ভূমিকা: আঁশফল বা কাঠলিচু বা মেওয়া বা লংগান ( বৈজ্ঞানিক নাম: Dimocarpus longan, ইংরেজি: Eyeball Tree, Dragon’s Eye, Burdock) হচ্ছে সপুষ্পক উদ্ভিদ। এই প্রজাতিটি মাঝারি আকারের বৃক্ষ হয়ে থাকে।
বর্ণনা: আঁশফল মধ্যম-আকৃতির বৃক্ষ, কদাচিৎ গুল্ম, ৪০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। এদের গুড়ি ৮০ সেমি চওড়া, ছোট শাখা বেলনাকার যা ৫টি অস্পষ্ট খাঁজযুক্ত, সাদাটে থেকে গাঢ় বাদামী।
পত্র ২৪ পত্রক, কাক্ষিক অংশ রোমশ, অপরিণত পত্র লালাভ কিন্তু পরবর্তীতে সবুজ, পত্রবৃন্ত ৫-২৫ সেমি লম্বা, উপরিভাগ খাঁজযুক্ত, পত্রক উপবৃত্তাকার থেকে ডিম্বাকার-বল্লমাকার, ৫-৪০ x ২-১৫ সেমি, চর্মবৎ, নগ্ন গ্রন্থিযুক্ত বা গ্রন্থিবিহীন, শিরার গোড়া রোমশ, গোড়া সমান বা তির্যক বা গোলাকার, প্রান্ত অখন্ডিত, শীর্ষ স্থুলা থেকে দীর্ঘাগ্র, ঘনভাবে দৃঢ় রোমাবৃত, শাখাপ্রশাখা স্বল্প থেকে কিছু সংখ্যক, ঊর্ধ্ব, অণু শাখাপ্রশাখা প্রায় বৃন্তহীন বা স্পষ্টভাবে বৃন্তযুক্ত, ৩-৫ পুষ্পক সাইম, মঞ্জরীপত্র স্পষ্ট, আয়তাকার-ডিম্বাকার থেকে সরু বল্লমাকার, ২-৫ x ০.৫-১.৫ মিমি, পুষ্পবৃন্ত ১-৩ মিমি লম্বা।
পুষ্প পুংপুস্পক এবং উভলিঙ্গ, একই উদ্ভিদ মিশ্রিত অবস্থায়ও পাওয়া যায়। বৃত্যংশ ২-৫ x ১-৩ মিমি, রোমশ। পাপড়ি ৫টি, প্রশস্ত থেকে সরু চমসাকার, ২-৫ x ১-২ মিমি, উভয় পার্শ্ব পশমী। চাকতি মখমলীয়।
পুংকেশর ৮টি, পুংদন্ড ১-৬ মিমি লম্বা, অধিকাংশ পশমী, পরাগধানী ০.৬-১.৫ মিমি লম্বা। ফল ঝুলন্ত, আঙ্গুরের মতো গুচ্ছাকার, প্রশস্ত উপবৃত্তীয় থেকে গোলাকার, ১-৩ x ১-৩ সেমি, মসৃণ থেকে আঁচিলযুক্ত বা কন্টকযুক্ত, ১ সেমি পর্যন্ত লম্বা, রোমহীন, একটি একক বৃহৎ বীজ বহনকারী যা পাতলা সাদা রসালো মন্ড বিশিষ্ট। এদের ফুল ও ফল ধারণ ঘটে জুন থেকে জানুয়ারি মাসে।
ক্রোমোসোম সংখ্যা : 2n = ৩০ (Fedorov, 1969).
আবাসস্থল ও চাষাবাদ: নিম্নভূমির বর্ষা-অরণ্য। বীজ দ্বারা এবং কান্ডের জোড় কলম দ্বারা চারা করে।
বিস্তৃতি: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ভারতের স্বদেশী। এশিয়া মহাদেশ, শ্রীলংকা এবং ভারত থেকে দক্ষিণ চীন, তাইওয়ান এবং মালয়েশিয়া। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্ষা-অরণ্যে কদাচিৎ দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রাকৃতিক অবস্থায় দেখা যায় এবং আবাদী অবস্থায়ও পাওয়া যায়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: কাঠ শক্ত, টেকসই এবং সূক্ষ্ম সুন্দর। যদিও আসবাবপত্র তৈরীতে ব্যবহৃত হয় কিন্তু জনপ্রিয় নয়। ইন্দো-চীনে শুষ্ক ফল টনিক হিসেবে এবং মস্তিস্কের উত্তেজক হিসেবে ব্যবহৃত হয় (Benthall, 1984).
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: ফল খাওয়া হয় কাঁচা, শুষ্ক বা সংরক্ষিত অবস্থায়। বীজ স্যাপোনিন বহন করে যা চুল বোয়াতে ব্যবহৃত হয় (Chopra et al., 1956).
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১০ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) কাঠলিচু প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বন উজার এবং কাষ্ঠ আহরণের কারণে এটির সংকটের কারণ দেখা যায় এবং বাংলাদেশে এটি প্রায় সংকটাপন্ন (nt) হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে কাঠলিচু সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে এটি সংরক্ষণের জন্য এবং এক্স-সিটু পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা উচিৎ।[১]
তথ্যসূত্র:
১. এস নাসির উদ্দিন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ২০৪-২০৫। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: dezidor
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।