ভূমিকা: ভোলাটুকি, ভল্লাত, ভল্লাতক হচ্ছে এনাকারডিয়াসি পরিবারের সেমেকারপাস গণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। ময়মনসিংহে এই ফলটির নাম বাওলা, অন্য নাম ভোলা।
অন্যান্য নাম:
একে সংস্কৃতে বলা হয় ভল্লাতক, অরুষ্কর (এছাড়া আরও ১৪টি নাম আছে), বাংলায় ভেলা, হিন্দীতে ভিলাবা, ভেলা প্রভৃতি বলা হয়ে থাকে। এর বোটানিক্যাল নাম Semecarpus anacardium Linn. f., পুর্বে এটির নাম ছিল Semecarpus latifolius, Pers., Anacardium latifolium, Lamk, Anacardium officinarum, Gaertn. প্রভৃতি ; ফ্যামিলী Anacardiaceae.
বিবরণ:
এটি ছোট আকারের পাতাঝরা স্বভাবের বৃক্ষ। গাছের মাথায় প্রচুর শাখা-প্রশাখা ও পাতা থাকায় তা ছাতার মতো দেখায়। মধ্যমাকৃতি গাছ ৮/১০ মিটারের বেশি উচু হতে সাধারণতঃ দেখা যায় না। ছাল ধূসর রঙের। পাতার গোড়ার দিকটা হৃৎপিণ্ডাকৃতি, অগ্রভাগ সরু, পাতা মোটা। পাতার উপরিভাগে কোমল লোম এবং নিম্ন দিকে সূক্ষ্ম লোম আছে, আকারেও বেশ বড়। বসন্তকালে গাছে পাতা থাকে না।
স্ত্রী পুষ্প এবং পুং পুষ্প ভিন্ন ভিন্ন গাছে হয়। কদাচিৎ একই গাছে দু’ রকমের ফুল হয়ে থাকে। পাপড়ি সুবজাভ সাদা। ফল শাঁসযুক্ত, পাকলে লালবর্ণ, মধুর, লোকে খায়। ফলে একটি বীজ থাকে। বীজের মজ্জা বা শাঁস নানাপ্রকার মিষ্টান্ন তৈরীর কাজে কাজুর মত ব্যবহৃত হয়। ফল পাকলে কৃষ্ণ ও হরিদ্রাবর্ণ ধারণ করে।
ফল ছোট, আকারে বড় জোর ২.৫ সেমি। পাকলে খোসার রঙ বেগুনি হয়ে যায়। কচি ফল টক, লবণ মিশিয়ে খাওয়া যায়, আচার তৈরি করা যায়। বলা হয়, বীজের শাঁস খেলে মেধা ও স্মরণশক্তি বাড়ে। এছাড়াও এজমা, ত্বকের সংক্রমণ, জ্বালাপোড়ায় বীজের ব্যবহার করা হয়। ভোলাটুকির গাছ এখন কম দেখা যায়। ফুল মে ও জুন মাসে এবং ডিসেম্বর-জানুয়ারী মাসে ফল হয়।
বিস্তৃতি:
ময়মনসিংহ, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের শুষ্ক বনাঞ্চলে ভোলাটুকির গাছে দেখা যায়। ভারতের উষ্ণপ্রদেশ সমূহে, বিশেষতঃ পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম, মধ্যভারত, গুজরাত প্রভৃতি স্থানে ভেলার গাছ জন্মে। পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া, বীরভূম প্রভৃতি অঞ্চলে ভেলার গাছ অধিক দেখা যায়।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৯, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ ১৪০৫, পৃষ্ঠা, ২৮-৩২।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।