ভূমিকা: তেঁতুল হচ্ছে ফেবাসি পরিবারের টামারিন্ডাস গণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। এই প্রজাতিটি ফল গাছ হিসাবে লাগানো হয়ে থাকে।
বর্ণনা: তেঁতুল বৃহৎ বৃক্ষ, ২৪ মিটার পর্যন্ত উঁচু, শীর্ষ ছাউনি বিস্তৃত, তরুণ অবস্থায় রোমশ, পরবর্তীতে রোম বিহীন, পত্র অচূড় পক্ষল যৌগিক, সোপপত্রিক, উপপত্র ক্ষুদ্র, আশুপাতী, পত্রক অক্ষ বৃন্তসহ ৫-১২ সেমি লম্বা, পত্রক ১০-২০ জোড়া, ৮-২০ X ৩-৬ মিমি, ক্ষুদ্র, রৈখিকদীর্ঘায়ত, অসম এবং মূলীয় অংশ গোলাকার, রোম বিহীন, শীর্ষ তীক্ষাগ্র।
পুষ্পবিন্যাস শীর্ষীয় রেসিম, ২-৬ সেমি লম্বা, অক্ষ অণুরোমশ। পুষ্প ফিকে বা সোনালি হলুদ, মঞ্জরীপত্র ডিম্বাকৃতি, ৫x ৩ মিমি, মঞ্জরীপত্রিকা মঞ্জরীপত্র সমতুল্য, ঘন সিলিয়াযুক্ত, নিচের পৃষ্ঠ রোমশ এবং উপরের পৃষ্ঠ রোম বিহীন, বৃন্ত অণুরোমশ থেকে রোম বিহীন, প্রায় ১০ মিমি। পুষ্পধার সরু কোণাকৃতি, ৪.০-৪.৫ মিমি লম্বা।
বৃত্যংশ ৪ টি, ১২ x ৫ মিমি, দীর্ঘায়ত-উপবৃত্তাকার, প্রান্ত-আচ্ছাদী, হলদে, মূলীয় অংশ রোমশ। পাপড়ি ৩ টি, অসম, কমলা হলুদ, উপরের পাপড়ি দীর্ঘায়ত, তাম্বুলাকার, ১২x ৩ মিমি, ২ টি পার্শ্বীয় পাপড়ি বিডিম্বাকার থেকে দীর্ঘায়ত, মুলীয় অংশ রোমশ, ১২-১৩ x ৫-৬ মিমি।
পুংকেশর ৩ টি, সম্পূর্ণ যুক্ত, পুংদন্ড খাটো, ১.২-১.৫ সেমি লম্বা, পরাগধানী দীর্ঘায়ত। গর্ভাশয় রোমশ, রৈখিক, ৭ সেমি লম্বা, সদন্ডক, গর্ভদন্ড পুরু, ৭ মিমি লম্বা, গর্ভমুন্ড শীর্ষীয়, কর্তিতাগ্র বা মুন্ডাকার। ফল লোমেন্টাম, ৫-১৫ x ১.০-২.৫ সেমি, দীর্ঘায়ত, সামান্য সম্মুখ দিকে বক্র, পুরু, হালকা বাদামী, রসালো এবং অভ্যন্তর অনুপ্রস্থ বিভেদিত, টক স্বাদ যুক্ত, অবিদারী।
এদের বীজ চাপা, বিভিন্ন আকার বিশিষ্ট, বিডিম্বাকারবর্তুলাকার, ১ সেমি লম্বা, লালচে বাদামী থেকে কালচে বাদামী, বহিস্তৃক দৃঢ়, চকচকে। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর মাসে।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২৪ (Atchison, 1951).
আবাসস্থল ও চাষাবাদ: সাধারণত পতিত জমি, বাড়ির পশ্চাদভাগের উঠান, পথিপার্শ্ব, গৃহাঙ্গণ, সুনিষ্কাশিত বিভিন্ন প্রকার মাটি যেমন বেলে মাটি, অনুর্বর মাটি এমনকী পাহাড়ী অঞ্চলের মাটিতে জন্মে। বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার হয়।
বিস্তৃতি: আফ্রিকার উষ্ণাঞ্চলে আদিনিবাস। তেঁতুলের আদি নিবাস আফ্রিকার সাভানা অঞ্চল ও দক্ষিণ এশিয়া। ধারণা করা হয় সুদান থেকেই তেঁতুল বাংলাদেশের মাটিতে এসেছে। পৃথিবীর সর্বত্র চাষাবাদ হয়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: ছায়া তরু, খাদ্য, জ্বালানী কাঠ, ভেষজ ওষুধ ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার ব্যবহারের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলের রসালো অংশ। আহার্য এবং বিভিন্ন দেশে রপ্তানির মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হয়। তরুণ পত্র, পুষ্প এবং অপরিপক্ক পড় টক স্বাদ যুক্ত এবং খাদ্যরূপে গ্রহণ করা হয়। পরিপক্ক ফলের রসালো অংশ ভিটামিন সি এর অন্যতম প্রধান উৎস। এই রসালো অংশ থেকে গুঁড়া মসলা, আচার, চাটনি, কাসুন্দি, সস, আইসক্রিম ইত্যাদি তৈরি হয়। সামুদ্রিক লবণাক্ত পানির সাথে অগলনীয় পডের তরল একত্রে মিশ্রিত করে সেই মিশ্রণ রৌপ্য জিনিস উজ্জ্বল করার কাজে ব্যবহার করা হয় (Benthall, 1933)। কাষ্ঠ খুব শক্ত ও টেকসই হওয়ায় এই গাছ থেকে উন্নতমানের। কাষ্ঠের চাকা, কাষ্ঠের হাতুড়ি, বেঁদা, চেঁকি, কৃষি যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র তৈরি হয়।
ঔষধি ব্যবহার: পক্ষাঘাত রোগে বাকল উপকারী। পত্র ক্ষতস্থান ধৌত ও ফুলা কমাতে সাহায্য করে। নেত্র পীড়ায়ও পত্রের সেক উপকারী। ফলের রসালো অংশ রেচক এবং বীজ আমাশয়ে ব্যবহার করা হয়। তেঁতুল গাছের ভেষজ ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: সেনেগালে পত্র ক্ষারবস্তু ও জীবানুবারকরূপে ব্যবহৃত হয়। ভারতের আদিবাসীরা শুষ্ক বীজের গুড়া দ্বারা মাছে বিষপ্রয়োগ করে থাকে (Pal and Jain, 1998)। থাইল্যান্ডে এই গাছের কাঠ থেকে মৎস্য ও মাংসাদি রেখে কুচাইয়া কাটার কাঠের মুগুর, স্বর্ণ গলানোর কয়লা, বীজ থেকে কৃমিনাশক ভেষজ তৈরি হয় (Larsen et al., 1984)।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) তেঁতুল প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে তেঁতুল সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে বাগানে ও বাসা বাড়িতে অধিক আবাদের উৎসাহ করা যেতে পারে।[১]
তথ্যসূত্র:
১. বি এম রিজিয়া খাতুন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৫৪-১৫৫। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।