ভূমিকা: প্যারাবোহা (বৈজ্ঞানিক নাম: Ficus sinuata) ফিকাস গণের মরাসিয়া পরিবারের গুল্ম। এই প্রজাতিটি অরণ্যে অযত্নে জন্মে। এটি অনেক ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
প্যারাবোহা-এর বর্ণনা:
এটি গুল্ম অথবা ছোট আকারের বৃক্ষ। এটি ৬ মিটার পর্যন্ত উঁচু, প্রায়শই অর্ধপরাশ্রয়ী, শাখা-প্রশাখাসমূহ ঝুলন্ত, উপশাখাসমূহ শুষ্ক অবস্থায় বাদামী থেকে হলুদাভ। পল্লব মসৃণ বা কিছুটা অণুখররোমাবৃত, সমতল অথবা কিঞ্চিৎ কর্কশ। পাতা দ্বিসারি, অণুপর্ণী, উপপত্র ০.৩-০.৮ সেমি লম্বা, মসৃণ, আশুপাতী, ফলক বৃন্তক, বৃন্ত ০.৩-১.৫ সেমি লম্বা, বিক্ষিপ্তভাবে কিছুটা খররোমাবৃত, ফলক দীর্ঘায়ত, উপবৃত্তাকার থেকে উপবিডিম্বাকার বা ভল্লাকার, ৪.০-১৬.৫ x ১.৫-৮.০ সেমি, চর্মবৎ, শীর্ষ আকস্মিক দীর্ঘাগ্র থেকে প্রায় পুচ্ছাকৃতি, নিম্নপ্রান্ত কমবেশী অসম থেকে প্রায় সমাকৃতির, কীলকাকার থেকে জুলা, কিনারার উপরের দিকটা প্রায়শই স্থুল সভঙ্গ-দন্তর কিন্তু নিচের দিকে স্থূল খন্ডিত বা অখন্ড, উপরের পৃষ্ঠ মসৃণ, নিম্নপৃষ্ঠ বিক্ষিপ্তভাবে খররোমাবৃত থেকে অধর্মসৃণ, পার্শ্বশিরা ৬-১৭ জোড়া, মূলীয় জোড়া অন্যান্য পার্শ্বশিরা থেকে কিছুটা আলাদা, অশাখ, তৃতীয় শিরাবিন্যাস পাতলা সোপানাকার বা জালিকাকার, পার্শ্বশিরার কক্ষে মোমতুল্য গ্রন্থি বর্তমান।
ফিগ কাক্ষিক, একক অথবা জোড়বদ্ধ, অথবা দলপুটে গুচ্ছবদ্ধ, বৃন্ত ০.২-০.৫ সেমি লম্বা, মঞ্জরীপত্র ২টি বা ৩টি, বিক্ষিপ্ত, ২টি বিপরীত অথবা ৩টি একটি আবর্তে, ১ মিমি (প্রায়) লম্বা, পুষ্পধার শুষ্ক অবস্থায় ৩-৮ মিমি ব্যাসবিশিষ্ট, উপগোলকাকার থেকে উপবৃত্তীয়, বিক্ষিপ্তভাবে অণুখররোমাবৃত, কর্কশ, প্রায়শই কয়েকটি পার্শ্ব মঞ্জরীপত্রবিশিষ্ট, পরিণত অবস্থায় কমলা থেকে লাল। পুং পুষ্পের বৃত্যংশ ৩টি, পরাগধানী পুংদন্ডের সমান লম্বা। গল পুষ্পের বৃতি ৩-খন্ডিত, গর্ভাশয় মসৃণ, গোলকাকার, গর্ভদন্ড পার্শ্বীয়, খর্বাকার। স্ত্রী পুষ্প: যুক্ত পুষ্পপুটবিশিষ্ট, বৃতি ২-৩টি অংশে বিভক্ত, গর্ভদন্ড পার্শ্বীয়, গর্ভমুণ্ড বেলনাকার। ফল অ্যাকিন, নিরেট ডিম্বাকার।
আবাসস্থল ও চাষাবাদ: এই প্রজাতিটি অরণ্যে জন্মে। ফুল ও ফল ধারণ সময়কাল জানুয়ারী থেকে এপ্রিল মাস। বীজ থেকে নতুন চারা জন্মে।
বিস্তৃতি:
ভারত থেকে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। বাংলাদেশে এই প্রজাতিটি চট্টগ্রাম জেলা থেকে বর্ণিত হয়েছে (Hooker, 1888). এর কাঠ ভালো জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৯ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) প্যারাবোহা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে এই প্রজাতির সংখ্যা কমে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশে এটি সংকটাপন্ন হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে প্যারাবোহা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটি পুনরায় খুঁজে পেতে পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান প্রয়োজন। প্রকৃতিতে প্রজাতিটি কোথায় বিরাজ করত তা জানার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী। আবাসস্থল রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি ইহাকে স্ব-স্থানে এবং স্ব-স্থানের বাইরে সংরক্ষন করা প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র ও টীকা:
১. এম অলিউর রহমান (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৯ম, পৃষ্ঠা ২৩৯-২৪০। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: B.traeger
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।