বিহিদানা গাছ ককেশাস অঞ্চলের উষ্ণ-নাতিশীতোষ্ণ দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার আদি নিবাস। এটি একটি ছোট, পর্ণমোচী, ক্রমবর্ধমান গাছ। কাশ্মীরে সাধারণত চাষ করা হয়। রোস্টিং, বেকিং বা স্টু হিসাবে খাওয়ার পরে সবচেয়ে ভাল। এছাড়াও জ্যাম, জেলি বা পুডিং হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
বিহিদানা গাছ-এর পরিচয়
বিহিদানা মাঝারি ধরনের ও বহু শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট সবুজ পত্রাচ্ছাদিত এবং ফলবান বৃক্ষ। এর কচি ডালপালা রোমশ। পাতা ডিম্বাকৃতি, ৫-১০ সে.মি. লম্বা, ৪-৮ সে.মি. চওড়া, গাঢ় সবুজ, তলদেশ সামান্য রোমশ। পাতার কিনারা অসমান কাটা কাটা, ঢেউ খেলানো, গাছের ছাল কালো কিংবা ঘোর খয়েরী রঙের। ফুল সাদা কিংবা হালকা এই গোলাপী বর্ণের, পাতার কুক্ষি থেকে এক-একটি বেরোয়। পাতার বোঁটা এক থেকে দেড় সে.মি. লম্বা এবং রোমশ।
মার্চ-এপ্রিল মাসে ফুল ফোটে, তৎপরে ফল ধরে। ফুলের ব্যাস ৫ সে.মি., পাপড়ির সংখ্যা পাঁচটি এবং সেগুলির কিনারা কাটা কাটা। ফল অনেকটা নাসপাতির মতো, রসালো এবং সুগন্ধ-বিশিষ্ট। কোনো কোনো ফল আপেল কিংবা পেয়ারার মতো আকারের হয়। সোনালী-হলুদ রঙের ফলগুলি স্বাদে অম্ল-মধুর, তবে পারস্যের কিছু কিছু স্থানের গাছে খুবই মিষ্ট স্বাদের ফল হয়, সেগুলি কাঁচায়ও খাওয়া যায়। ফলের ভেতরে পাঁচটি প্রকোষ্ঠ আছে এবং তার মধ্যে অনেক বীজ থাকে।
বীজগুলি ৬। ৭ মিলিমিটার লম্বা, একটু বাঁকা ও লম্বায় দাগবিশিষ্ট, ফিকে লাল বা পাটলা বর্ণের। দেখতে অনেকটা ডালিমের বীজের মতো। বীজগুলি ফলের ভেতর লালা সংপৃক্ত হয়েই থাকে। গরম জলে ভিজালে বীজের উপরকার হড়হড়ে পদার্থ সরে গিয়ে বীজগুলি বেরিয়ে আসে। বীজের ক্বাথ প্রসাধন দ্রব্য প্রস্তুত করতে কাজে লাগে। হড়হড়ে পদার্থ দুগ্ধ শিল্পে স্টেবিলাইজারের কাজ করে। উভয়ই ঔষধার্থে ব্যবহার্য।
এই গাছটির বোটানিক্যাল নাম Cydonia oblonga Mill, পূর্বে এটির নাম ছিল c. vulgaris Pers. এবং Pyrus cydonia Linn., ফ্যামিলী Rosaceae. ভারতের অধিকাংশ স্থানে বিহিদানা নামেই পরিচিত। আরবে সফরজল নামেই প্রসিদ্ধ।
গুণাগুণ
১. ফল: স্বাদে মধুরাম্লষায়, স্বভাবে সঙ্কোচক, গ্রাহী, তৃপ্তিদায়ক, মূত্রকারক, অগ্নিবর্ধক, জ্বরঘ্ন, বলকর, শিরঃপীড়া নাশক, হৃৎপিণ্ডের ক্রিয়াবর্ধক, তৃষ্ণানিবারক, পুষ্টিকর, ক্ষতরোপক, কফ নিঃসারক, মস্তিষ্ক, হৃদয় ও যকৃতের পক্ষে উপকারী। এটি অরুচি, বমি, রক্তাতিসার, রক্তপিত্ত, রক্তবিকার, উদরশূল, হৃদ্দৌর্বল্য, কাসি, হাঁপানি প্রভৃতির চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহার্য। ফলের খাদ্যাংশে প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেটস্, ভিটামিন-সি, ম্যালিক এসিড, টারটারিক এসিড ও খনিজ পদার্থ প্রভৃতি বিদ্যমান ।
২. বীজ (আঠা অংশ সহ): স্নিগ্ধ, পিচ্ছিল, শীতল, কোষ্ঠ পরিষ্কারক, অল্প সঙ্কোচক ও পুষ্টিকর। এটি জ্বর, শ্বাস, কাস, অগ্নিমান্দ্য, অরুচি, অতিসার, প্রতিশ্যায়, প্রবাহিকা, বমি, তৃষ্ণা, উদরশূল, উরঃক্ষত, উদরাময়, রক্তাতিসার, কফজন্য গলরোগ, গলক্ষত, জিহ্বাশোষ, যকৃৎবিকার, দুর্বলতা, মূত্রাশয়ের পীড়া, মূত্রকৃচ্ছ্র, মূত্রপ্রদাহ, যোনি ও লিঙ্গের প্রদাহ, দগ্ধরণ (প্রলেপ), শুক্রতারল্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যবহার্য। পাতা, কুঁড়ি ও গাছের ছাল সঙ্কোচক গুণধর্মী। ফুলের কুঁড়িতে Cyanogenetic glycoside আছে। তাছাড়া গাছের ছাল এবং শাখা-প্রশাখা পাতন করলে hydrocyanic acid পাওয়া যায়।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্র:
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ১৮০-১৮১।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি flowersofindia.net থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Sunit Singh
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।