ভূমিকা: গাঢ় লাল বোতল ব্রাশ (বৈজ্ঞানিক নাম: Melaleuca citrinus, ইংরেজি নাম: Red Bottle Brush) হচ্ছে এ্যানোনেসি পরিবারের মেলালুকা গণের একটি সপুষ্পক গুল্ম বা বৃক্ষ। এই উদ্ভিদ অনেকে বাড়ির বাগানের শোভাবর্ধন করার জন্য লাগিয়ে থাকে।
বর্ণনা: গাঢ় লাল বোতল ব্রাশ ছোট আকারের চিরহরিৎ বৃক্ষ, পল্লব সরু এবং ঝুলন্ত, বাকল ধূসরাভ বাদামী, অত্যন্ত রুক্ষ, উল্লম্ব বরাবর গভীরভাবে কর্তিত হয়ে সরু শৈলশিরায় রুপান্তরিত হয়, ৫৮ মিমি পুরু, উপশাখাসমূহ রোমশ।
পাতা একান্তর, রৈখিক-ভল্লাকার, ৩-৮ x ০.৫-০.৭ সেমি, পুরাতন পাতা মসৃণ, তরুণ পাতা রোমশ, পুরু চর্মবৎ, গ্রন্থিল, সরু, পল্লবের প্রান্তের কাছাকাছি গুচ্ছবদ্ধ, অখন্ড, পার্শ্বশিরাগুলো সুস্পষ্ট নয়, অন্ত:কিনারীয় শিরা একটি দলে অবস্থান করে, কমবেশী সুস্পষ্ট, নিমপ্রান্ত দীর্গা, পত্রবৃন্ত খর্ব, রোমশ অথবা প্রায় অবৃন্তক।
পুষ্পমঞ্জরী বেলনাকার প্রান্তীয় মঞ্জরী, ৫-১০ সেমি লম্বা, অক্ষ একটি পত্রবহুল বিটপ হিসেবে জন্মায়। পুষ্প অবৃন্তক, বেলনাকার, কাক্ষিক, সহপত্রী, ২.৫ সেমি (প্রায়) লম্বা। বৃতির নল ঘন্টাকার, সবুজাভ, সাদাটে রোমাবৃত, ৩-৫ x ২.৫ মিমি, খন্ডক ৫টি, দন্তর, ক্ষুদ্রাকার।
পাপড়ি ৫টি, বিডিম্বাকার, ৫-৭ মিমি লম্বা, আশুপাতী। পুংকেশর অসংখ্য, মুক্ত, উজ্জ্বল লাল, ২.০-২.৫ সেমি লম্বা, পরাগধানী ১ মিমি (প্রায়) লম্বা, উপবৃত্তাকার থেকে ভল্লাকার, পৃষ্ঠলগ্ন, অনুদৈর্ঘ্য বরাবর বিদারিত হয়। গর্ভপত্র। ৩টি, সংযুক্ত হয়ে অধোগর্ভ গর্ভাশয়ের রুপলাভ করে, গর্ভাশয় ৩-প্রকোষ্ঠীয়, গর্ভদন্ড সূত্রাকার, ২.০-২.৫ সেমি, লম্বা, গর্ভমুণ্ড মুণ্ডাকার, প্রতি প্রকোষ্ঠে ডিম্বক অনেক।
ফল পেয়ালাকৃতি ক্যাপসিউল, ক্ষুদ্র, কাষ্ঠল, ৫x ৪ মিমি (প্রায়), অগ্রভাগ সংকুচিত এবং খাতাগ্র, শীর্ষ থেকে প্রকোষ্ঠবিদারী ক্ষুদ্রাকার খন্ডে বিদারিত হয়। বীজ অসংখ্য, ক্ষুদ্রাকার এবং ডিম্বাকার।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২২ (Fedorov, 1969).
আবাসস্থল ও চাষাবাদ: সব ধরণের মাটি এবং জলবায়ুতে জন্মে, এবং স্যাঁতস্যাঁতে অঞ্চলেও সুঅভিযোজিত। বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার হয়। ফুল ও ফল ধারণ জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর মাসে এদের ফুল ফোটে।
বিস্তৃতি: আদিনিবাস অষ্ট্রেলিয়া, ভারত, ভুটান এবং নেপালে চাষ হয়। বাংলাদেশের অনেক জেলায় বাগান, পার্ক এবং রাস্তার পাশে ইহা লাগানো হয়। কখনও সিলেট এবং চট্টগ্রাম জেলার ছোট ছোট টিলায়ও লাগানো হয়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্বের দিক: ইহা শোভাবর্ধক উদ্ভিদ হিসেবে রোপন করা হয়। ইহার কাঠ কৃষিকাজের যন্ত্রপাতি, যন্ত্রপাতির হাতল, খুঁটি এবং কয়লা প্রস্তুতে ব্যবহৃত হয়।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) গাঢ় লাল বোতোল ব্রাশ প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে গাঢ় লাল বোতল ব্রাশ সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. এম এ কাইয়ুম (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ২৭৮-২৭৯। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।