ইহা এক বৃহৎ গাছ। প্রায় ৮০-১০০ ফুট পর্যন্ত উচু হয়ে থাকে। বসন্তের শরতেই পাতা ঝরে যায় ও পরে নতুন পাতা জন্মে। লম্বায় এরা ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে, আকৃতি দেখতে ডিম্বের ন্যায় এবং অগ্রভাগ ক্রমশ সরু, এর উপরিভাগ খসখসে ও নিম্নভাগ ঈষৎ পীতাভ বর্ণের এবং সক্ষম রোমশ। পুষ্পদণ্ড প্রায় ১-৩ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে দেখা যায় এবং এর শাখা সূক্ষ্মরোমশ, মসৃণ, আকারে ছোট ও বেতবর্ণের অনেক ফুল ফোটে। ফল দেখতে ৪টি অংশে বিভক্ত ও ব্যাস প্রায় ১ ইঞ্চির মত হয়ে থাকে। কিন্তু এর বহিরাবরণটা কোমল লোমাবৃত। সাধারণতঃ বর্ষায় ফুল ও শীতে ফল হয়। এর জন্মস্থান মায়ানমার ও মালয় উপদ্বীপে, মধ্য ভারত, মাদ্রাজ, বিহার ও দাক্ষিণাত্যে।
এর সংস্কৃত নাম শাক, বাংলায় প্রচলিত নাম সেগুন ও তেলেগুতে টেকু নামে পরিচিত। এর বোটানিক্যাল নাম Tectona grandis Linn. T. ও ফ্যামিলি Verbenaceae. ঔষধার্থে ব্যবহার্য অংশ– কাঠ।
সেগুন গাছ-এর গুণাগুণ
১. অম্লরোগে: যে অশ্লপিত্ত রোগ শ্লেম্মাজনিত, সেই ক্ষেত্রেই ব্যবহার্য। এই রোগ হলে সেগুন গাছ-এর কাঠের গুড়া (করাত কাটাই) ১৫। ২০ গ্রাম ৪। ৫ গ্রাম জলে সিদ্ধ করার পর আন্দাজ এক কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেকে সেই জল সমস্ত দিনে ৩। ৪ বারে অল্প অল্প করে খেতে হয়। এইভাবে ৩।৪ দিন ব্যবহার করলে ওটা সেরে যাবে। নইলে উপশম নিশ্চয়ই হবে।
২. পাথুরী রোগে: মূত্র সম্বন্ধীয় রোগের অন্যতম রোগ হলো পাথুরী বা অশ্মরী রোগ। এক্ষেত্রে সেগুন ফল চূর্ণ ৫০০ মিলিগ্রাম মাত্রায় সকালে ও বৈকালে দু’বার জলসহ খেতে হবে। প্রস্রাবের বেগ সরল হবে। এই যোগটি সুশ্রুত সংহিতার ।
৩. ক্রিমিতে: এই রোগের উপদ্রব দূর করতে সেগুন গাছ-এর কাঠের গুড়া (করাত কাটা) ৪। ৫ গ্রাম ২ কাপ জলে সিদ্ধ করে আন্দাজ আধ কাপ থাকতে নামিয়ে ছেকে সেটা থিতিয়ে গেলে উপরের স্বচ্ছ জলটা সকালে ও বৈকালে দু’বারে খাওয়াতে হবে, এটা ৭/৮ বৎসর বয়সের বাচ্চাদের জন্য। বয়সানুপাতে মাত্রা কম-বেশী করতে হবে। তবে এটাও ঠিক যে, সব দ্রব্য সকলের সহ্য হয় না, সুতরাং আরও কম মাত্রায় ব্যবহার করে বিচার করে নিতে হবে যে এটা এর সহ্য হচ্ছে কিনা।
বাহ্য ব্যবহার
৪. মাথার যন্ত্রণায়: এটা অনেক সময় সাময়িক হয়, আবার পুরনো রোগ থেকেও হয়। দাঁতের, চোখের অসুখেও হয়, তবে বায়ু ও রক্তগতির দ্রুততা ছাড়া হয় না। এক এক সময় এমন যন্ত্রণা হয় যেন মাথা কুটতে ইচ্ছে করে। এক্ষেত্রে সেগুন কাঠের গুড়া জল দিয়ে বেটে কপালে প্রলেপ দিলে যন্ত্রণার উপশম হয় এবং ঘুমের আমেজও আসে।
৫. মচকে গেলে: মচকে যাওয়ার পর অনেক ক্ষেত্রে সেখানটা ফুলে ওঠে। এ ঝঞ্ঝাট তো অনেকেরই হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সেগুন কাঠের মিহি গুড়াকে পুনরায় জল দিয়ে বেটে নিয়ে অল্প গরম করে সকালে ও বৈকালে দু’বার প্রলেপ দিতে হবে। দ্বিতীয় দিনেই ফুলো কমবে এবং যন্ত্রণাও কমে যাবে।
৬. চুলকনা ও খোস-পাঁচড়ায়: সেগুনের বীজের তেল বিশেষ উপকারী। শীতের পর বীজ সংগ্রহ করে ঘানিতে ভাঙ্গিয়ে নিতে হয়। তেলটা বেশ গাঢ় হয়।
৭. কেশবর্ধনে: অনেকের মাথার চুল কিছুতেই বাড়তে চায় না, সেক্ষেত্রে সেগুনের বীজের তেল একভাগ আর নারকোল তেল দুই ভাগ একসঙ্গে মিশিয়ে স্নানের পরে ২০। ২৫ ফোঁটা অথবা প্রয়োজনমত মাথায় লাগাতে হবে। শুধু এই তেলটা মাথায় মাখলে চুলে আঠা হবে। সেইজন্য তেলটাকে একটু ফিলটার করে নিলে সুবিধে হয়।
CHEMICAL COMPOSITION
Tectona grandis Linn.
Analysis of wood :- Technoquinine; resin 2.9%; pentosans 19.4%; lignin 30%; cellulose 61%; acetyl content 1.66%; ash 1.33%; silica 0.25%; carbohydrate; terpenes; essential oil and fatty oil. Cellulose:- Halocellulose; £-cellulose; hemi-cellulose-A and hemicellulose-B. Carbohydrates :- Xylose; glucose; galactose; mannose and arabinose. Terpenes : – Squalene; lapachol; lapachonones and lectol etc.
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৫, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ ১৪০৩, পৃষ্ঠা, ২১৯-২২০।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Forest & Kim Starr
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।