শিরিষ গাছ-এর বোটানিক্যাল নাম Albizzia lebbeck Benth. ফ্যামিলি (Leguminosae.) একে মহীরুহ বলা চলে, রাস্তার ধারে সাধারণত এ গাছকে লাগানো হয় ছায়াতরু হিসেবে; এই গণের (genus) আরও কয়েকটি প্রজাতি (species) এ দেশে আছে। আয়ুর্বেদে আরও দুই প্রকার শিরীষের নামোল্লেখ দেখা যায় যেমন -কষ্ণশিরীষ, কাঁটা শিরিষ ইত্যাদি। রোগের প্রতিকারে শিরিষ গাছ-এর মূল বা গাছের ছাল (ত্বক), আর পাতা, ফল, বীজ ও কাঠের সারাংশ ব্যবহার করা হয়।
ঔষধ হিসাবে ব্যবহার:
১. ইঁদুর কামরের বিষে: ইদুরের কামড়ে প্রথমটা অনেক সময় আমরা তা উপেক্ষা করি, কিন্তু তার বিষক্রিয়া যে নানাপ্রকার উপসর্গ সৃষ্টি করে; এটা কিন্তু প্রাচীন ভারতের চিকিৎসক জানতেন, তাই সে যুগের মনীষীদের সমীক্ষা ছিল, তার প্রতিকারের ব্যবস্থায় সর্বাগ্রে শিরীষ ছাল বেটে দষ্টস্থানের চারিদিকে প্রলেপ দেওয়া অবশ্য কর্তব্য, তাছাড়া এর রসও পান করা উচিত বলে নির্দেশ দিয়েছেন।
২. বিষাক্ত পোকায় কামড়ালে বা আরশোলা উচ্চিংড়ে বা মাকড়সায় চাটলে শিরীষ গাছের মূলের ছাল বেঁটে লাগালে তাদের বিষক্রিয়া আর হয় না। (এটা চরকীয় পন্থা)।
৩. আধকপালিতে: আধকপালে ব্যথায় মূলের ছাল চূর্ণ বা বীজ চূর্ণের নস্য নিলে উপশমিত হয়। প্রথমে খুব অল্প পরিমাণ নিতে হয়, তাও দিনে দুবারের বেশি নয়।
আরো পড়ুন: শিরিষ গাছ গ্রীষ্মমণ্ডলী দেশসমূহের ভেষজ প্রজাতি
৪. চাঁলত দন্তে (দাঁত নড়তে থাকলে): এই গাছের মূলের ছাল চূর্ণ দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত ও মাড়ী দুই-ই শক্ত হয়।
৫. যাঁদের রক্ত দূষিত হয়ে গায়ে কালো দাগ হয়, সে ক্ষেত্রে গাছের ফল বেটে অল্প ঘি মিশিয়ে লাগালে স্বাভাবিক হয়।
৬.ঘাম: স্থূলকায় ব্যক্তির ঘাম হয়, অবশ্য আয়ুর্বেদমতে সেটা মেদেরই মলাংশ; শরীরের বারটি মলের মধ্যে এটি একটি। যে সব ব্যক্তির বংশে (জন্মসূত্রে) হাঁপানি বা একজিমার সম্পর্ক আছে। এক্ষেত্রে শিরীষের মূলের ছাল স্বেদবাহী স্রোতের গতি পরিবর্তনে আশ্চর্যরকম প্রভাব বিস্তার করে; তবে রোগীর বলাবল, বয়স, আনুষঙ্গিক লক্ষণ ও সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে মাত্রার তারতম্য করতে হয়।
৭.ক্ষয় রোগে: যাদের ঘুমালে ঘাম হয় (যাকে বলে নৈশ ঘর্ম), এক্ষেত্রেও এর মূলের ছালের চূর্ণ খাওয়ালে কয়েকদিনের মধ্যেই ঘাম কমিয়ে দেয়, অথচ কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না; এই ক্ষয় বন্ধ হলে রোগীর দুর্বলতাও কমে যায়।
অন্যান্য ব্যবহার:
এছাড়া বিভিন্ন রোগ প্রতিকারে এই গাছের পাতা, বীজ, গাছের অন্যান্য অংশ ব্যবহার করা হয়েছে; এসব তথ্য বিভিন্ন বনৌষধির গ্রন্থে পাওয়া যায়; যেমন বলা হয়েছে,
পাতার রস রাতকাণায় খাওয়ানো, চোখ উঠলে শিরীষের বীজ ঘষে চোখে কাজলের মতো লাগানো, গলগণ্ড হলে বীজ বেটে গলায় প্রলেপ, শুক্র স্তম্ভের জন্য শিরীষ ফুলের চূর্ণ খাওয়া ইত্যাদি
তবে ইউনানি সম্প্রদায় প্রধানভাবে ব্যবহার করেন কাঠের সারাংশ ও বীজ। তাঁরা রক্তবিকারে, চর্মরোগে ও রক্ত শোধনে দ্রব্যের সঙ্গে এই শিরীষ কাঠের সারাংশ চূর্ণ পাচন করার পদ্ধতিতে সিদ্ধ করে ক্বাথ খেতে দিয়ে থাকেন। অবশ্য এই কাঠের সারের ব্যবহারের কথা সুশ্রুতেও উল্লেখ আছে। আর তার বীজচূর্ণ মিছরীর সঙ্গে মিশিয়ে গরম দুধ সহ খাওয়ার ব্যবস্থা করেন যাঁদের শুক্রতারল্য ঘটেছে, বীজের চূর্ণের মাত্রা সাধারণত ১ থেকে ২ গ্রাম।
এই গাছটির ঔষধার্থে ব্যবহার কেবল ভারতবর্ষেই সীমাবদ্ধ নেই বহু দেশেই এটি ঔষধ হিসাবে ব্যবহার হয়ে থাকে। এটিকে নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্র প্রস্তুত করলে এই অযত্নে বেড়ে ওঠা গাছটিতে যে একটি বিশেষ শক্তি নিহিত আছে তা ভালভাবে প্রকাশ পাবে। তবে বর্তমানে বহু উন্মুখ বিজ্ঞানীদের মনে প্রশ্ন জাগিয়েছে যে জীন-জেনেটিকসের (Gene-Genetics) মাধ্যমে জীবের বিচিত্র দেহবিকাশের সঙ্গে রোগেরও বীজ নিহিত রয়েছে।
রাসায়নিক গঠন:
(a) Aminoacids viz, cystine, aspartic acid, threonine, serine, glutamic acid, proline glycine, alanine, valine, methionine, isoleucine, leucine, tyrosine, phenylalanine, lysine, histidine, arginine, tryptophan. (b) Essential oil.
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা,১৪৯-১৫১।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: J.M.Garg
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।