ভূমিকা: শ্বেত বট (বৈজ্ঞানিক নাম: Ficus curtipes) ফিকাস গণের মরাসিয়া পরিবারের গুল্ম। এই প্রজাতিটি পাহাড়ি জায়গায় অযত্নে জন্মে। এটি অনেক ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
শ্বেত বট-এর বর্ণনা:
শ্বেত বট বৃক্ষ, ২০ মিটার পর্যন্ত উঁচু, তরুন অবস্থায় পরাশ্রয়ী, বাকল ফ্যাকাশে ধূসরাভ, মসৃণ, শাখাসমূহ শুষ্ক অবস্থায় বাদামী থেকে হলুদাভ। পল্লব কোণীয়, মসৃণ অথবা কিছুটা রোমশ। পাতা সর্পিলাকারে সজ্জিত, অণুপর্ণী, উপপত্র ১-২ সেমি লম্বা, ভল্লাকার থেকে ডিম্বাকার-ভল্লাকার, আশুপাতী, ফলক বৃন্তক, বৃন্ত ১-২ সেমি লম্বা, পত্রফলক সরু উপবৃত্তাকার থেকে ডিম্বাকার-উপবৃত্তাকার, ১২-১৮ x ৫-৬ সেমি, অক্ষাভিগপৃষ্ঠ গাঢ় সবুজ, শীর্ষ গোলাকৃতি, নিম্নপ্রান্ত কীলকাকার, কিনারা অখন্ড, পার্শ্বশিরা ১০-১৩ জোড়া, পাদদেশীয় জোড়া সুস্পষ্ট, অশাখ, তৃতীয়ক শিরাবিন্যাস পার্শ্বশিরার সমান্তরাল, মধ্যশিরার গোড়ায় মোমতুল্য গ্রন্থি বিদ্যমান।
ফিগ কাক্ষিক, পত্রবহুল উপশাখায়, জোড়বদ্ধ, অবৃন্তক, পরিণত অবস্থায় গাঢ় লাল থেকে বেগুনি লাল, পাদদেশীয় মঞ্জরীপত্র ৩টি, প্রায় সমান আকৃতির, ২-৪ মিমি লম্বা, অর্ধবৃত্তাকার থেকে স্থুল ডিম্বাকার, শীর্ষ গোলাকার, মসৃণ অথবা কিঞ্চিৎ অণুরোমশ, স্থায়ী, পুষ্পধার উপগোলকাকার, শুষ্ক অবস্থায় ০.৭-১.২ সেমি ব্যাসবিশিষ্ট, মসৃণ, পরিণত অবস্থায় কমলা বর্ণ।
পুং, গল এবং স্ত্রী পুষ্প একই ফিগে বর্তমান। পুং পুষ্প বৃন্তক, বৃতির খন্ড ৩টি, ভল্লাকার, পুংকেশর ১টি। গল পুষ্প অবৃন্তক অথবা খর্বাকার। বৃন্তবিশিষ্ট, বৃতির খন্ডক ৪টি, গর্ভাশয় সাদা, গর্ভদন্ড উপপার্শ্বীয়, লম্বা। স্ত্রী পুষ্প অবৃন্তক, গর্ভাশয় লালচে, গর্ভদন্ড শীর্ষক, স্থায়ী, গর্ভমুণ্ড চুঙ্গি আকার। ফল অ্যাকিন, নিরেট ডিম্বাকার, আঠালো পৃষ্ঠীয় আবরণবিশিষ্ট, গুটিকাকার।
আবাসস্থল ও চাষাবাদ: অরণ্য, চুনা পাথরের পাহাড় এবং গ্রামের আশেপাশে। ফুল ও ফল ধারণ সময়কাল অক্টোবর-জানুয়ারী মাস।
শ্বেত বট বিস্তৃতি:
ভুটান, ক্যাম্বোডিয়া, চীন, ভারত, লাওস, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, নেপাল, নিউগিনি, উত্তর অষ্ট্রেলিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম। বাংলাদেশে এই প্রজাতিটি চট্টগ্রাম এবং সিলেট জেলায় পাওয়া গেছে (Hooker, 1888; Kanjilal et al., 1940). এই উদ্ভিদটি একটি শোভাবর্ধক বৃক্ষ হিসেবে রোপন করা হয়।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৯ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) শ্বেত বট প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে এই প্রজাতির সংখ্যা কমে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশে এটি সংকটাপন্ন হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে শ্বেত বট সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটি পুনরায় খুঁজে বের করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই প্রজাতিটির আবাসস্থল সংরক্ষণ করতে হবে এবং স্ব-স্থানে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
তথ্যসূত্র ও টীকা:
১. এম অলিউর রহমান (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৯ম, পৃষ্ঠা ২১১-২১২। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি flowersofindia.net থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Thingnam Girija
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।
পথতরু হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে।