চিলগোজা ঔষধি গুণসম্পন্ন পাইন জাতীয় গাছ

চিলগোজা (Pinus gerardiana) ভারতের উত্তর-পশ্চিম হিমালয়-সংলগ্ন গাড়োয়াল অঞ্চলে ১৮০০ থেকে ৩০০০ মিটার পর্যন্ত উচ্চস্থানে এই গাছ প্রচুর জন্মে। তাছাড়া আফগানিস্তান, বেলুচিস্তান প্রভৃতি জায়গায়ও এটিকে পাওয়া যায়।

চিলগোজা-এর পরিচিতি

যদিও এটি কম উচ্চতা-সম্পন্ন এক প্রকার পাইন গাছ, তাহলেও সাধারণতঃ ১৫-২০ মিটার লম্বা ও ২–৩ মিটার চওড়া বিশিষ্ট চিরহরিৎ বৃক্ষ। শাখা-প্রশাখাগুলি ঊর্ধ্বমুখী, কিন্তু কাণ্ড থেকে গোলাকারভাবে বেরোয় না। গাছের ছাল ধূসর রঙের। সরু সূচাকৃতি পাতা ৫-১০ সেন্টিমিটার লম্বা, শক্ত, গাঢ় সবুজ এবং একসঙ্গে তিনটি ক’রে জন্মে । পাইন গাছের ফুলকে কোন (Cone) বলা হয়। পুং কোন্ ৭–১৩ মি.মি. লম্বা ও স্ত্রী কোন্ ডিম্বাকৃতি, ১৫–২৩ সে.মি. লম্বা ও ১০–১৩ সে.মি চওড়া। বীজ নলাকৃতি, ডগার দিক সরু, ২–২ সে.মি. লম্বা, গাঢ় বাদামী। বীজের উপরের খোসা বাদ দিলে বীজশস্য বা মজ্জা (Kamel) পাওয়া যায়। এটিকেই কাঁচা বা ভেজে খাওয়া চলে।

চাষবাস ও বীজ সংগ্রহ

মে-জুন মাসে গাছে ফুল আসে অর্থাৎ ‘কোন্ ফোটে। এই কোন্ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস নাগাত পাকে। এক-একটি কোনে গোটা ৩০ বীজ থাকে। দূর থেকে ‘কোটি দেখতে অনেকটা আনারসের মতই। আনারসের চোখগুলির জায়গায় ‘কোন-এর সেখানে বীজ থাকে। চিলগোজা বীজের জন্যই এই গাছের এতই সমাদর। বীজ যদিও পাকা ‘কোন্’ থেকে সংরক্ষণ করা হয়, তবুও অধিকাংশ ‘কোন্ সংগ্রহ করা হয় একেবারে পাকার আগেই। এই ‘কোন্’ আগুনে গরম করলে বীজগুলি টুকটুক ক’রে খসে পড়ে।

ভেষজ উপাদান ও গুণ

নব্যের সমীক্ষা থেকে জানা যায় যে, বীজ বায়ুনাশক, হজম-সহায়ক, উত্তেজক ও কফ-নিঃসারক গুণসম্পন্ন। বীজশস্যে প্রায় ৫০% fatty oil থাকে এবং তাতে পামেটিক, স্টিয়ারিক ও ওলিক এসিড বিদ্যমান । এই তেলে ক্ষতনাশক ক্ষমতা আছে। বীজশস্য বা মজ্জায় থাকে প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেটস্, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন প্রভৃতি।

ব্যবহার

অন্যান্য পাইন গাছের মতন চিলগোজা পাইন থেকেও আঠা পাওয়া যায়, যাকে Oleoresin বলা হয় এবং তা থেকে ৩৯.৬% টারপেনটাইন প্রস্তুত হয়ে থাকে, যা অন্যান্য পাইনের আঠার তুলনায় অনেক বেশি এবং উত্তম গুণসম্পন্ন। তা সত্ত্বেও এই গাছ থেকে আঠা সংগৃহীত হয় না, কেবল বীজের জন্যই। গাছও সাধারণতঃ কাটা হয় না, তাই এর কাঠ শক্ত, হরিদ্রাভ খয়েরী রঙের ও অন্যান্য পাইন কাঠের তুলনায় ভাল হওয়া সত্ত্বেও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যবহৃত হয় না। এটি চিলগোজা পাইন বা Edible Pine নামেও খ্যাত। ভারতে সর্বাধিক পরিচিত নাম চিলগোজা। এটি অবশ্য বীজটিরই নাম।

আরো পড়ুন:  মচকুন্দ গাছের ভেষজ গুণাগুণ ও উপকারিতা

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্র:

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ১৬৭-১৬৮।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি flowersofindia.net থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Uttam Lal

Leave a Comment

error: Content is protected !!