বন সাবাইম এশিয়ার চিরহরিৎ বনে জন্মানো ভেষজ বৃক্ষ

ভেষজ বৃক্ষ

বন সাবাইম

1983 (1985). সমনাম: Dalbergia frondosa Roxb. ex DC. (1825), Dalbergia assamica (Benth.) Miq. (1852), Amerimnon assamicum (Benth.) 0. Kuntze (1891), Dalbergia bhutanica Thoth. (1987). ইংরেজি নাম: জানা নেই। স্থানীয় নাম: বন সাবাইম, মুরকিমুরা।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস 
জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Edicots. বর্গ: Fabales. পরিবার: Fabaceae. গণ: Dalbergia প্রজাতির নাম: Dalbergia lanceolaria

ভূমিকা: বন সাবাইম (বৈজ্ঞানিক নাম: Dalbergia lanceolaria var. assamica) এক প্রকারের ভেষজ বৃক্ষ। শোভা বর্ধনের জন্য লাগানো হয়।

বন সাবাইম-এর বর্ণনা:

পত্রঝরা বৃক্ষ, ২৭ মিটার পর্যন্ত উঁচু, শাখাপ্রশাখা ছড়ানো, ক্ষুদ্র শাখা রোমশ, বাকল গাঢ় বাদামি, পাতলা যা উল্লম্ব সন্ধিযুক্ত, পুরাতন বৃক্ষে একটির উপর অন্যটি স্তরে উন্মুক্ত। পত্র সচূড় পক্ষল, একান্তর, ১৪.৫-৫.৫ x ২-৩ সেমি, আয়তাকার-উপবৃত্তাকার, কদাচিৎ প্রায় বর্তুলাকার, অখন্ডিত, শীর্ষ স্থূলা বা খাঁজযুক্ত, গোড়া গোলাকার, কাগজসদৃশ, উপরে হালকা রোমশ কিন্তু শীঘ্র রোমহীন, নিম্নে প্রচুর চাপা অণুরোমশ, পার্শ্বীয় শিরা ৮-১০ জোড়া, স্পষ্ট নয়, সূক্ষ্ম জালিকাকার, অক্ষ রোমহীন, সাধারণ পত্রবৃন্ত বেলনাকার, রোমহীন, পত্রবৃন্ত ২-৪ মিমি লম্বা, উপপত্র ২টি, ১.২-১.৫ সেমি লম্বা, প্রায় কাস্তে আকৃতি থেকে বল্লমাকার, ক্ষণস্থায়ী।

পুষ্পবিন্যাস কাক্ষিক, শিথিল, প্যানিকল, ১০-১৫ সেমি লম্বা, সাধারণত পত্র থেকে খাটো, হালকা রোমশ। পুষ্প সাদা, ৬-৯ মিমি লম্বা, মঞ্জরীপত্র এবং মঞ্জরীপত্রিকা ডিম্বাকার, অণুরোমশ, ক্ষণস্থায়ী, পুষ্পবৃন্ত ২-৩ মিমি লম্বা। বৃতি ঘন্টাকার, ৩-৪ মিমি লম্বা, বাহিরে অণুরোমশ, ৫-দন্তর, সর্বনিম্নটি বৃহৎ, বল্লমাকার, পার্শ্বীয়টি ডিম্বাকার। পাপড়ি ৫টি, ধ্বজকীয় পাপড়ি ৫-৭ মিমি লম্বা, ডিম্বাকার-বর্তুলাকার, শীর্ষ খাতাগ্র, দন্ডযুক্ত, ফিকে সবুজ কেন্দ্রীয় দাগযুক্ত রক্ত বেগুনী শিরাল, পক্ষ কিছুটা চতুর্ভুজাকার, দন্ডক, তরীদল নৌকা আকৃতি।

পুংকেশর ১০টি, পুংকেশরীয় আবরণ ৫-৬ মিমি লম্বা, ৫টি করে ২টি পার্শ্বীয় গুচ্ছে উন্মুক্ত। গর্ভাশয় ৪.৫-৬.০ মিমি লম্বা, বৃন্তক, তামাটে রোমশ, গর্ভদন্ড সরু, গর্ভমুন্ড ক্ষুদ্র, ২৩ ডিম্বকযুক্ত। ফল পড, ৪.০-৭.৫ x ১.০-১.৫ সেমি, আয়তাকার বা ফিতা-আকৃতি, বৃন্তক, নমনীয়, শীর্ষ সূক্ষ্মাগ্র, গোড়ার দিকে চাপা, রোমহীন, বীজের বিপরীতে সূক্ষ্ম শিরাল বা আঁচিলযুক্ত, সাধারণত ১-২ বীজী, কদাচিৎ ৪বীজী পর্যন্ত, অবিদারী। বীজ বৃক্কাকার, প্রায় ৬ x ৫ মিমি, ট্যাপ্টা।

আরো পড়ুন:  জাতেরি লম্বামালা দক্ষিণ এশিয়ায় জন্মানো বিরুৎ

ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ২০ (Mehra and Hans, 1969 Dalbergia assamica এর অধীনে)।

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:

চিরহরিৎ বনাঞ্চল, ৯০০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় পর্যন্ত বিস্তৃত। ফুল ও ফল ধারণ সময় এপ্রিল-জানুয়ারি। এই গাছের বীজ থেকে নতুন চারা জন্মে।

বন সাবাইম-এর বিস্তৃতি:

ভুটান, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, মায়ানমার এবং শ্রীলংকা। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং সিলেট জেলায় বিস্তৃত। (Khan et al., 1996)।

ব্যবহার: শোভাবর্ধনকারী এবং ছায়াপ্রদানকারী উদ্ভিদ হিসেবে প্রচুর জন্মে। ভেষজ গুণ উল্লেখ করেন Kumar and Sane (2003)।

জাতিতাত্বিক ব্যবহার:

আসামের বিভিন্ন বাগানে খুবই জনপ্রিয় ছায়াপ্রদানকারী উদ্ভিদ এবং ইন্দো-চীনে শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদরূপে লাগানো হয় (Kumar and Sane, 2003)।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৮ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) বন সাবাইম প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, উদ্ভিদের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কারণ বাংলাদেশে এটি সংকটাপন্ন হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে বন সাবাইম সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটি রক্ষার জন্য ইন-সিটু এবং এক্স-সিটু পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র:

১. বি এম রিজিয়া খাতুন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৮ম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৫১-৫২। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Annals of the Royal Botanic Garden, Calcutta, vol. 10(1): t. 71 (1906)

Leave a Comment

error: Content is protected !!