পরিচিতি: জগডুমুর মোরাসি বা তুঁত পরিবারের ফাইকাস গণের উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের বৃক্ষ। বট পরিবারের উদ্ভিদ। এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার উদ্ভিদ। এটির ফল রান্না করে এবং পাকার পরে খাওয়া যায়। দেশি রেসাস বানরের এটি প্রধান খাবার। অনেক পাখি স্তন্যপায়ী ও প্রাণীর পছন্দের খাবার। ডুমুর পৃথিবীর প্রাচীনতম ফলগুলোর মধ্যে একটি। জগডুমুর শাখা-প্রশাখাময় বিশালাকার বৃক্ষ। পাতা বড়, ডিম্বাকৃতির ও অমসৃণ। এদের বাকল পুরু। বসন্তের শুরুতে ফুল আসে। গ্রীষ্মের মাঝামাঝি থেকে ফল পাকতে থাকে। কাঁচা ফল সবুজ, পাকলে টুকটুকে লাল।
বিভিন্ন ধরনের ডুমুর আছে। সব ধরনের ডুমুরের ফল হচ্ছে আসলে পুষ্পাধার, অর্থাৎ ফুলের ধারক। ফুলের এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে ডুমুরের একটি নাম ‘আন্তপুষ্প’। ফলের ভেতর অনেক সময় পিঁপড়ে বা ক্ষুদ্র কীটপতঙ্গ ঢুকে পড়ে দিব্বি বাসা বানায়। এ জন্য ডুমুরের অন্য এক নাম ‘জন্তুফল’।[১]
বিস্তৃতি:
বাংলা দেশের রাজশাহী অঞ্চল, বিশেষত চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি, সিলেটের মৌলভীবাজার ও টাঙ্গাইলে ডুমুর তুলনামূলক বেশি জন্মে। বাংলাদেশের অন্যত্রও বিক্ষিপ্তভাবে ডুমুরের গাছ দেখা যায়[১]
ব্যবহার:
ডুমুরের কাঁচা ফল অতি উন্নত সবজি। শুধু ডুমুর বা অন্যান্য সবজির সঙ্গে মিলিয়ে ডুমুরভাজি অথবা এর ভর্তা উপাদেয়। এ ছাড়া ছোট মাছের সঙ্গে ডুমুরের ঝোলও রাঁধা হয়। তবে ডুমুর সহজলভ্য নয় বলেই হয়তো তেমন জনপ্রিয় নয়। পাকা ফল অল্প মিষ্টি। এছাড়াও জগডুমুরের আছে অনেক ভেষজ গুণ। ভেষজ গুনাগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন
জগডুমুরের ঔষধি ব্যবহার
এছাড়া আরেক ধরনের ডুমুর বাংলাদেশে পাওয়া যায় যার স্থানীয় চাকমা ভাষায় নাম ‘চোরবেকগুলো’। ফল দেখতে অনেকটা ডুমুর ফলের মত, তবে পাতার মধ্যে বৈসাদৃশ্য রয়েছে। ডুমুর ফল গাছের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ধরে কিন্তু এই ফল শুধুমাত্র গোড়াতেই ধরে। গাছের গোড়ার দিকে লতার মত কিছু শিকড় বের হয় এবং এই শিকড়গুলিতেই থোকায় থোকায় ধরে এই ফল। কাঁচা অবস্থায় হালকা সবুজ, কিন্তু পাকলে লাল রঙ ধারণ করে। পাকলে ফলটি বাকল সুদ্ধ খাওয়া যায় এবং খেতে খুবই মিষ্টি। যজ্ঞডুমুর সারাদেশে দেখা যায় কিন্তু চোরবেকগুলো শুধু পাহাড়ি অঞ্চলে দেখা যায়।
তথ্যসূত্র:
১. আশীষ-উর-রহমান, “ডুমুর ফলের ভেতরই যার ফুল” ২২ মে ২০১০, দৈনিক প্রথম আলো, ঢাকা, সম্পাদক ও প্রকাশক: মতিউর রহমান, ইউআরএল: http://archive.prothom-alo.com/detail/news/65149.
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।