মায়াফল বৃক্ষ দেখতে ঝোপালো ও ছোট। সাধারণত ১০ থেকে ১ ফুট উঁচু হয়। কাণ্ডের ছাল ধূসর। পাতা ৪-৬ সে.মি. লম্বা, শক্ত। পাতার নিচের দিকটা সামান্য রোম আছে, কিনারা অসমান কাটা কাটা। ফুল একলিঙ্গ বিশিষ্ট। ফল গোলাকা অথবা সিলিণ্ডার আকৃতির, হালকা হলুদ রঙের।
Adleria gallae tinctoriae নামক এক প্রকার পতঙ্গের স্ত্রী পতঙ্গগুলি Quercus infcctoria গাছের কচি কচি ডালের উপর ক্ষত কিবাং ছোট ছোট গর্তের সৃষ্টি করে তাতে ডিম পাড়ে। কিছুদিন পরে ডিমগুলি থেকে শুককীটের জন্ম হয়। এই শুককীটগুলির দেহনিঃসৃত লালা ও গাছের রস একসঙ্গে মিশ্রিত হয়ে ডালের উপর যে অর্বুদ বা gall-এর সৃষ্টি হয়, তার মধ্যেই শুককীটগুলি বসবাস করে। অর্বুদটি আসলে শুককীটের থাকার খর। এই অর্বুদ ভেঙ্গে পতঙ্গ বেরিয়ে আসার আগেই সেগুলি সংগ্রহ করে রোদে ভালভাবে শুকিয়ে নিতে হয়। সাধারণতঃ এক একটি অর্বুদ ৫–৫০ মিলিমিটারের মতো ব্যাসযুক্ত গোলাকার, অনেকটা দেশী কুলের আকৃতিবিশিষ্ট এবড়ো-খেবড়ো ধূসর বর্ণের হতে দেখা যায়। যেগুলির ভেতর থেকে পতঙ্গ বেরিয়ে যায়, সেগুলি ছিদ্রযুক্ত হয়, তাই এর আর এক নাম ছিদ্রাফল। এগুলি হালকা ও কম গুণসম্পন্ন এবং নিটোলগুলি অর্থাৎ যেগুলির ভেতর থেকে শুককীট পতঙ্গ হয়ে বেরিয়ে যেতে পারেনি, সেগুলি ভারী ও উৎকৃষ্ট এবং অধিক গুণসম্পন্ন। ভারতের প্রায় সর্বত্র বড় বড় শহরের ভেষজ-ব্যবসায়ীদের কাছে এই দ্রব্যটি বিক্রয়ার্থ মজুত থাকে, তবে মূল্য মোটেই কম নয়।
মায়াফল বৃক্ষ-এর অন্যান্য নাম
এই উদ্ভিদটির বোটানিক্যাল নাম হলো Quercus infectoria Olivier, ফ্যামিলী Fagaceae. এটির আদি বাসস্থান গ্রীস দেশ, এশিয়া মাইনর, সিরিয়া এবং ইরান। এ গাছটি এক প্রকার ওক গাছ, এতে Gall হয় বলে Gall oak বলা হয়। এই গণের কয়েকটি ওক প্রজাতির গাছ থেকে ভারতে গল তৈরী হলেও সেগুলি অত্যল্প এবং কাজে লাগানো হয় না। ভারতের বাজারে যে gall বা মায়াফল পাওয়া যায়, সেগুলি বহিরাগত এবং Aleppo Gall, Mecca Gall, Turkey Gall, Levant Gall, Smyrna Gall, Syrian Gall প্রভৃতি নামে পরিচিত। তন্মধ্যে এশিয়া মাইনরে প্রাপ্ত Aleppo Gall সর্বোৎকৃষ্ট এবং এতে সবচাইতে বেশি Tannin পাওয়া যায়।
এই Gall oak-এর গাছে এক প্রকার gall বা অর্বুদ জন্মে, যা চামড়া রং ও পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহৃত হয়। পূর্বে এই gall বা মায়াফল পারস্য উপসাগর থেকে বসেরা হয়ে ভারতে আসতো ব’লে এগুলিকে বসেরা গল বলা হতো। Q. infectoria-এর গাছে কিভাবে gall-এর সৃষ্টি হয়—সেটাই এবারে বলা হচ্ছে।
রাসায়নিক গঠন
অর্বুদে শতকরা ৫০-৭০% ভাগ Tannic acid থাকে। তাছাড়া gallic acid, cllagic acid, gum, starch, sugar, essential oil প্রভৃতি এটিতে বিদ্যমান।
তথ্যসূত্র:
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ২০৫-২০৭।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Krzysztof Ziarnek, Kenraiz
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।