নিম গাছের ফুল, ফল, পাতা ভেষজ ঔষধি গুণ সম্পন্ন

নিম এশিয়ার একটি ঔষধি বৃক্ষ। এর  দ্বিপদ নাম Azadirachta indica. এটি বাংলাদেশ ভারতের সর্বত্র জন্মে এবং নিম গাছের ফুল, ফল, পাতা ভেষজ কাজে ব্যবহৃত হয়। নিম্নে নিম গাছের লোকায়তিক ব্যবহার উল্লেখ করা হলো।

নিম এশিয়ার একটি ঔষধি গুণের উপকারী বৃক্ষ

১. অজীর্ণ: যেক্ষেত্রে পাকস্থলীর রস উদরব্যেপে বা পেটজুড়ে পাক দেয়, মুখে জল আসে, সেখানে নিমের ছাল ৪ থেকে ৫ গ্রাম ১ কাপ গরম পানিতে রাত্রে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেঁকে খালি পেটে খেতে হয়।

২. স্বপ্নদোষে: সে যে বয়সেই হোক না কেন নিমের ছালের রস ২৫ থেকে ৩০ ফোঁটা কাচা দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে হবে।

৩. শর্করা রোগের ফোঁড়ায়: স্থুলদেহী, গায়ের ঘা সারতে চায় না, নিমের আটা এক বা দেড় গ্রাম মাত্রায় দুধে মিশিয়ে খেতে হবে।

৪. পরিমাণে বেশী প্রস্রাব হয় ও তার সঙ্গে আশেপাশে চুলকায়: এক্ষেত্রে ৩ থেকে ৪টি নিম গাছের পাতা ও কাঁচা হলুদ এক টুকরো বা এক গাঁট আন্দাজ একসঙ্গে বেঁটে সকালে খালিপেটে খেতে হয়।

৫. রক্ত শর্করায় (Blood-sugar): ১০টি নিম পাতা ও ৫টি গোল মরিচ সকালে খালি পেটে চিবিয়ে খেতে হবে। তবে আহার ও বিহারের বিধি নিষেধ মেনে চলতে হবে

৬. যকৃতের ব্যথায়: নিমের ছাল আন্দাজ ১ গ্রাম, কাঁচা হলুদ হাফ গ্রাম, আমলকির গুড়ো ১ গ্রাম একসঙ্গে মিশিয়ে জল দিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে হবে এটাতে সপ্তাহের মধ্যে উপশম হবে।

৭. বমি: অনেক সময় এটা বেশীবার হলে তার সঙ্গে রক্তর ছিটও আসতে পারে, সেক্ষেত্রে পাতার রস ৫ থেকে ৭ ফোঁটা একটু দুধে মিশিয়ে খেতে দিলে ওটা বন্ধ হয়ে যাবে।

৮. চোখে ঝাপসা ভাব: অকালেই যদি এটা আসে কিংবা পিচুটি হতে থাকলে পাতার রস ৫ থেকে ৭ ফোটা দুধ ও জলের সঙ্গে খেতে হবে।

আরো পড়ুন:  বউলাগোটা বাংলাদেশের সর্বত্রে জন্মানো ভেষজ বৃক্ষ

৯. শুষ্কার্শে: বলি আছে, রক্ত পড়ে না, সেক্ষেত্রে নিমের বীজের শাঁস ৩ থেকে ৪টি সকালে বিকালে ২বার চিবিয়ে বা বেটে জল দিয়ে খেতে হবে। এটির ব্যবহারে ঐ বলি চুপসে যাবে।

১০. চাপা অম্লরোগ: নিমপাতার গুড়ো আন্দাজ ৩৭৫ মিলিগ্রাম সকলে খালিপেটে জলসহ খেতে হবে।

১১. রাত কানা: নিমের ফুলে ভাজা মানুষের সহজপ্রাপ্য, তাই গ্রামের বৈদ্যগণেরও এটি একটি বিশেষ মুষ্ঠিযোগ।  

১২. যে ক্ষত কুষ্ঠের রূপ নিলে: সেক্ষেত্রে নিমের ছালের ক্বাথ খাওয়া আর সেই জলে ক্ষত ধোওয়া এটিতে প্রতিরোধ নিশ্চয়ই হবে।

১৩. রক্তদুষ্টিতে: রক্ত অনেক কারণেই দূষিত হয়, আর তার জন্য গায়ে লাল বা তামাটে দাগ এবং তার সঙ্গে চুলকানি ও অল্প ফুলে যাওয়া সেক্ষেত্রে নিমপাতা ৪ থেকে ৫ গ্রাম সওয়া সের জলে সিদ্ধ করে ১ সেরা থাকতে নামিয়ে ছেঁকে সমস্ত দিনে অল্প অল্প খেতে হয়।

১৪. জন্ডিস বা কামলা রোগে (Jaundice): নিমপাতার রস ২৫ থেকে ৩o ফোঁটা একটু মধু মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে হবে।

১৫. সর্দি গর্মিতে:সর্দি গর্মিতে বা কোনো দুর্গন্ধ বমি হলে বা বমি আসতে থাকলে নিমের পাতার রস ৫ থেকে ৬ ফোঁটা দুধ বা পানির সাথে খেতে হবে তাহলে ওটা প্রশমিত হয়।

১৬. ঘুষঘুষে জ্বর: নিমপাতা চূর্ণ আন্দাজ ২৫o মিলিগ্রাম, তার সঙ্গে ১ থেকে দেড় রতি মকরধ্বজ মিশিয়ে মধুর সঙ্গে খেতে দিলে ওটা সেরে যায়।

১৭. লালামেহ রোগে: নিমের গাছের রস তবে মূলের হলেই ভালো ও কাঁচা দুধ মিশিয়ে খেতে হবে।

১৮. ক্রিমি: ছোট ক্রিমির উপদ্রবে নিমপাতা ২ থেকে ৩ রতি গুঁড়ো খালি পেটে জল দিয়ে খেতে হয়। এটার প্রত্যক্ষ ফল দেখতে পাওয়া যায়।

১৯. অরুচিতে: যে অরুচিকে কিছুতেই কমানো যাচ্ছে না, সেক্ষেত্রে সুজির হালুয়ার সঙ্গে নিমপাতা চূর্ণ ২৫o থেকে ৩০০ মিলিগ্রাম মিশিয়ে খেলে কয়েক দিনের মধ্যেই ওটা উপশম হয়।

আরো পড়ুন:  নলিকা-এর নানাবিধ ভেষজ প্রয়োগ

২০. শিশুদের কেশদাদে: নিমের বীজের তেল লাগালে সেরে যাবে।

২১. মুখের বা মাড়িতে ঘা (ক্ষত): পিত্তবিকারে যদি এই ক্ষতের উদ্ভব হয়, তাহলে নিম বীজের তেল লাগালে সেরে যায়।

২২. চুলের অকালপক্কতায়: নিমের বীজের তেলের নস্য নেওয়া এবং ঐ তেল মাখা এটাতে মাথা ধরাও সারে যায় এটা পরীক্ষিত।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি‘ খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ৩৮-৪২।

Leave a Comment

error: Content is protected !!