ভূমিকা: ক্যাজুপুট, কাজু পুটি (বৈজ্ঞানিক নাম: Melaleuca leucadendron ইংরেজি: White Bottle Brush) এটি মিরটাসি পরিবারের মেলালিউকা গণের মাঝারি আকৃতির ভেষজ বৃক্ষ। চিরসবুজ এই গাছটি উদ্যান বা বাগানের লাগানো হয়।
বৈজ্ঞানিক নাম: Melaleuca leucadendron L., Mant. 105 (1767). ইংরেজি নাম: White Bottle Brush. স্থানীয় নাম: কাজু পুটি। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাসজগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. বর্গ: Myrtales. পরিবার: Myrtaceae. গণ: Melaleuca.প্রজাতি: Melaleuca leucadendron.
বর্ণনা:
ক্যাজুপুট মাঝারি আকারের চিরহরিৎ বৃক্ষ। উচ্চতায় প্রায় ১৫ মিটার হয় এবং গুঁড়ি ০.৬ মিটার বেরবিশিষ্ট। গাছের ডাল সরু ও ঝুলন্ত। গাছের বাকল কাগজের মতো সাদাটে রঙের। কাচা বা শুকনো বাকল টেনে তুললে ২.৫ সেমি বা ততোধিক পুরু স্তরে উঠে যায়। পাতা উপবৃত্তাকার বা সরু ভল্লাকার, একান্তর, অখন্ড পাতার দৈর্ঘ্য ৪-১২ সেমি ও প্রস্থ ০.৮-২.৫ সেমি। তবে তরুণ বিটপের পাতা বৃহৎ। পাতা দেখতে চর্মবৎ, দীর্ঘা, উপতী, শিরাসমূহ লম্বা। পাতায় শিরা ৩-৬টি থাকে। বয়স্ক পাতা মসৃণ তবে কচি অবস্থায় তেমন মসৃণ থাকে না। পত্রবৃন্ত খর্বাকার, কচি অবস্থায় রোমশ।
পুষ্পমঞ্জরী ৫ থেকে ১৫ সেমি লম্বা, অক্ষ রেশমী। ফুল সাদাটে, অবৃন্তক, কাক্ষিক। গাছে ফুলের সংখ্যা বেশি। পাতার অগ্রভাগের কাছাকাছি ফুটে। এদের মঞ্জরীপত্র রোমশ। ৫টি বৃত্যংশ মিলে সংযুক্ত হয়ে একটি উপগোলাকার বৃতির নলে পরিণত হয়। বৃতির নল সবুজ ও রোমশ। ফুলের পাপড়ি ৫টি থাকে। পাপড়ির রং সাদা ও ২.৫ মিমি পর্যন্ত লম্বা হয়। পাপড়ি মুক্তভাবে ছড়ানো থাকে।
বহির্গামী বিশিষ্ট পুংকেশরের সংখ্য অনেক। পুংকেশর পাদদেশে সংযুক্ত থেকে পাপড়িগুলোর প্রতিমুখ ৫টি গুচ্ছে পরিণত হয়; ৮ মিমি (প্রায়) লম্বা, পরাগধানী ০.৫ মিমি (প্রায়) লম্বা, সর্বমুখ, কোষগুলো সমান্তরাল, অণুদৈর্ঘ্য বরাবর বিদারিত হয়। গর্ভপত্র ৩টি, যুক্ত, গর্ভদন্ড সূত্রবৎ, ১.০-১.৩ সেমি লম্বা, গর্ভমুণ্ড মুণ্ডাকার, গর্ভাশয় ৩-প্রকোষ্ঠীয়, প্রতি প্রকোষ্ঠে ডিম্বক অনেক। এদের ফল ক্যাপসিউল, অবৃন্তক, আড়াআড়িভাবে ৪মিমি (প্রায়), বেলনাকার, ক্ষুদ্র। বীজ অসংখ্য, নিরেট বিডিম্বাকার বা কীলকাকার।
ক্রোমোসোম সংখ্যা:
2n = ২২ (Fedorov, 1969).
বংশ বিস্তার ও চাষাবাদ:
সবধরণের মাটি ও যেকোন জলবায়ুতে জন্মায়। আর্দ্র বেলেমাটিতে সুঅভিযোজিত হয়। এই গাছ লবণাক্ত পানি সহ্য করতে পারে এবং প্রায়ক্ষেত্রেই সমুদ্রের তীরে জন্মায়। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় নিম্নভূমিতে ইহা জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে।[১]
গ্রীষ্ম ও বর্ষায় ডালের আগায় অসংখ্য ফুল ধরে। এদের সবুজ রঙের ফল গাছের নিচে পরে চারা গজায়। কলম করেও নতুন গাছ তৈরি করা যায়। তবে বোনা বীজ থেকে নতুন চারা সংগ্রহ করা কঠিন। কারন চাষ করতে হলে বীজের অঙ্কুরোদগমনের জন্য বিশেষ ছত্রাকের সহায়তা দরকার হয়।[২]
বিস্তৃতি:
ইহা প্রধানত গ্রীষ্ম প্রধান কুইন্সল্যান্ডের উপকূলীয় অঞ্চলে দেখা যায়। অষ্ট্রেলিয়ার উত্তর প্রান্ত এবং দক্ষিণাঞ্চলে দেখা যায়। ইহা পাপুয়া নিউগিনি, ইরান এবং ইন্দোনেশিয়ায় দেখা যায়। বাংলাদেশে ইহা শোভাবর্ধক। উদ্ভিদ হিসেবে বাগান ও পার্কে লাগানো হয়।
ভেষজ গুণ:
ইহা ভেষজ ও শোভাবর্ধক উভয় উদ্ভিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাকল উত্তেজক এবং বলবর্ধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পাতা এবং প্রান্তীয় উপশাখা কাজুপুট তৈলের উৎস। এই তৈল আভ্যন্তরীনভাবে এবং বাহ্যিকভাবে বাত রোগে ব্যবহৃত হয়। ইহা উত্তেজক এবং কলেরা রোগের মত ডায়রিয়ার জীবাণুনাশক। পুরাতন চর্মরোগ, দাদ, এ্যাকজিমা এবং মুখের ব্রণে এই তেল ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। ইহা একটি উত্তম কীটনাশক এবং উকুন, মশা, ছারপোকা প্রভৃতির বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। ইহার মিশ্রণ সাইট্রোনেমা তৈলের বাষ্পীভবন মন্থর করে (Kirtikar et al., 1935).
জাতিতাত্বিক ব্যবহার:
ইন্দো-চীনে বাতের ব্যাথায় এবং প্রচন্ড জ্বরে কাজুপুট তৈল ত্বকে মালিশ করা হয়। নিউ ক্যালিডোনিয়াতে ইহা পাকস্থলীর বায়ুনাশক এবং জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় মাথা ব্যাথা দূর করতে ইহা কানের ড্রপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। (Kirtikar et al., 1935).
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৯ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) কাজু পুটি প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে কাজু পুটি সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বাগানে বেশী বেশী করে লাগানো যেতে পারে।
বি.দ্র: ছবিটি নেওয়া হয়েছে উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে। আলোকচিত্রী: Marwan Mohamad
তথ্যসূত্র:
১. এম এ কাইয়ুম (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৯ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ২৮৮-২৮৯। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
২. দ্বিজেন শর্মা লেখক; বাংলা একাডেমী ; ফুলগুলি যেন কথা; মে ১৯৮৮; পৃষ্ঠা- ২০, আইএসবিএন ৯৮৪-০৭-৪৪১২-৭
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।