বসন্ত মঞ্জরী বা গ্লিরিসিডিয়া বাগান ও রাস্তার ধারে শোভাবর্ধক উদ্ভিদ

ভূমিকা গ্লিরিসিডিয়া, বসন্ত মঞ্জরী (বৈজ্ঞানিক নাম: Gliricidia sepium, ইংরেজি নাম: Madre de Cacao, Mexican Lilac, Nicaraguan Coffee Shade) হচ্ছে ফেবাসি পরিবারের গ্লিরিসিডিয়া  গণের বৃক্ষ। এটি ছোট থেকে মাঝারি আকারের দ্রুতবর্ধনশীল পত্রহরিৎ বৃক্ষ। এই প্রজাতিটি বিদেশ থেকে আমাদের দেশে এসেছে। অনেকে প্রতিষ্ঠানে বা গৃহের শোভাবর্ধনের জন্য লাগিয়ে থাকে।[১] 

বৈজ্ঞানিক নাম: Gliricidia sepium (Jacq.) Kunth ex Walp., Repert. 1: 679 (1842). সমনাম: Robinia sepium Jacq. (1760), Gliricidia maculata H. B. & K. (1824). ইংরেজি নাম : Madre de Cacao, Mexican Lilac, Nicaraguan Coffee Shade. স্থানীয় নাম: গ্লিরিসিডিয়া, বসন্ত মঞ্জরী। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Eudicots. বর্গ: Fabales. পরিবার: Fabaceae. গণ: Gliricidia. প্রজাতি: Gliricidia sepium.    

বসন্ত মঞ্জরী গাছে বর্ণনা:

বসন্ত মঞ্জরী ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি আকৃতির বৃক্ষ। আনুমানিক ৭.৫ থকে ১০.০ মিটার উঁচু হয় এবং চূড়া অসমভাবে ছড়ানো থাকে। এদের বাকল ধূসর অথবা হালকা ধূসর রঙের ও মসৃণ অথবা অল্প বিদীর্ণ। এছাড়া বায়ুরন্ধযুক্ত থাকে, কচি কাণ্ড মাঝে মাঝে রোমশযুক্ত থাকে।

পত্র সচূড় পক্ষল, ১৫-২৫ সেমি লম্বা, পত্র অক্ষ মসৃণ অথবা রোমশ। পত্ৰক ৭ থেকে ১৭টি থাকে। আকারে ৪-৭ × ২-৩ সেমি, আয়তাকার অথবা উপবৃত্তাকার-আয়তাকার, প্রায়ই তির্যক, শীর্ষ ভোতাভাবে সূক্ষ্মা, গোড়ায় কমবেশী গোলাকার, উপরিভাগ মসৃণ, নিচের পৃষ্ঠে শিরার উপরিভাগ সূক্ষ্মভাবে রোমশ।

পুষ্পমঞ্জরী সরল রেসিম, পুরানো ডালপালার উপর ৫-১৫ সেমি লম্বা। পুষ্প উজ্জ্বল, পুষ্পবৃন্তিকা ০.৮-১.২ সেমি লম্বা। বৃতি ঘণ্টাকার, ৪.৫-৬.০ মিমি লম্বা, কর্তিতা, মসৃণ, ধ্বজকীয় পাপড়ি প্রায় ২ × ২ সেমি, শীর্ষে দ্বিখণ্ডিত, পক্ষদল প্রায় ২০ × ৪ মিমি, গাঢ় ফ্যাকাশে লাল, তরীদল প্রায় ১.৭ × ৪.০ মিমি।

পুংকেশর দ্বিগুচ্ছীয়, ৯+১। বসন্ত মঞ্জরীর ফল শিমের মতো খোসে থাকে। ফলের দৈর্ঘ্য ৭ থেকে ১৫ ও প্রস্থ ১.৫ থেকে ১.৭ সেমি। ফলের বৈশিষ্ট্য হলও রেখাকার-আয়তাকার, দণ্ড প্রায় ৭ মিমি লম্বা, চর্মবৎ, ভেতরের দিক অবিভেদপটযুক্ত, বিদারী। বীজ গাঢ় রক্তবেগুনি থেকে বাদামি রঙের। বাইরের ত্বক রেখা বরাবর গোলাকার। প্রায় ১০ × ৯ মিমি, অত্যন্ত চাপা।[২]

ক্রোমোসোম সংখ্যা:

২n = ২০ (Atchison, 1951); Sn = = (Rao, 1972)

বসন্ত মঞ্জরী গাছের বংশ বিস্তার ও চাষাবাদ:

বীজ ও কাণ্ডের শাখা কলম দ্বারা নতুন চারা তৈরি করা হয়। ফুল ও ফল ধারণ জানুয়ারি-মে।  সমতল ভূমিতে এই উদ্ভিদ ভালো জন্মে। তবে এই গাছ দ্রুতবর্ধনশীন।  শীতে পাতা ঝরে যায়; তবে বসন্তের শুরুতে নিষ্পত্র গাছে, থোকায় থোকায় হালকা বেগুনি বা গোলাপী রঙের ছোট ছোট ফুল ফোটে।[৩] 

বিস্তৃতি:

দক্ষিণ আমেরিকার দেশীয়, ভারত, ভুটান, মায়ানমার, পাকিস্তান ও শ্রীলংকাতে বিস্তৃত। বাংলাদেশের সর্বত্র ইহা লাগানো হয়।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও ক্ষতির দিক:

বাগান ও রাস্তার ধারে শোভাবর্ধক উদ্ভিদ হিসেবে রোপণ করা হয়। কাঠ জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই গাছ বেড়া বানানো, ছায়া প্রদানকারী, সবুজ সার ও পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মূল, বাকল ও বীজ বিষাক্ত। পাতা মানুষের জন্য বিষাক্ত যদিও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের কতিপয় এলাকায় তা খাওয়া হয়।

জাতিতাত্বিক ব্যবহার:

চট্টগ্রাম জেলায় ইহা বেড়া দেওয়ার জন্য প্রায়ই রোপন করা হয়।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০)  গ্লিরিসিডিয়া, বসন্ত মঞ্জরী প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে বসন্ত মঞ্জরী সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।[২]

তথ্যসূত্র:

১. শেখ সাদী, উদ্ভিদকোষ, দিব্যপ্রকাশ, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০০৮, পৃষ্ঠা, ১৩২, আইএসবিএন ৯৮৪-৪৮৩-৩১৯-১।

২. বি এম রিজিয়া খাতুন (আগস্ট ২০১০)। অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৯ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১০৫। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

৩. দ্বিজেন শর্মা লেখক; বাংলা একাডেমী ; ফুলগুলি যেন কথা; মে ১৯৮৮; পৃষ্ঠা- ২৩, আইএসবিএন ৯৮৪-০৭-৪৪১২-৭

আরো পড়ুন:  কলাবতী জলাশয়ের পাশে জন্মানো কন্দজাতীয় বিরুৎ

Leave a Comment

error: Content is protected !!