দেশী ও বহিরাগত শিলার প্রায় একই গুণসম্পন্ন, কেবল গুণের মাত্রা অল্প-বিস্তর কম-বেশি। যেটি যখন পাওয়া যাবে, সেটিই ব্যবহার করলে চলবে। এই গাছটি আসাম, অরুণাচল প্রদেশ, ভুটান, বর্মা, চীন, জাভা, বাংলাদেশ প্রভৃতি স্থানে অল্প-বিস্তর পাওয়া যায়। শিলারস গাছের ফ্যামিলী Altingiaceae. ঔষধার্থে ব্যবহার্য অংশ আঠা বা বৃক্ষনিস।
শিলারস বৃক্ষ-এর ভেষজ গুণাগুণ
১. শুক্রমেহ রোগে: প্রস্রাবের সময় কখনো কখনো জ্বালা অনুভূত হয়, কখনো আবার জ্বালা থাকে না, কিন্তু প্রস্রাব করার পূর্বে অল্প কোঁত দিলেই ডিমের লালার মতো কিছুটা পড়ে যায়, এছাড়া প্রস্রাবের সঙ্গে শুক্র নির্গত হয়; এক্ষেত্রে শিলারস ৫০০ মিলিগ্রাম মাত্রায় সকালে একবার ও বৈকালে একবার আধ কাপ দুধ সহ সেবন করলে মাসখানিকের মধ্যেই সাধারণতঃ এই অসুবিধেগুলি চলে যায়। যেক্ষেত্রে সামান্য উপকার হয়ে আর হচ্ছে না, সেক্ষেত্রে আরও মাসখানিক খাওয়া প্রয়োজন। ২ মাস খেয়েও কোন উপকার না পেলে আরও ভালভাবে পরীক্ষা করে দেখা উচিত— এটি অন্য কোন রোগ কিনা।
২. খোস-পাঁচড়া-চুলকানিতে: এক্ষেত্রে শিলারস ৫০০ মিলিগ্রাম মাত্রায় দিনে ২ বার খেতে হবে। এটি বড়দের মাত্রা বয়স অনুপাতে মাত্রার কম-বেশি করে নেওয়া প্রয়োজন। এছাড়া শিলারস ভিজানো জল দিয়ে আক্রান্ত স্থান ভালভাবে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে কিছুদিন করলে এগুলো চলে যায়।
৩. মূত্রকৃচ্ছতায়: অত্যধিক ঠাণ্ডা-গরমের ফলে প্রস্রাব অল্প হতে পারে। সেইসঙ্গে প্রস্রাবের সময় দাহ এবং যন্ত্রণা বহু ক্ষেত্রেই থাকে। অশ্মরী ও পৌরুষগ্রন্থির বৃদ্ধিতে এ অবস্থার সৃষ্টি হলেও তখন আরও অন্য অনেক উপসর্গ দেখা দেয়। জীবাণু-সংক্রমণ ছাড়াই মূত্রাল্পতা ঘটে। এসব ক্ষেত্রে শিলারস ৫০০ মিলিগ্রাম মাত্রায় দিনে ২ বার জল অথবা দুধ সহ খেতে হবে। সেইসঙ্গে শীতল ও লঘু আহার ও পানীয় গ্রহণ করা এবং কিছুদিনের জন্য পূর্ণ বিশ্রাম একান্তই প্রয়োজন।
৪. পৌরুষ গ্রন্থির বৃদ্ধিতে: প্রোস্টেট গ্লান্ডের বৃদ্ধি হেতু মূত্রকৃচ্ছতা আসে, সেইসঙ্গে থাকে যন্ত্রণা, মাঝে মাঝে প্রস্রাব একেবারে আটকে যায়, কখনো ফোঁটা ফোঁটা হয়। এক্ষেত্রে শিলারস ৫০০ মিলিগ্রাম মাত্রায় দিনে ২/৩ বার করে সপ্তাহখানিক খাওয়ার পর একটু উপশম হলে তারপর থেকে দিনে ২ বার করে খেতে হবে।
৫. মূত্রাশ্মরীতে: মূত্রবহ স্রোতে পাথুরী হলে মূত্রকৃচ্ছতা দেখা দেয়। রোগ সঠিকভাবে নির্ধারিত হলে এবং সেটি দীর্ঘদিনের না হলে উপরিউক্ত পদ্ধতিতে শিলারস কিছুদিন এক থেকে দু’মাস খেলে অনেক ক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যায়।
৬. অন্ত্রবৃদ্ধিতে: আধুনিক পরিভাষায় এটি সর্বাধিক পরিচিত, তা হলো হার্নিয়া। এটি শস্ত্রসাধ্য রোগ। তবে আশু যন্ত্রণা উপশমক হিসেবে শিলারসের প্রলেপের (জলে মলমের মত গুলে) ব্যবস্থা দিতেন প্রাচীন চিকিৎসকগণ । কেউ কেউ প্রলেপ দেবার পর তার উপর ধুতুরা বা তামাক পাতা জড়িয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
৭. লাবণ্য হানিতে: জৌলুস যদি চলে গেল তাহলে থাকলোটাই বা কি ! এ কষ্টটা নারী ও পুরুষ উভয়েরই, তবে অধিক কষ্ট মেয়েদেরই হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে শিলারস ৫০০ মিলিগ্রাম মাত্রায় দিনে ২ বার করে অল্প দুধ অথবা জল সহ মাস দুই-তিন খেলেই দেহের লাবণ্য ফিরে আসে। তবে এই লাবণ্যহানির পিছনে যদি কোন রোগের ইতিহাস থেকে থাকে, তাহলে সেটির চিকিৎসারও ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণতঃ পেটের গোলমাল অধিকাংশ ক্ষেত্রে লাবণ্যহানি ঘটায়। সেক্ষেত্রে শিলারস ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে অবস্থা বিবেচনা সাপেক্ষে যে কোন একটি বা দুটি অগ্নিবৃদ্ধিকর, হজমকারক, বায়ুনাশক, অম্লনাশক, কোষ্ঠ পরিষ্কারক ঔষধ দিতে হয়। প্রসবান্তিক দুর্বলতা এবং সেইসঙ্গে লাবণ্যহানি থাকলে এটি চমৎকার কাজ করে। আহার এবং দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্মের একটু-আধটু হেরফের কোন কোন ক্ষেত্রে করা দরকার হয়ে পড়ে ।
৮. কামোত্তেজনা হ্রাসে: মন আছে, বয়সও এমন-কিছু বেশি নয়, শরীরও ভাল, অথচ সঙ্গসুখ ভোগের বাসনায় ব্যাঘাত। সেটা কি নারী আর কি পুরুষ উভয়েরই হতে পারে। আমাদের শরীরের অন্তঃস্রাবীয় গ্রন্থিসমূহের ক্রিয়াহ্রাসের ফলেই এই অবস্থা, আর ক্রিয়াহ্রাসের কারণগুলির মধ্যে এটাও একটি যে, ইতঃপূর্বে সংযমের কোন প্রকার বাধা না মেনে বল্গাহীন জীবন-যাপন। এই যে ক্ষেত্র, এক্ষেত্রে ৫০০ মিলিগ্রাম মাত্রায় শিলারস দিনে ২ বার অর্থাৎ সকালে একবার এবং বৈকালে অথবা সন্ধ্যায় একবার আধ কাপ দুধ সহ খেতে হবে। সব ক্ষেত্রেই গরম করা দুধ ঠাণ্ডা করে ব্যবহার করতে হবে। এই সঙ্গে ১-২ চা-চামচ চিনি মিশিয়েও খাওয়া চলে ।
৯. জীর্ণ কাসে: পুরাতন কফ-কাসি, কোন কোন ক্ষেত্রে নির্গত কফ দুর্গন্ধযুক্ত, কফ কিছুতেই উঠতে চায় না। এক্ষেত্রে শিলারস ৫০০ মিলিগ্রাম মাত্রায় দিনে ২ বার দুধ সহ খেতে হবে। যে ক্ষেত্রে দুধ খেলে অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে, সেক্ষেত্রে হালকা গরম জল সহ খাওয়া উচিত। কেউ কেউ সমপরিমাণ যষ্টিমধু চূর্ণ ও শিলারস একত্রে মিশিয়ে মুখে রেখে চুষে চুষে খাওয়ার নির্দেশ দেন।
১০. ব্রণে: শিলারস জলে গুলে হালকা করে প্রলেপ দিলে ব্রণ কোন কোন ক্ষেত্রে বসে যায়, আবার যে ক্ষেত্রে বসে না, সেক্ষেত্রে ব্রণগুলি ফোড়ার রূপ নেয়, পাকে, ফাটে, পুঁজ নির্গত হয়ে ঘা শুকিয়ে যায়। এটি অত্যধিক ক্ষমতাসম্পন্ন জীবাণুনাশক।
CHEMICAL COMPOSITION
Altingia excelsa Noronha Whole plant contains:— aromatic resin; two aromatic balsams (cinnamic esters); cinnamicaldehyde and benzaldehyde. Stem contains:– resins.
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্র:
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১০, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, চতুর্থ মুদ্রণ ১৪০৭, পৃষ্ঠা, ৭৮-৮০।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।