চালতা এশিয়ায় জন্মানো টক জাতীয় জনপ্রিয় ফল

ফল

চালতা

বৈজ্ঞানিক নাম: Dillenia indica L., Sp. Pl. 1:535 (1753). সমনাম : Dillenia speciosa Thunb. (1791). ইংরেজি নাম : Elephant Apple. স্থানীয় নাম: চালতা ।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Angiosperms অবিন্যাসিত: Eudicots বর্গ: Dilleniales পরিবার: Dilleniaceae গণ: Dillenia প্রজাতির নাম: Dillenia indica

ভূমিকা: চালতা বা চাইলতা বা চালিতা বা চাইলতে (বৈজ্ঞানিক নাম: Dillenia indica) হচ্ছে ডাইলেনিয়াসি পরিবারের ডাইলেনিয়া গণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। এই প্রজাতিটি ফল গাছ হিসাবে লাগানো হয়ে থাকে। এই গাছের ফল থেকে বাংলাদেশ ভারতে আচার ও চাটনি প্রস্তুত করা হয় এবং বাণিজ্যিক ফল হিসেবে বাজারে প্রচুর বিক্রি হয়।

বর্ণনা: মধ্যম থেকে বৃহৎ আকৃতির চিরহরিৎ বৃক্ষ, ৪০ মিটার পর্যন্ত উঁচু, দেহ কান্ড ১.০ থেকে ১.২ মিটার, ব্যাস বিশিষ্ট, বাকল মসৃণ, কমলা-বাদামী থেকে গাঢ় কমল বর্ণ যুক্ত, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শল্ক পতনশীল। এদের পাতা সরল, একান্তর, দীর্ঘায়ত, ১.৫৩০ x ৬-১২ সেমি, সামান্য দস্তুর, চর্মবৎ, উপরের পৃষ্ঠ ও নিচের পৃষ্ঠ শিরা রোমশ, বৃন্ত প্রায় ১০ সেমি লম্বা।

চালতার পুষ্প একল, ১৫-২০ সেমি ব্যাস বিশিষ্ট, নিম্নমুখী ঝুলন্ত । বৃত্যংশ ৫টি, পাপড়ি ৫টি, সাদা, সবুজ শিরা যুক্ত। পুংকেশর অসংখ্য, ২টি পৃথক দলে বিন্যস্ত, অভ্যন্তরের পুংকেশর বৃহত্তর, পরাগধানী ছিদ্র দ্বারা উন্মুক্ত। ফল অবিদারী, প্রসারিত রসালো বৃত্যংশ দ্বারা পরিবেষ্টিত। বীজ বীজোপা বিহীন। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে মে থেকে  ফেব্রুয়ারি মাসে।

ক্রোমোসম সংখ্যা: 2n = ৫৪, ৫৬ (Kumar and Subramaniam, 1986).

আবাসস্থল ও চাষাবাদ: সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১১০০ মিটার পর্যন্ত চিরহরিৎ এবং উঞ্চমন্ডলীয় বর্ষা অরণ্য। বীজ ও শাখা কলমে বংশ বিস্তার হয়।

বিস্তৃতি: আদিনিবাস এশিয়ার উষ্ণাঞ্চল। ভারত, শ্রীলংকা, মায়ানমার, কম্বোডিয়া ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ চীন ও মালয়েশিয়া। বাংলাদেশের সব অরণ্যে জন্মে।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: চালতার কাঠ আসবাব পত্র তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি রূপেও কাষ্ঠ ব্যবহৃত। ফল তরিতরকারির সাথে একত্রে রান্না করা হয়। এছাড়া চিনির সাথে মিশ্রিত করে উত্তম জেলি তৈরিতে ফল গুরুত্বপূর্ণ। কাশির ভেষজ ওষুধ রূপেও ফলের ব্যবহার প্রচলিত।

আরো পড়ুন:  চালতা গাছ ও ফলের পাঁচটি ভেষজ গুণাগুণের বিবরণ

জাতিতাত্বিক ব্যবহার: স্থানীয় জনসাধারণ তরকারি রান্না করে। সুস্বাদু ও অসুগন্ধী করতে ফল ব্যবহার করে।

অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) চালতা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে চালতা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে বাগানে ও বাসা বাড়িতে অধিক আবাদের উৎসাহ করা যেতে পারে।[১]

তথ্যসূত্র:

১.  এস. কে. দত্ত  (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৪৪-৩৪৫। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke

Leave a Comment

error: Content is protected !!