পরিচিতি: পেয়ারা মিরটাসি পরিবারের সিডিয়াম গণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। এরা ছোট বৃক্ষ, সুস্পষ্ট ডোরাকাটা দাগবিশিষ্ট, মোটের উপর মসৃণ, ধূসর এবং তামাটে বাদামী বাকলবিশিষ্ট যাহা পাতলা চটা আকারে অবমুক্ত হয়, তন্তুময় নয়। কচি পল্লব চতুষ্কোণী, সবুজ, রোমশ। কচি অংশ এবং ফলকের নিম্নপৃষ্ঠ শিরা বরাবর চেপটা ধূসরাভ বাদামী অণুরোমাবৃত। পাতা খর্বাকার বৃন্তবিশিষ্ট, প্রতিমুখ, কচি পাতা বিপরীত তির্যকপন্ন এবং পুরাতন পাতা বিপরীত উপরিপন্ন, ৬-১৪ x ৩.০-৬.৫ সেমি, দীর্ঘায়ত-ভল্লাকার থেকে উপবৃত্তাকার, সচরাচর দীর্ঘাগ্রবিশিষ্ট, নিম্নপ্রান্ত গোলাকৃতি, কিনারা অখন্ড, উপরের পৃষ্ঠ অর্ধ মসৃণ, নিম্নপৃষ্ঠ অণুরোমশ, পার্শ্বশিরা ১০-২০ জোড়া, নিম্নপৃষ্ঠে সুস্পষ্ট, কিনারার কাছাকাছি অত্যন্ত বাঁকা এবং অন্ত:কিনারীয় শিরার সহিত মিলিত, পত্রবৃন্ত ৩-১০ মিমি লম্বা, বৃত্তাকার, রোমশ এবং উপরের পৃষ্ঠে খাঁজকাটা।
মঞ্জরীদন্ড কাক্ষিক, ২.৫-৩.৫ সেমি লম্বা, একক বা কতিপয় (২-৩টি) পুষ্পবিশিষ্ট। পুষ্প সাদা, ২.৫-৩.৮ সেমি ব্যাসবিশিষ্ট, বৃতি কলস আকার, নিচের অংশ গর্ভাশয়লগ্ন, উপরের অংশ মুক্ত এবং পুষ্পোদগমকালে অনিয়মিতভাবে খন্ডিত। পাপড়ি ৫-৬টি, প্রশস্ত, ১ সেমি (প্রায়) ব্যাসবিশিষ্ট এবং ১.৫ সেমি লম্বা, মুক্ত, সাদা। চক্র চওড়া, মোটা। পুংকেশর অসংখ্য, কতিপয় শ্রেণিতে সজ্জিত, বহির্গামী, পরাগধানী ০.৬-১.০ মিমি লম্বা, দীর্ঘায়ত, পাদদেশের কাছাকাছি যুক্ত। গর্ভপত্র সচরাচর ৫টি, কখনও ৪টি, ৪-৫ প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট গর্ভাশয়ের সহিত যুক্ত, ডিম্বক প্রতি প্রকোষ্ঠে অসংখ্য, গর্ভদন্ড সূত্রবৎ, কখনও মোটা, গর্ভমুণ্ড মুণ্ডাকার। ফল বেরী, গোলকাকার, ডিম্বাকৃতি বা নাশপাতি আকার, বিভিন্ন আকারের হয়ে থাকে, সাধারণত ৪-১৩ সেমি লম্বা এবং ৪ সেমি এর অধিক ব্যাসবিশিষ্ট, বৃতির খন্ডকগুলো মুকুট গঠন করে, সবুজ অথবা পরিপক্ক অবস্থায় হলুদাভ সবুজ। বীজ অসংখ্য, উপবৃক্কাকার, শক্ত, লালচে বাদামী। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে প্রায় সারা বৎসর কিন্তু ফুল প্রধানত গ্রীষ্মকালে এবং ফল বর্ষাকালে ।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২২ (Fedorov, 1969).
চাষাবাদ ও আবাসস্থল: বসতবাড়ির আঙিনা, রাস্তার পাশে এবং অরণ্য। বংশ বিস্তার হয় বীজের সাহায্যে, কখনও গুটির সাহায্যে।
বিস্তৃতি: ভারত, মায়ানমার এবং অন্যান্য গ্রীষ্ম প্রধান দেশসমূহ। বাংলাদেশে ইহা দেশের সবখানে পাওয়া যায়।
পেয়ারার অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
পেয়ারার ফল সাধারণভাবে খাওয়া হয়। গুয়াভা অত্যন্ত সুগন্ধিময়, মিষ্টি, রসালো এবং অতি প্রিয় একটি ফল যা এসিড, চিনি এবং পেকটিন উপাদানের সঠিক ভারসাম্যপূর্ণ। ইহা ভিটামিন এ, বি এবং সি ও এ্যাসকোর্বিক এসিডের একটি সমৃদ্ধতম উৎস। ইহা সচরাচর জেলী, মোরব্বা এবং পেষ্টির জন্য ব্যবহৃত হয়। জলীয় বাষ্পমুক্ত ফল চূর্ণ অন্যান্য জেলী এবং জ্যাম সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। ফল পিপাসায়, ডায়রিয়ায় এবং অধিক গরমে শরীর শীতল করতে ব্যবহৃত হয়; শূল বেদনা এবং দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ায় উপকারী। বাংলাদেশের জনগণ পরিপাক কার্যের সমস্যায় টনিক হিসেবে পাতা, শরীর শীতল করতে, ব্রংকাইটিস এবং চোখের ক্ষতে ইহার পুষ্প ব্যবহার করে থাকে।
পাতা এবং বাকল রং শিল্পে এবং কখনও কখনও চর্ম শিল্পে ব্যবহৃত হয়। ইহার শিকড়ের বাকল কোষ্ঠবদ্ধতাকারী গুণাবলীর জন্য ভেষজ ঔষধ হিসেবে মূল্যবান এবং শিশুদের ডায়রিয়ায় সাফল্যজনকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পাতা ক্ষত, আলসার, কলেরা এবং ডায়রিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ইহার কাঠ নকশার উপযোগী কাঠ হিসেবে, বল্লমের হাতল, বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রাদি এবং কয়লার জন্য ব্যবহৃত হয়।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৯ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) পেয়ারা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে বর্তমান অবস্থায় এই প্রজাতিটিকে আশংকা মুক্ত (lc) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশে পেয়ারা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এটি সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. এম এ কাইয়ুম (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৯ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ২৯২-২৯৩ । আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Jeevan Jose
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।