কাজুবাদাম-এর বারোটি ভেষজ গুণ ও প্রয়োগ

কাজু বাদাম চিরসবুজ ছোট আকৃতির বৃক্ষ। এর পাতা সরল, একান্তর জাতীয় উদ্ভিদ। এটি একটি তৈল জাতীয় উদ্ভিদ।

কাজুবাদাম উদ্ভিদের সাধারণ বর্ণনা:

কাজু বাদাম (anacardium-occidentale) চিরসবুজ ছোট আকৃতির বৃক্ষ, এর পাতা সরল, একান্তর। উপবৃত্তাকার বা বি-ডিম্বাকার, কিনার অখণ্ড, শিরাবিন্যাস জারিকাময়। মঞ্জরী প্যানিকল, পুষ্প একলিঙ্গ, কখনও উভয়লিঙ্গ, একই গাছে পুং পুষ্প, স্ত্রীপুষ্প এবং উভয়লিঙ্গ পুষ্প জন্মে থাকে। বৃত্যংশ ৫টি, পাপড়ি ৫টি, পুংকেশর ৯টি, একটি সর্বাপেক্ষা লম্বা, কার্যকর গর্ভপত্র একটি; ফল নাট জাতীয় ফল।

দুইটি অংশে বিভক্ত-বোটার কাছের স্ফীত ও রসালো পুষ্পধার যাকে বলা হয় কাজ আপেল এবং কাজু আপেলের মাথায় সংযুক্ত কাজুবাদাম।

কাজুবাদাম-এর সাধারণ গুণাগুণ:

পুষ্টিকর, বলবর্ধক, স্মৃতিশক্তি বর্ধক, ক্রিমি, কুষ্ঠ, ক্ষত, বিসর্প, ফোলা গুটিকা, পক্ষাঘাত, শোথ নাশক, মূত্রকর, উষ্ণবীর্য, শুক্রবর্ধক।

কাজুবাদাম-এর ব্যবহার্য অংশ: ছাল এবং ফলের শাঁস ।

রোগ নিরাময়ে কাজুবাদাম-এর ব্যবহার:

১. ফলের শাঁস বলবর্ধক, পুষ্টিকর এবং মেধাবর্ধক।

২. ছালের তেল বক্রক্রিমি, কুষ্ঠ, ক্ষত প্রভৃতি রোগনাশক।

আরো পড়ুন: কাজু বাদাম ভেষজ গুণ সম্পন্ন চিরহরিৎ বৃক্ষ

৩. কাজু আপেল ডায়রিয়া, কার্ভি, শোথ এবং মূত্রযন্ত্রের অসুবিধায় ব্যবহৃত হয় ।

৪. বাদামের খোসার তৈল আঁচিল, কড়া, দাদ, ক্ষত প্রভৃতি রোগে হিতকর।

৫. কাজুবাদামের বীজের শাস থেকে উত্তেজক মদ প্রস্তুত হয়। এর ফল বিষাক্ত, কাজেই সাবধানে মুখে দেয়া উচিত।

ঔষুধ তৈরিতে কাজুবাদামের ব্যবহার: শুকনো বাদামের চূর্ণ ও অ্যালকোহল মিশ্রিত করে মাদার টিংচ্যর ঔষুধ প্রস্তুত করা হয় ।

প্রস্তুতকৃত ঔষদের ব্যবহার:

১. এ ঔষুধ বসন্তের গুটি দেখা দিলে ব্যবহার করা যায়।

২. অসহ্য চুলকানি হলে এ ঔষধ ব্যবহার করা হয়।

৩. শরীরে ফোসকার মতো উদ্রেক হলে এ ঔষধ ব্যবহার করা হয়।

৪. জিহবা অত্যন্ত ফোলা ও ব্যাথাযুক্ত দেখা দিলে এ ওষুধ ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

আরো পড়ুন:  লিচু ফল-এর আটটি ভেষজ গুণাগুণ

৫. কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত স্থান যদি অসাড় রোধ হয় তবে এটি একটি প্রথম শ্রেণীর ঔষধ ।

৬. মানসিক দুর্বলতা ও স্মৃতিশক্তি হীনতায়ও এই ঔষুধ ব্যবহৃত হয়।

৭. আঁচিল, পায়ের কড়া, ক্ষত, পায়ের তলা ফাটা প্রভৃতি পীড়ায় এ ঔষুধ ভাল কাজ করে।[১]

ব্যবহার:

যাঁদের এলার্জির ধাত আছে, তাঁদের কারো কারো কাজু বাদাম বা ঐ দ্রব্যজাত অন্যান্য খাবার সহ্য হয় না, খেলে নানান উপসর্গ উপস্থিত হয়।

১. হৃৎপিণ্ডের দুর্বলতা কমাতে: সামান্য একটু চলাফেরায় হাঁপিয়ে ওঠা, বুক ধড়ফড় করা, একটা অস্বস্তিবোধ, সর্বদা ভয় ভয় ভাব, অথচ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় হার্টের কোন অসুখ ধরা পড়ে না। এদিকে অম্ল, অজীর্ণ, শ্বাস, কাস প্রভৃতিও নেই, দাস্ত পরিষ্কার;

এই ক্ষেত্রে কাজু বাদাম ৫ গ্রাম নিয়ে বেটে তাতে জল এক কাপ ও এক চা-চামচ চিনি মিশিয়ে সকালে খেতে হবে এবং এভাবে বৈকালে আর একবার খেলে ভাল হয়। মাসখানেক খেলে ঐ কষ্টগুলো থাকবে না।

২. ইন্দ্রিয় দৌর্বল্যে: একদিন সব ঠিক ছিল, কিন্তু কোন না কোন কারণে মিথুন দন্ডটির দুর্বলতা এসে গেছে, অবশ্য তার পেছনে যদি কোন অভিঘাতজ কারণের ইতিহাস না থাকে।

সে ক্ষেত্রে ৫ গ্রাম কাজু বাদাম বেটে এক কাপ দুধের সঙ্গে মিশিয়ে তাতে এক থেকে দেড় চামচ চিনি দিয়ে সকালে একবার এবং সন্ধ্যায় একবার খেতে হবে। এটি বেশ কিছুদিন খেতে হবে, তাহলে অসুবিধেটা চলে যাবে।

৩. মস্তিষ্ক দৌর্বল্যে : কিছু ভাবতে গেলেই বিরক্তিভাব, অতি সাধারণ কথাও কখনো কখনো উত্তেজনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, স্মৃতি কমে আসে, ক্রমে ক্রমে নিজের কাছেই নিজের অসহায় অবস্থাটা অনুভূত হতে থাকে, তখন জীবনের মূল্য যেন কমে আসে ; এই অবস্থা যেকোন বার্ধক্যে আসে তা নয়; প্রৌঢ় বয়সে, এমনকি অনেক নবীন বয়সেরও অনেক ছেলে মেয়েদের এর শিকার হতে হয় বৈকি।

আরো পড়ুন:  বড় ছাতিম হচ্ছে এশিয়ার ভেষজ বৃক্ষ এর তেরোটি ভেষজ ব্যবহার

এই যে ক্ষেত্র, এতে ৫/৬ গ্রাম কাজু বাদাম ভাল করে বেটে, তাতে এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে সকালে একবার এবং ঐভাবে বৈকালে আর একবার খেতে হবে। ২/৩ মাস খেলে স্বাভাবিক অবস্থাটা ফিরে আসবে।

৪. অপুষ্টিতে: খাচ্ছে-দাচ্ছে অথচ গায়ে-গতরে লাগছে না, কখনো-সখনো খাওয়াতে অরুচি হয়ে থাকে, মাঝে মধ্যে হজমকারক ও ভিটামিনযুক্ত কিছু ঔষধ খেলে উপশম বলে মনে হয়। কৈশোর বয়সে এটা বহু ক্ষেত্রে দেখা যায়। তখন পড়াশুনায় মন বসে না, আবার খেলাধূলা কিংবা হুটোপুটি করতেও ইচ্ছে নেই।

এ অবস্থায় ৩/৪ গ্রাম কাজু বাদাম বেটে তাতে আন্দাজ আধ পোয়া দুধ ও এক চা-চামচ চিনি মিশিয়ে দিনে ২ বার অথাৎ সকালে খালি পেটে একবার এবং বৈকালে একবার ঐ ভাবেই খেতে হবে। মাসখানিক খেলে আপনা থেকেই বোঝা যাবে উপকারিতাটা। প্রয়োজনে ২/৩ মাস পর্যন্ত খেতে হবে।

CHEMICAL COMPOSITION

Anacardium occidentale Linn. Park contains: Tannin 9%, non-tans 9%, B-Sitosterol. Leaves contain: Tannin 23%, non-tans 18%, B-sitosterol, ethylgallate, hyperoside, methylgallate, leucocyanidine and leucodelphinidine. Cashew apple contains: moisture 87.9%, proteins 0.2%, fat 0.1%, carbohydrate 11.6%, mineral matter 0.2%, calcium 0.01%, phosphorous 0.01%, iron 0.2 mg./100g., thiamine 23%, riboflavin[২]

বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার অঞ্চলে অনেক লাগানো হয়। তাছাড়া ঢাকা ও অন্যান্য অনেক জায়গায় এটি বাগানে দেখা যায়। ছোট গাছটিকে ইচ্ছা করলেই বাড়িতে এক কোণে লাগিয়ে রাখা যায়।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. মাওলানা জাকির হোসাইন আজাদী: ‘গাছ-গাছড়ায় হাজার গুণ ও লতাপাতায় রোগ মুক্তি, সত্যকথা প্রকাশ, বাংলাবাজার, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ২০০৯, পৃষ্ঠা, ১১৬-১১৭।

২. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৯, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ ১৪০৫, পৃষ্ঠা, ৩৬-৩৭।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Upendra Shenoy

আরো পড়ুন:  কামরাঙা বাংলাদেশের মানুষের কাছে এক জনপ্রিয় ফল

Leave a Comment

error: Content is protected !!