বর্ণনা: তেন্দু বা বিড়িপাতা বা টেন্ডু (বৈজ্ঞানিক নাম: Diospyros melanoxylon) এবিনাসি পরিবারের ডিয়োসপিরোস গণের সপুষ্পক উদ্ভিদের একটি মাঝারি আকৃতির পত্রঝরা বৃক্ষ। এদের বাকল ধূসর কালো, ছোট শাখা ও মঞ্জরী কোমল ধূসর বাদামী রোমাবৃত। পত্র প্রতিমুখ, উপবৃত্তাকার বা ডিম্বাকার, মোটা চর্মবৎ, তরুণ অবস্থায় উভয় পৃষ্ঠ ঘন ক্ষুদ্র কোমল রোমাবৃত, পরিপক্ক অবস্থায় রোমশ বিহীন বা অঙ্কীয় পৃষ্ঠ রোমশ।
এদের পুষ্প একলিঙ্গ, ৪-৬ অংশক। বৃতি ৩০-৬ খন্ডিত, হলদে সবুজ, ঘন্টাকার। দলমন্ডল ৪-৬ খন্ডযুক্ত, হলদে সাদা, গোলাকার বা দীর্ঘাগ্র। পুংপুষ্প: ৩-১২টি একত্রিত, পুংকেশর ৮২০টি, চাকতির মধ্যে নিহিত, পরাগধানী তীক্ষা, পুংদন্ডের সমান দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট। স্ত্রী পুষ্প: একল, অর্ধবৃন্তক, গর্ভাশয় গোলাকার, ঘন রোমাবৃত গর্ভদন্ড ২টি, দ্বিখন্ডিত, গর্ভমুন্ড ৪টি, রোমশ, বন্ধ্যা পুংকেশর ৮-১২টি। ফল বেরি, গোলাকার বা ডিম্বাকার, পরিপক্ক অবস্থায় হলুদ। বীজ ৪৮টি, দীর্ঘায়ত, চাপা, বহিস্ত্বক উজ্জ্বল, কুঞ্চিত। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট মাসে।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ৩০ (Kumar and Subramaniam, 1986).
আবাসস্থল: শুষ্ক ভূখন্ড।
বিস্তৃতি: আদিনিবাস মধ্যভারত, শ্রীলংকাতেও দেখা যায়। বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার নওয়াবগঞ্জে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু উদ্ভিদ রোপণ করা হয়েছে (Das and Alam, 2001)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ উদ্যানে এর একটি গাছ আছে।
অর্থনৈতিক ব্যবহার/গুরুত্ব/ক্ষতিকর দিক: কাঠ লালাভ বাদামী, শক্ত ও ভারি, বুনন সূক্ষ্ম, ও সোজা। ভারতে এই বৃক্ষের সরলকাষ্ঠ থেকে সবচেয়ে উন্নত মানের বিলিয়ার্ডখেলার লাঠি তৈরি হয়। এই কাষ্ঠ যন্ত্রপাতির হাতল ও কৃষিযন্ত্রপাতি তৈরির খুব উপযোগী। সোজা তরুণ বৃক্ষ ঘরের আড়া ও খুঁটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এর কালো সার কাঠে ভাস্কর্য নির্মিত হয়। মরু অঞ্চলে বনায়নের জন্য এই বৃক্ষ খুবই গুরুত্বপূর্ণ (Purkayastha, 1996)। ফল আহার্য।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: ভারতে এই গাছের পাতায় বিড়ি তৈরি হয়। কান্ডের বাকল ও চিনি একত্রে মিশ্রিত করে কুন্দা আদিবাসী সম্প্রদায় সর্দিকাশির ভেষজ ওষুধ তৈরি করে। কয়া আদিবাসী সম্প্রদায় কচিপাতার রস দ্বারা উদরাময় রোগের চিকিৎসা করে। বাল্মীকি সম্প্রদায় অস্থিভঙ্গে কচিফলের লেই ব্যবহার করে। কাষ্ঠের ছাই পরিষ্কারক। কচিপাতা সেন্দু আদিবাসী সম্প্রদায় সবজিরূপে ব্যবহার করে (Rama and Henry, 1996)।
বংশ বিস্তার: বীজে বংশ বিস্তার।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) তেন্দু প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের বর্তমান অবস্থা নির্ণয় করা হয়নি এবং প্রজাতিটি অতি বিরল মনে হয়। প্রজাতিটি সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আবাসস্থল ধ্বংস প্রজাতিটির আশু সংকটের কারণ। তেন্দু প্রজাতিটি বাংলাদেশে সংরক্ষণ নির্ভর (cd) হিসেবে বিবেচিত। প্রজাতিটিকে বাংলাদেশে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি এবং প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে যথাস্থানের বাইরে সংরক্ষণ প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র:
১. এম আহসান হাবীব, (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৬৬-৩৬৭। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।