শ্যাওড়া গাছের বা শেওড়া বা শাহাড়া বৈজ্ঞানিক নাম: Streblus asper. হচ্ছে মোরাসি পরিবারের স্ট্রেবলাস গণের একটি সপুষ্পক চিরসবুজ উদ্ভিদ। চলতি কথায় আমরা একে শাঁড়া গাছ বলে থাকি। এই গাছ আকারে ছোট ঝোপ জাতীয় ঘন পত্রপল্লব বিশিষ্ট চিরসবুজ গাছ। পাতা ডিম্বাকার, খসখসে ও গাঢ় সবুজ। এর ফল হলুদ। সারাদেশে এই গাছ দেখতে পাওয়া যায়। শ্যাওড়া গাছের ও মূলের ছাল, পাতা ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এই গাছ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করে পড়ুন
ব্যবহারিক ক্ষেত্র
১. উর্ধ্বগত রক্তপিত্তে: শেওড়া ছালের রসে পাক্ক ঘৃত আয়ুর্বেদিক পদ্ধতিতে প্রস্তুত করে আধ চা চামচ মাত্রায় সকালে ও বিকালে দুইবার খেতে হয়। এর দ্বারা ওটা সমস্যাটা সেরে যাবে।
২. অর্শ রোগ: অন্তর্বলি ও বহির্বলি যাই থাক না কেনো, শেওড়া ছালের রস ৩০ ফোঁটা মাত্রায় আধা কাপ দুধের সঙ্গে সকালে ও বিকালে দুইবার খেলে প্রথমে অর্শের রক্তপড়া বেড়ে যাবে, তারপর ঐ রসে প্যাক করা ঘি এক চা চামচ করে দুধের সঙ্গে খেলে ওটা সেরে যাবে; তবে প্রথমে একটু না বৃদ্ধি হলে অর্শের বলি চুপসে যাবে না, তাই প্রথমে রস করে খাওয়ার ব্যবস্থা করে দ্রব্যশক্তিতে একটু বাড়িয়ে নেওয়া।
৩. অতিসারে: এ অতিসার পিত্তবিকারের নয়, শেষ্মাবিকার এই অতিসারের লক্ষণ হলো থোকো থোকো আম বা চাল ধোওয়া জলের মতো অসাড়ে দাস্ত অথবা পচা মাংস ধোয়া জলের মতো মল নিঃসরণ হতে থাকলে সেক্ষেত্রে শেওড়া ছালের রস ২০ বা ৩০ ফোঁটা একদিন বা দুইদিন বার্লির সঙ্গে খেলে ওটা সেরে যাবে।
৪. কোষ্ঠবদ্ধতা: এটা যাঁদের সাময়িক নয়, প্রত্যহই ঐ অসুবিধাটায় ভুগে থাকেন, তাঁরা শেওড়া পাতা অথবা মূলের ছালের রস দিয়ে ঘি পাক করতে হবে;ঐ ঘিটি প্রত্যহ সকালে আধা বা এক চা চামচ করে একটু গরম দুধের সঙ্গে কিছুদিন খেয়ে দেখান ঐ কোষ্ঠবদ্ধতা ধাতটা বদলে যাবে।
৫. হাঁপানি ও কাসি: সকালে উঠলেই অচল। এটাতে যদিও সারবে না, তবু উপশম তো হবে আধা চা চামচ ঘিয়ের সঙ্গে ২ থেকে ৪ ফোঁটা শেওড়া ছালের রস মিশিয়ে খেতে হবে; এটাতে কিছুক্ষণ ভাল থাকবে; তবে আর একটু বেশি সময় ভাল থাকতে হলে চিরতার গুঁড়ো (Swertia chirata) সিকি বা আধ গ্রাম এর সঙ্গে মিশিয়ে চেটে খেলে ভালো হবে।
৬. দাঁতের পাথুরী: দাঁতের গোঁড়ায় পাথুরী জমে যাঁদের, তাঁরা শেওড়া গাছের ছাল চূর্ণ অন্য কোনো মাজনের সঙ্গে দাঁত মাজলে এর দ্বারা দাঁতের গোড়ার পাথরগুলি ক্ষয়ে উঠে যাবে।
৭. শ্বীত্রে বা শ্বেতীতে: শেওড়া বীজের তেল শ্বেতীর দাগে লাগালে এক মাসের মধ্যে ওগুলি মিলিয়ে যেতে শুরু করবে, তবে যেখানে লোম ওঠে না সেখানে কোনো কাজ হয় না, অন্য জায়গায় স্বাভাবিক হয়।
তেল করার নিয়ম:
বীজের সময় সুপক্ক হলুদ বীজগুলো সংগ্রহ করে শুকিয়ে ঘানিতে পিষে তেল করে নিতে হবে।
৮. বাত শোথে: মেদ ও কফ বিকৃত হলে বাত শোথ রোগ হয়। এর প্রধান লক্ষণ গাঁটে, মাংস পেশীতে ও উরুতে ব্যথা, কোনো কোনো সময় প্রস্রাবও পরিষ্কার হয় না। এক্ষেত্রে শেওড়ার পাতা খুব মিহি করে বেঁটে অল্প গরম করে প্রলেপ দিলে অথবা তেল হলুদ মাখার মতো আস্তে আস্তে লাগালে ব্যথা বা যন্ত্রণা সেরে যাবে, তবে বেশি ঘাষা যাবে না,তাহলে সেখানে জ্বালা করবে।
৯. হাত পা ফাটায়: শেওড়া গাছের আঠা বা ক্ষীরা হলে ভালো হয়,নইলে ছালের রস লাগাতে হয়।
রাসায়নিক গঠন: (a) Milky juice. (b) A bitter substance.
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১ আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ২, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ২৬১-২৬৩।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Vinayaraj
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।