ভূমিকা: বালম ক্ষীরা বা Kigelia africana হচ্ছে Kigelia গণের একমাত্র সপুষ্পক বৃক্ষ। হিন্দিতে এটিকে বলে বালম ক্ষীরা। শসার মতো ফল হয়। বাংলাদেশ সরকারের উচিৎ এই গাছটির সংরক্ষণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এটি দক্ষিণ আফ্রিকা, সেনেগাল, চাদ, ইরিত্রিয়া ও নামিবিয়ায় সহজলভ্য।
বর্ণনা: বালম ক্ষীরা বৃহৎ আকৃতির বিস্তৃত বৃক্ষ, প্রায় ৩০ মিটার উঁচু, কান্ড অমসৃণ, ধূসর বাদামী বর্ণের বাকল যুক্ত। পত্র ৩ টি করে আবর্তে, পক্ষল যৌগিক, সচূড় পক্ষল, প্রায় ৫০ সেমি লম্বা, অনুপপত্রী, পত্রক ৭-১৩ টি, উপবৃত্তাকার-দীর্ঘায়ত বা বিডিম্বাকার, প্রায় ২০ x ৭ সেমি, অখন্ড বা দূরস্থ দস্তুর। পুষ্পবিন্যাস লম্বা, শীর্ষীয়, বিলম্বী রেসিম। পুষ্প বৃহৎ, উভলিঙ্গ, সবৃন্তক, বৃন্ত ৮-১৮ সেমি লম্বা। বৃতি ৩.৫-৫.০ সেমি লম্বা, অনিয়মিত খন্ডিত, ঘন্টাকার। দলমন্ডল গাঢ় চকলেট লাল, চোঙ্গাকৃতি, ২-ওষ্ঠ বিশিষ্ট, উপরের ওষ্ঠ ২খন্ডিত, নিচের ওষ্ঠ ৩-খন্ডিত, ১০-১৪ সেমি লম্বা, দলমন্ডল সন্ধ্যায় উন্মুক্ত, দুর্গন্ধ যুক্ত, বাদুর কর্তৃক পরাগায়নকৃত। পুংকেশর ৪ টি, দলমন্ডলের মুখে সন্নিবেশিত, বহির্মুখী। গর্ভপত্র ২ টি, যুক্ত, গর্ভাশয় অধিগর্ভ, ১ কোষী, অমরাবিন্যাস গাত্রীয়। ফল বৃহদাকার বেরি, বেলুন আকৃতির, ঝুলন্ত, ৫০ x১৫ সেমি পর্যন্ত। বীজ অনেক, ফলের তন্তুময় মন্ডের মধ্যে নিহিত। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে মে থেকে ডিসেম্বর মাসে।[১] এদের ক্রোমােসােম সংখ্যা : 2n = ৪০ (Kumar and Subramaniam, 1986).
আবাসস্থল ও চাষাবাদ ও বিস্তৃতি: রাস্তার ধার এবং পার্ক, এসব স্থানে এদের রােপণ করা হয়। বিস্তৃতি ও আফ্রিকার উষ্ণাঞ্চলে (মােজাম্বিক) আদিনিবাস। এছাড়া ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে জন্মে। বংশ বিস্তার হয় বীজ দ্বারা। তাজা বীজের ভাল অঙ্কুরােদগম হয়। বাংলাদেশের রংপুর শহরে কারমাইকেল কলেজের নিকটবর্তী স্থানে কিছু বৃহদাকার বৃক্ষ দেখা যায়। আনুমানিক ১৯২০ সালে কেউ একজন কারমাইকেল কলেজে এই গাছটি রোপন করেছিলেন। বাংলাদেশের উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের উচিৎ কোন উন্নত উপায়ে এই গাছটির বংশবিস্তার ঘটানো৷ এই গাছ ভারতে প্রচুর আছে, কলকাতায়ও আছে।
অবস্থা: বালম ক্ষীরা যেহেতু বেশ কিছু দেশে যথেষ্ট পরিমাণে আছে এবং জন্মায়, সে কারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে বিপদমুক্ত (Least Concern LC) বলে ঘোষণা করেছে।[২]।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: ফলের ক্বাথ পায়ের শােথ ও ক্যান্সার রােগে উপকারী। ফল একটি রেচক পদার্থ। বাহ্যিকভাবে সিফিলিস ও বাতের পীড়ায় পুলটিসরূপে ব্যবহার করা হয়। পাতা ও বাকল আমাশয়ে, পাকস্থলী ও কিডনি রােগে ব্যবহার্য। মূলের তিক্ত বাকল ফিতাকৃমি বহিষ্কারে উপকারী। সার কাষ্ঠও খুব মূল্যবান। কান্ড থেকে সংগৃহীত বাকলের জলীয় নির্যাসে উপাদান রূপে ইরিডয়েড অধিক পরিমাণে উপস্থিত থাকে। পাতা ও ফল থেকে লিটিওলিন ও কোয়েরসেটিন সংগ্রহ করা হয়েছে। উদ্ভিদের নির্যাসে গুরুত্বপূর্ণ জীবানু প্রতিষেধক বৈশিষ্ট্য বর্তমান (Lemmens and Bunyapraphatsara, 2003)।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: আফ্রিকার উষ্ণাঞ্চলের আদিবাসীরা তাদের শাস্ত্রীয় আচারানুষ্ঠানে এই গাছটিকে শ্রদ্ধার সাথে ব্যবহার করে। গাছটির নির্যাস ক্যান্সার রােগ নিরাময়ের ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয়।
সংরক্ষণ ও অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) বালম ক্ষীরা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, প্রজাতিটির সংকটের কারণ হচ্ছে গাছ কাটার পর নতুন গাছ রােপণ করা হয় না; এছাড়া অন্য কোন বিপদের সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশে এটি সম্ভবত বিরল। বাংলাদেশে বালম ক্ষীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এর চারা উৎপাদন ও রােপণ করা হচ্ছে। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির ভেষজ গাছরূপে আরও ব্যাপক চাষাবাদ প্রয়ােজন। ।[১]
তথ্যসূত্র:
১. এম এ হাসান, (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৮-১৯। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
২. “Kigelia africana“, http://www.iucnredlist.org/details/61986013/0, The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।