন। একই সাথে দ্রুণ চাষের মাধ্যমে দেহ-বহির্ভূত বংশবৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়া হলো।

তথ্যসূত্র:

১. এম. মতিয়ুর রহমান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৫ম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৯৫-৩৯৬ আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: brewbooks

Leave a Comment

error: Content is protected !!