কামিনী দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সাদা সুগন্ধি ফুল বিশিষ্ট ছোট দৃষ্টিনন্দন বৃক্ষ

ফুল

কামিনী

বৈজ্ঞানিক নাম: Murraya paniculata (L.) Jack, Malay. Misc. 1: 31 (1820). সমনাম : Chalcas paniculata L. (1767), Murraya exotica L. (1771). ইংরেজি নাম: Cosmetic Bark, Orange Jasmine. স্থানীয় নাম: কামিনী।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Angiosperms বর্গ: Sapindales পরিবার: Rutaceae গণ: Murraya. প্রজাতি: Murraya paniculata.

ভূমিকা: কামিনী (বৈজ্ঞানিক নাম: Murraya paniculata, ইংরেজি নাম: Cosmetic Bark, Orange Jasmine) হচ্ছে রুটেসি পরিবারের মুরায়া গণের সপুষ্পক উদ্ভিদ। এই প্রজাতি সাদা রঙের সুগন্ধি ফুল বিশিষ্ট ছোট দৃষ্টিনন্দন বৃক্ষ এটি।

বর্ণনা: গুল্ম বা ছোট বৃক্ষ, ৪ মিটার পর্যন্ত উঁচু, শাখাপ্রশাখা সরু, বেলনাকার। পত্র ২০ সেমি পর্যন্ত লম্বা, ৩-৫ পত্রক, কদাচিৎ ৭-পত্রক, পত্রক একান্তর, ডিম্বাকার, ডিম্বাকার-উপবৃত্তাকার, আয়তাকার-উপবৃত্তাকার থেকে বিডিম্বাকার, আকার বিবিধ, বৃহৎ আকৃতির ৩.৫-৮০ x ২.০-৩.৫ সেমি, ছোট আকৃতির ১.০-৩.৫ x ০.৫-১.৫ সেমি, কাগজসদৃশ থেকে চর্মবৎ, গোড়া কীলকাকার এবং তির্যক, শীর্ষ স্থূলাগ্র থেকে পুচ্ছবিশিষ্ঠ-দীর্ঘাগ্র এবং প্রায় খাঁজযুক্ত, প্রান্ত অখন্ডিত থেকে অস্পষ্টভাবে এবং অনিয়মিতভাবে ভোঁতা দস্তুর, পত্ৰকবৃন্ত খাটো, প্রায় ৫ মিমি লম্বা।

পুষ্পবিন্যাস শীর্ষক এবং কাক্ষিক, স্বল্প-পুস্পক প্যানিকল। পুষ্প মধ্যম থেকে বৃহৎ, ১৫ মিমি পর্যন্ত লম্বা, ৫-অংশক, পুষ্পবৃন্ত সরু, ১০ মিমি পর্যন্ত লম্বা। বৃতি ৫-খন্ডিত, খন্ডক ছোট, ০.৫-১.০ মিমি লম্বা, ব-দ্বীপ আকৃতির, সূক্ষ্মাগ্র। পাপড়ি ৫টি, আয়তাকার-উপবৃত্তাকার বা বিডিম্বাকার, ১২-১৫ x ৩-৪ মিমি, গোড়া সরু, শীর্ষ সূক্ষ্মাগ্র বা স্থূলা, সাদা, গ্রন্থিযুক্ত, রোমহীন।

পুংকেশর ১০টি, পুংদন্ড ৫-১০ মিমি লম্বা, উপরিভাগ তুরপুনাকার, নিম্নভাগ চ্যাপ্টা, সাদা, পরাগধানী উপবৃত্তীয়-আয়তাকার, প্রায় ১ মিমি লম্বা, হলুদাভ। গর্ভাশয় ডিম্বাকার-উপবৃত্তীয়, ২-৩ মিমি লম্বা, ২-৩ প্রকোষ্ঠী, গর্ভদন্ড বেলনাকার, ৪-৮ মিমি লম্বা, গর্ভমুন্ড মুন্ডাকার, ২-৩ খন্ডিত, গর্ভদন্ড থেকে প্রশস্ত, প্রত্যেক প্রকোষ্ঠে ১-ডিম্বক বিশিষ্ট। ফল ডিম্বাকারউপবৃত্তীয় বেরী, প্রায় ২ সেমি লম্বা যা ভোঁতা প্রান্তযুক্ত, পাকলে লালাভ, ১-২ বীজী। বীজ উপবৃত্তীয়, প্রায় ১ সেমি লম্বা, বহিস্তৃক ফিকে-বাদামী, রোমশ। ফুল ও ফল ধারণ: মার্চ-জানুয়ারি ।[১]

আরো পড়ুন:  দোলন চাঁপা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সুগন্ধি ফুল

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ১৮ [২]

আবাসস্থল ও চাষাবাদ:  কামিনী চিরহরিৎ, নিম্নভূমি এবং পাহাড়ী বর্ষা-অরণ্যের বৃক্ষ। এটি সর্বোচ্চ ৬০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত হয়। নতুন চারা উৎপাদনের জন্য কান্ডের দাবাকলম দ্বারা এবং বীজ দ্বারা করা হয়।

বিস্তৃতি: দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণাঞ্চলীয় । চীন, তাইওয়ান থেকে উত্তর-পূর্ব অস্ট্রেলিয়া এবং নিউ ক্যালেডোনিয়া। বাংলাদেশে সমগ্র এলাকায় শোভাবর্ধক উদ্ভিদ হিসেবে আবাদী। অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: উদ্ভিদের পাতা উদ্দীপক এবং সঙ্কোচক, এবং ডায়রিয়া, আমাশয় এবং দাঁতের ও মাড়ীর রোগে ব্যবহৃত। পাতার সিদ্ধ ক্বাথ শোথ রোগে প্রয়োগ করা হয় এবং পাতার চূর্ণ কাটা স্থানে প্রয়োগ করা হয়। ভূ-নিম্নস্থ মূলের বাকল খাওয়া হয় এবং শরীর ব্যথা নির্মূলে শরীরে প্রয়োগ করা হয়। কান্ড এবং মূলের বাকল ডায়রিয়া রোধী বৈশিষ্ট্য বহন করে (Ghani, 2003). সুগন্ধি পুষ্প শোভা বর্ধনকারী সজ্জাতে ব্যবহৃত। বাকল এবং পুষ্প প্রসাধনীতে ব্যবহৃত। পাকা ফল তাজা অবস্থায় খাওয়া হয় এবং মিষ্টি স্বাধযুক্ত। মূল কাঠ সুন্দর গঠন বিশিষ্ট এবং ছোট ছোট সৌন্দর্য মন্ডিত বস্তু তৈরিতে এই কাঠ খুবই মূল্যবান, যেমন ছোড়ার হাতল এবং আবরণ, হাটার লাঠি, কাগজ-চাপা, খচিত করা, দাবা খেলার ঘুটি এবং বাঁশি তৈরীর কাজে ব্যবহৃত হয় (Sosef et al., 1998).

জাতিতাত্বিক ব্যবহার: মায়ানমারে বাকল এবং মূল মূখমন্ডলের পাউডার তৈরীতে ব্যবহৃত হয় (Sosef et al., 1998).

অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১১তম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) কামিনী প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে কামিনী সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।[৩]

তথ্যসূত্র:

১. এম আমান উল্লাহ (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৮৩-১৮৪। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

আরো পড়ুন:  হাসনাহেনা মিষ্টি গন্ধযুক্ত শোভাবর্ধক উদ্ভিদ

২. Kumar, V. and Subramaniam,, B. 1986 Chromosome Atlas of Flowering Plants of the Indian Subcontinent. Vol.1. Dicotyledons Botanical Survey of India, Calcutta. 464 pp.

 ৩. এম আমান উল্লাহ: প্রাগুক্ত, পৃ. ১৮৩-১৮৪।

Leave a Comment

error: Content is protected !!