হরপুল্লি বাংলাদেশে পার্বত্যঞ্চলে জন্মানো বৃক্ষ

হরপুল্লি

বৈজ্ঞানিক নাম: Harpullia cupanioides Roxb., Fl. Ind. 2: 442 (1824). সমনাম: Harpullia rupestris Blume (1847), Harpullia confusa Blume (1847), Harpullia fraxinifolia Blume (1847), Harpullia fruticosa Blume (1847), Harpullia juglandifolia Blume var. multiflora Blume (1847), Harpullia thanatophora Blume (1847), Harpullia macrocalyx Radlk. (1914), Harpullia obscura Radlk. (1920). ইংরেজি নাম: জানা নেই। স্থানীয় নাম: জুরিবিসি, হারপুল্লি। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস 
জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Eudicots. বর্গ: Sapindales. পরিবার: Sapindaceae. গণ: Harpullia প্রজাতির নাম: Harpullia cupanioides

ভূমিকা: হরপুল্লি (বৈজ্ঞানিক নাম: Harpullia cupanioides) হচ্ছে সাপেন্ডেসিয়া পরিবারের হারপুলিয়া গণের এক প্রকারের বৃক্ষ। এই প্রজাতিটি দক্ষিণ এশিয়ায় জন্মায়।

হরপুল্লি-এর বর্ণনা:

হারপুল্লি প্রায় ৩০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পার বৃক্ষ প্রজাতি। এদের পাতা ৩-৬ জোড় পত্রক, পত্রবৃন্ত ২০ সেমি পর্যন্ত লম্বা, পত্রকবৃন্ত ৫-১০ মিমি লম্বা, রোমহীন, পত্রক ডিম্বাকার, উপবৃত্তাকার থেকে বিডিম্বাকার, ৫-২০ × ২-১০ সেমি, গোড়া প্রতিসম থেকে তির্যক, গোলাকার, শীর্ষ সূক্ষ্মাগ্র থেকে দীর্ঘাগ্র, রোমহীন বা মধ্যশিরার উপর খুবই হালকা রোমাবৃত, শিরা ১-৩ সেমি দূরে।

পুষ্পবিন্যাস কাক্ষিক, খাড়া বা ঝুলন্ত, একল, ৫-৫০ মা, সেমি লম্বা, রোমশ, হালকা থেকে ব্যাপক শাখান্বিত, অনেক পুষ্পক, মঞ্জুরীপত্র ছোট। পুষ্প সুগন্ধি। বৃত্যংশ উপবৃত্তাকার থেকে অর্ধ-বর্তুলাকার, ৩-৬ × ২-৪ মিমি, ফলে স্থায়ী, রোমশ। পাপড়ি আয়তাকার-বিডিম্বাকার থেকে বিবল্লমাকার, ৫-১০ × ২-৩ মিমি, সাদা থেকে ক্রীমসদৃশ, কদাচিৎ হলুদ, সবুজাভ বা গোলাপী, রোমহীন। চাকতি সম্পূর্ণ, মখমলীয়।

পুংকেশর ৫টি, কদাচিৎ ৬টি, পুংদন্ড ২- ভর ৩ মিমি লম্বা, সাদা, পরাগধানী হলুদ, ২-৩ মিমি লম্বা। গর্ভকেশর ২-প্রকোষ্ঠী, গর্ভাশয় হালকা সবুজ, হলুদ লালাভ-বাদামী, গর্ভদন্ড ২-৬ মিমি লম্বা, ডিম্বক প্রত্যেক প্রকোষ্ঠে ১টি।

ফল বৃক্ক-আকৃতির, প্রশস্ত ডিম্বাকার, বিডিম্বাকার, ১-২ × ১-৩ সেমি, গোড়া কর্তিতাগ্র, বৃন্ত ১-৩ মিমি লম্বা, শীর্ষ সূক্ষ্মাগ্র, প্রাচীর চর্মসদৃশ থেকে কাষ্ঠল, অভ্যন্তরে লাল, বহির্ভাগ মখমল রোমশ, বাদামী। বীজ চকচকে বাদামী থেকে কালো, গাঢ় চকচকে-লাল বীজোপাঙ্গযুক্ত।

আরো পড়ুন:  বাবলা ফেবাসি পরিবারের ভ্যাসেলিয়া গণের কাঁটাযুক্ত লাল ফুলের দ্রুত বর্ধনশীল বৃক্ষ

ক্রোমোসোম সংখ্যা: জানা নেই।

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:

বর্ষা-অরণ্য, ঢাল এবং পর্বত-শিখর, নদীর ধার এবং সমুদ্র সৈকত বরাবর, সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ ১২০০ মিটার উচ্চতায়। ফুল ও ফল ধারণ ফেব্রুয়ারি-অক্টোবর মাস। বীজ থেকে বংশ বিস্তার হয়।

হরপুল্লি -এর বিস্তৃতি :

দক্ষিণ চীন, ভারত (আসাম এবং আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ), মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দো-চীন, সমগ্র মালেশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চল। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বনে কদাচিৎ পাওয়া যায়।

ব্যবহার:

কাষ্ঠ ব্যবহৃত হয় আসবাবপত্র তৈরী, গৃহ নির্মাণ, কাঠ-কয়লা এবং জ্বালানি কাঠ হিসেবে (Benthall, 1984).

জাতিতাত্ত্বিক ব্যবহার:

মাছ বিষাক্তকরণ বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান (Chopra et al., 1996). স্থানীয় লোকজন বাকল পানির সাথে মিশ্রিত করে মাছ ধরতে ব্যবহার করে।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের  ১০ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) হারপুল্লি প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বন ধ্বংসের কারণে বাংলাদেশের এটি সংকটাপন্ন। বাংলাদেশে হারপুল্লি সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে ইন-সিটু এবং এক্স-সিটু উভয় পদ্ধতিতেই সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র:

১. এস নাসির উদ্দিন (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ১০ম, পৃষ্ঠা ২০৯-২১০। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি tropical.theferns.info থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: National and regional Governments of Papua New Guinea; and the State Government of New South Wales

Leave a Comment

error: Content is protected !!