বেল হচ্ছে Rutaceae পরিবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল। বর্তমানে এর বৈজ্ঞানিক নাম Aegle marmelos. এদের অন্য একটি নাম হল ‘সদাফল’। আপনারা অনেকেই দেখে থাকবেন, কোনো কোনো গাছে সব বেল না পড়তে, আবার নতুন কচিপাতা ও ফুল হয়ে আবার ফলবান হচ্ছে। এইজন্যেই তাকে ‘সদাফল’ বলা হয়েছে। এইসব নামকরণই ছিল প্রাচীন। রোগ প্রতিকারে বেল গাছের কাজে লাগে এর মূলের ছাল, পাতা, ফুল ও কচি ফলের শাঁস। নিম্নে বেলের অনেকগুলো ঔষধি গুণাগুণ বা লোকায়তিক ব্যবহার বর্ণনা করা হলো। বেল গাছ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন
১. পাতা: মেদস্বী যাঁরা, যাঁদের গায়ের ঘামে দুর্গন্ধ হয়, তাঁরা বেল পাতার রস জলে মিশিয়ে সেই জলে শরীরটা মুছলে, তার দ্বারা ঐ দোষটি নষ্ট হয়। তবে বেলপাতা আগুনে সেকে নিয়ে ঢেকে রেখে থেতো করলেই রস বেরোয়।
২. সর্দির প্রবণতায়: পাতার রস ১ চামচ বা ৬o ফোঁটা আন্দাজ খেলে কাঁচা সন্দি ও তার সঙ্গে জ্বর বা জ্বরভাব সেরে যায়; তবে বালকের ক্ষেত্রে এর মাত্রা বয়সানুপাতে হবে। এটি ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে খুব প্রচলিত।
৩. শর্করা রোগে: ৪ থেকে ৫টি বেলপাতার রস একটু মধু মিশিয়ে খেতে দেওয়া পশ্চিমাঞ্চলের দেহাতী বৈদ্যদের একটি সাধারণ ব্যবস্থা।
৪. যৌবনের উদ্দীপনা রোধে: সহজাত প্রবৃত্তির প্রশমনের জন্য ব্রহ্মচারীদের ১৬ বৎসর বয়স হলে কিছুদিন পাঁচটি করে বেলপাতার রস খেতে হয়। এটি দীর্ঘদিনের ব্যবহারে শুক্রের সুষুপ্তিও হয়। এটার যথাযথ সমীক্ষার প্রয়োজন আছে।
৫. শোথে: হাত পা ব্যাঙের মত ফুলে গিয়েছে, সেক্ষেত্রে বেলপাতার রস ও মধু দিয়ে ঔষধ করে খেতে হবে।
৬. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে: বারো বছরের বাচ্চা পড়াশুনো করেও মনে রাখতে পারে না। সেক্ষেত্রে তিনটি বেলপাতা ঘিয়ে মুড়মুড়ে করে ভেজে অল্প মিছরির গুড়ো মিশিয়ে ছেলেটিকে খেতে হবে।
৭. আন্ত্রিক ক্ষত: দীর্ঘদিন যারা আন্ত্রিক ক্ষতে ভুগছেন তাঁরা কচি বেলের শুকনো টুকরো ৭ থেকে ৮ গ্রাম শঠী বা বার্লি দিয়ে একসঙ্গে রান্না বা সিদ্ধ করে,পরে ওটাকে ছেঁকে সেই বার্লি বা শঠী খেতে হবে।
৮. পুরান আমাশয়: বেলশুঠকে অর্থাৎ কাঁচ বেলের চাকা করে কেটে রৌদ্রে শুকিয় নিলেই তা বেলশুঠ হয়; তারপরে সেটা পাউরুটির মতো সেকে গুঁড়ে করে আধ বা এক চা চামচ মাত্রায় সদ্যপাতা সাদা দই এর ঘোলে মিশিয়ে খেতে হবে; তাহলে পুরান আমাশয় সেরে যাবে। তবে একথা ঠিক তরকারীতে মসলা কম না খেলে আমাশা সারে না। আর একটা কথা যদি এর সঙ্গে রক্ত থাকে, তাহলে বন্ধ বৈদ্যেরা মুথোর (Cyperus rotundus) রস মিশিয়ে খেতে উপদেশ দিয়ে থাকেন।
৯. রক্তর্শে: কাঁচা বেলপোড়ার শাঁস বাড়িতে পাতা সাদা দইয়ের ঘোলে মিশিয়ে খেলে খুব উপকার হয়।
১০. হৃদপিণ্ডের দুর্বলতায়: বেলের মূলের ছাল চূর্ণ ৬ থেকে ১২ গ্রাম মাত্রায় অবস্থাভেদে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে ওটা দূর হয়, অধিকন্তু এটিতে অনিদ্রা ও ঔদাসীন্যভাবও কেটে যায়।
১১. শুক্র তারল্যে: বেলের মূলের ছাল ১২ থেকে ১৪ গ্রেণ ও জিরা ৬ গ্রেণ মাত্রায় একসঙ্গে বেঁটে গাওয়া ঘিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে প্রভূত উপকার পাওয়া যায়।
বেলের ছাল ও ফুলের ব্যবহার:
১২. বেলের ফুল: বেল গাছের ফুলে ২ গ্রাম আন্দাজ মাত্রায় বেটে ওর সঙ্গে গোলমরিচের গুড়ো ২৫o মিলিগ্রাম মিশিয়ে খেলে পিপাসা, বমি ও অতিসার প্রশমিত হবে।
১৩. মূলের ছাল: ৩ থেকে ৪ গ্রাম মাত্রায় বা আন্দাজ ৪ থেকে ৫ আনা ওজন। গরম জলে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা ভিজিয়ে ছেঁকে তার সঙ্গে একটু বার্লি বা খই এর মন্ড ও অল্প চিনি মিশিয়ে খাওয়ালে শিশুদের বমি ও অতিসার বন্ধ হবে।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ১০৯-১১০।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।