রুদ্রাক্ষ হচ্ছে এশিয়ার জনপ্রিয় ও ঔষধি উদ্ভিদ

পরিচিতি: রুদ্রাক্ষ এলিওকারপাসি (Elaeocarpaceae) ফ্যামিলিভুক্ত, সমগ্র পৃথিবীতে এর ৯০টি প্রজাতি (species) আছে; তার মধ্যে ভারতবর্ষে ১৯টি বর্তমান। গাছটি দেখতে অনেকটা আমাদের দেশের মাঝারি ধরণের বকুল (Mimusops elengi) গাছের সঙ্গে সাদশ্য আছে। তার গুচ্ছবদ্ধ ফল আকারে ও বিন্যাসে পিটলি গাছের (Trewia nudiHora) মতো।

ফলের শাস টক, এই শাস মৃগী রোগে উপকারী। নেপালে এটির আচার তৈরী করে খাওয়ার রেওয়াজ আছে। এর বীজগুলি সাধারণত ৫টি কোষ (কোয়া) একীভূত অবস্থায় থাকে, প্রতি দুটি কোষের মাঝখানে একটি রেখা বর্তমান, এই রকম ৫টি রেখা রুদ্রাক্ষকে ‘পঞ্চমুখী’ বলা হয়, এইটি হচ্ছে স্বাভাবিক। এ ভিন্ন বীজের গঠনের অস্বাভাবিকতার জন্যে এক থেকে চৌদ্দ পর্যন্ত রেখাযুক্ত রুদ্রাক্ষও পাওয়া যায়, তবে তার দামও অস্বাভাবিক।

এটা প্রধানভাবে জন্মে নেপাল, আসাম ও দক্ষিণ কঙ্কনঘাট অঞ্চলে, অন্যান্য স্থানেও কখনও কখনও দেখা যায়, তবে রোপণের প্রয়োজন হয়। এটির বোটানিক্যাল নাম Elaeocarpus ganitrus Roxb., (এলিওকারপাস, গ্যানিট্রাস)। আর একটি জাতির রুদ্রাক্ষ জাভা থেকে আসে, ওখানকার সোরাবায়া, কাবুমেন, সোলো, সামারন ও কাডোরীর পাহাড়িয়া অঞ্চল থেকে সংগৃহীত হয়; এই জাতীয় বীজগুলি ছোট, উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের মতে এটির নাম Elaeocarpus tuberculatus. নকল রুদ্রাক্ষও বাজারে বিক্রি হয়।

রুদ্রাক্ষের ঔষধি ব্যবহার

১.  সংক্রামক রোগ বিশেষত: বসন্তরোগ প্রতিষেধক বলে বহু, লোক ধারণ করেন। রাজস্থানের বৈদ্য সম্প্রদায় এই রোগে রুদ্রাক্ষ ঘষে গায়ে লাগাতে দিয়ে থাকেন।

২. শ্লেষ্মার আধিক্যে: যে সব রোগ সৃষ্টি হয়, কোনো কোনো প্রদেশে এটি ঘরে খাওয়ানো হয়।

৩. টি, বি, রোগের (ক্ষয়রোগ): প্রথমাবস্থায় তুলসীমঞ্জরীর সঙ্গে রুদ্রাক্ষ ঘষে (চন্দনের মতো) খাওয়ালে চমৎকার ফল হয়।

৪.  আর একটি বিশিষ্ট শক্তি হচ্ছে, রোগীর নাড়ী কালো হয়ে আসতে থাকলে হৃদযন্ত্রকে সক্রিয় রাখার জন্যে গ্রামবাংলার প্রাচীন বৈদ্যকুলের ‘কোরামিন’ ছিল, রুদ্রাক্ষ ঘষা ও মধু দিয়ে মকরধ্বজ খাওয়ানো।

আরো পড়ুন:  তরমুজ ও বীজের সাতটি ভেষজ গুণাগুণ ও উপকারিতা

রাসায়নিক গঠন:

(a) Vitamin viz., vitamin-C. (b) Acid viz, citric acid. (c) Traces of fixed oil. (d) Alkaloids viz., elaeocarpidine, (+), elaeocarpiline, (-)isoelaeocarpiline(±), elaeocarpine(±), isoelaeocarpine, (+) isoelaeocarpicine,

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ 

১ আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি‘ খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ৮৬-৮৭।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Forestowlet

Leave a Comment

error: Content is protected !!