পরিচিতি:
লিচু বা লেচু (বৈজ্ঞানিক নাম: Litchi chinensis, ইংরেজি নাম: Litchi) হচ্ছে সাপিন্ডাসি পরিবারের লিচি গণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি হলো বিশ্বের সবচেয়ে রোমান্টিক ফল। প্রায় ২০০০ বছর ধরে লিচু ফলটি এই মর্যাদা উপভোগ করে আসছে। লিছু গাছ একটি চিরসবুজ, মজবুত, বহুবর্ষী, বহু শাখাযুক্ত, মাঝারি থেকে বড় আকারের বৃক্ষ। লিচু একটি নিরক্ষীয় ও ক্রান্তীয় অঞ্চলের ফল । লিচু হলো সেপিন্ডাসিয়া পরিবারের লিচি গণের একমাত্র সদস্য।
আদিবাস: লিচুর আদি নিবাস চিন হলেও বর্তমানে এশিয়ার সব দেশ, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকায় চাষ হয়।
লিচু বা লেচু-এর বিবরণ:
লিচু হচ্ছে চিরহরিৎ, মধ্যম-আকৃতির বৃক্ষ, ৩৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু এবং ১ মিটার প্রশস্ত, শাখাপ্রশাখা ধূসর-বাদামী, বেলনাকার, মসৃণ বা লেন্টিসেলযুক্ত হয়। লিচুর পাতা ২-৪ জোড় পত্রক, পত্রবৃন্ত স্ফীত এবং গোড়ায় সামান্য ফাপা, ১-৭ সেমি লম্বা, রোমহীন, পত্রকবৃন্ত গোড়ায় সামান্য স্ফিত, উপরিভাগ খাঁজযুক্ত, পত্রক উপবৃত্তাকার বা বিডিম্বাকার, ৫১২ x ২-৬ সেমি, উপরিতল আঠালো, নিম্নল রোমহীন, গোড়া সমপার্শ্বীয় থেকে সামান্য তির্যক, সূক্ষ্মাগ্র থেকে সরু, প্রান্ত অখন্ডিত, সামান্য পশ্চাৎ বক্র, শীর্ষ সূক্ষ্মাগ্র থেকে দীঘাগ্র, মধ্যশিরার উপরিভাগ সরু খাঁজবিশিষ্ট।
লিচুর পুষ্পবিন্যাস ১৫-৩০ সেমি লম্বা যা স্বল্প সংখ্যক লম্বা খাড়া-ছড়ানো শাখাপ্রশাখা বিশিষ্ট, তামাটে-রোমশ। পুষ্প সবুজাভ বা হলুদাভ, সুগন্ধি। বৃতি ৪-অংশক, ১.৫-২.০ মিমি লম্বা। পাপড়ি অনুপস্থিত বা খুবই অস্পষ্ট। চাকতি পরিবর্তনীয় রোমশ বা রোমহীন। পুংকেশর ৬টি (১০), পুংদন্ড ২.৫ মিমি লম্বা, ঘনভাবে রোমশ, সূত্রাকার, পরাগধানী আয়তাকার, সূক্ষ্মায়। গর্ভকেশর ০.৫-১.০ মিমি লম্বা, বৃন্তক, গর্ভাশয় ঘন আঁচিলযুক্ত, গর্ভদন্ড বেলনাকার।
ফল গোলাকার বা ডিম্বাকার, রসালো, ৩.৫ x ৩.০ সেমি বা ফলের ব্যাস সাধারণত হয় ১-১.৫ ইঞ্চি। , পাকলে উজ্জ্বল লাল বা রক্ত-বেগুনি, আঁচিলযুক্ত বা প্রায় মসৃণ পরিবর্তীয়, এক-বীজী। বীজ উপবৃত্তীয়, ২.০ x ১.৫ সেমি, বহি:ত্বক চকচকে কালো বা গাঢ় বাদামী, ডিম্বক নাভী মূলীয়, গোলাকার, বীজোপাঙ্গ সাদা, হালকা হলুদ বা গোলাপী, তাজা অবস্থায় ৫ মিমি পর্যন্ত স্থূল। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে এপ্রিল থেকে জুন মাসে। ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২৮, ৩০ (Fedorov, 1969).
আবাসস্থল ও চাষাবাদ:
উর্বর, ঘন, আর্দ্র মৃত্তিকা, নিম্ন উচ্চতায়। বীজ দ্বারা এবং জোড় কলম দ্বারা চারা করা হয়। বাংলাদেশে এটি গ্রীষ্মকালীন ফল এবং এখানে ফেব্রুয়ারিতে এই ফলের মুকুল ধরে এবং ফল মে মাসের দিকে সাধারণত পেকে যায়। বাংলাদেশের প্রায় সকল স্থানেই লিচু গাছ জন্মায়, তবে উত্তরবঙ্গের রাজশাহী ও দিনাজপুর অঞ্চলে লিচুর ভাল ফলন হয়। এই এলাকার মঙ্গলবাড়িয়া লিচুর বড় আকার ও সুন্দর স্বাদের জন্য বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
লিচু বা লেচু-এর বিস্তৃতি:
সম্ভবত ইন্দো চাইনিজ পেনিনসুলার উত্তরাংশে বা দক্ষিণ-পূর্ব চীনে উদ্ভুত, বর্তমানে অর্ধউষ্ণমন্ডলীয় এলাকায় ব্যাপক আবাদী। বাংলাদেশের সর্বত্র ব্যাপকভাবে আবাদী।
লিচুর অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: ফলের রসালো অংশ খাওয়া হয়, বিভিন্ন পানীয়, জেলী এবং আচার তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। এর কাঠ টেকসই এবং একারণে উচ্চ মূল্যবান (Benthall, 1984).
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১০ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) লিচু প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে লিচু সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে এটি সংরক্ষণের তেমন প্রযোজন নেই।[১]
তথ্যসূত্র:
১. এস নাসির উদ্দিন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ২১৫-২১৬। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।