করম বা হলদু হচ্ছে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার পত্রঝরা সপুষ্পক বৃক্ষ

ভূমিকা: করম বা হলদু বা দাকরুম (বৈজ্ঞানিক নাম: Haldina cordifolia)  রুবিয়াসি  পরিবারের হালদিনা গণের পত্রমোচী সপুষ্পক বৃক্ষ। এটিই এই গণের একমাত্র বৃক্ষ। এই গাছ দক্ষিণ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় জন্মে। ঐতিহ্যগতভাবে ভাদই বা কারাম পূজার বেদিতে এই গাছ কাজে লাগে।

সমনাম: Nauclea cordifolia Roxb. (1795), Adina cordifolia Hook. f, ex Brandis (1874), Nauclea sterculiifolia A.Rich. ex DC.

ইংরেজি নাম: জানা নেই ,

স্থানীয় নাম: বল্কা, হল্দু, হরিদ্রা, দাকরুম, দাকুম, ধাকদম, কাইকা, কালাকদম, মালা, পেটপুরিয়া, রাংকাত, পীতপুরিয়া, হলদি কাঠ, লেক-ফুবাক (মগ), তরকচাপা (অসমীয়)

জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস

জগৎ/রাজ্য: Plantae; বিভাগ: Angiosperms; অবিন্যাসিত: Edicots; অবিন্যাসিত: Asterids; বর্গ: Gentianales ; পরিবার: Rubiaceae; গণ: Haldina; প্রজাতি: Haldina cordifolia ;

করম গাছের বিবরণ:

করম বৃহৎ পত্রঝরা বৃক্ষ, ৩৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। পত্র উপপত্রযুক্ত এবং বৃন্তক, উপপত্র গভীর খাঁজবিশিষ্ট, ৬-২০×৫-১০ মিমি, ঘন ক্ষুদ্র কোমল রোমশ, পত্রবৃন্ত ১২ সেমি পর্যন্ত লম্বা, ঘন রোমশ, পত্রফলক প্রশস্ত ডিম্বাকার, ৮-২২×৫-১৮ সেমি, উপরিভাগ হালকা রোমাবৃত, নিম্নভাগ ঘন রোমশ, শীর্ষ সামান্য সূক্ষ্মাগ্র, গোড়া হৃৎপিণ্ডাকার।

করমের পুষ্পবিন্যাস হেড, হলুদাভ, মঞ্জরিদণ্ড প্রায় ১০ সেমি লম্বা, আন্তঃপুস্পক মঞ্জরিপত্রিকা ২ মিমি লম্বা। হাইপ্যানথিয়াম ১-২ মিমি লম্বা, ঘন রোমশ। বৃতি ২ মিমি পর্যন্ত লম্বা, বৃত্যংশ গোড়ায় ডিম্বাকার। শির্ষীয় অংশ রেখাকার-আয়তাকার থেকে মুষলাকার। পাপড়ি ৭-৯ মিমি লম্বা, বহির্ভাগ ঘন রোমাবৃত, অভ্যন্তরে কোমল দীর্ঘ রোমশ, নল ৫-৬ মিমি লম্বা, খণ্ডক আয়তাকার, ২ মিমি পর্যন্ত লম্বা। গর্ভদণ্ড বহির্মুখী, ৫-৭ মিমি লম্বা, গর্ভমুণ্ড ডিম্বাকার থেকে অর্ধগোলাকার। ফল বহনকারী হেড ১০-১৫ মিমি চওড়া, ফল ধারণকারী শাখা ৪-৫ মিমি লম্বা, রোমশ। বীজ ডিম্বাকার, দ্বিপার্শ্বীয়ভাবে চ্যাপ্টা, গোড়া ক্ষুদ্র উপাঙ্গযুক্ত। এই উদ্ভিদের ক্রোমোসোম সংখ্যা জানা নেই।

আবাসস্থল ও চাষাবাদ: পত্রঝরা বনাঞ্চলে জন্মে। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে এপ্রিল থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে। বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার।

আরো পড়ুন:  শিল কড়ই বা মটর কড়ই এশিয়ায় জন্মানো অর্ধচিরহরিৎ ঔষধি বৃক্ষ

বিস্তৃতি: ভারত, শ্রীলংকা, দক্ষিণ চীন, ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডে জন্মে। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামে জন্মে থাকে।

অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: ঐতিহ্যগতভাবে ভাদই বা কারাম পূজার বেদিতে এই গাছ কাজে লাগে।

অন্যান্য তথ্য:বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১০ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) করম প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, প্রজাতিটির সংকটের কারণ আবাসস্থল ধ্বংস। বাংলাদেশে করম সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। বর্তমানে বাংলাদেশে এদের অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে এটি সংরক্ষণনির্ভর (cd). প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রজাতিটির অবস্থান জানা দরকার এবং ইন-সিটু এবং এক্স-সিটু উভয় পদ্ধতিতে সংরক্ষণ প্রয়ােজন।[১]

আলোকচিত্র: লেখায় ব্যবহৃত মূল চিত্রটি J.M.Garg-এর তোলা, অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তগিরি পাহাড় থেকে।

তথ্যসূত্র:

১. এম আতিকুর রহমান এবং এস সি দাস (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৬০-৬১। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

Leave a Comment

error: Content is protected !!