আতা (বৈজ্ঞানিক নাম: Annona squamosa) বহু শাখা বিশিষ্ট মাঝারি ধরনের গাছ। প্রায় ১০। ১৫ ফুট পর্যন্ত উচু হয়ে থাকে। ছাল ধূসরবর্ণ, কাঠ খুব একটা শক্ত নয়। পাতা ৩। ৪ ইঞ্চি লম্বা, ও এক থেকে দেড় ইঞ্চি পর্যন্ত চওড়া হতে দেখা যায়, এর অগ্রভাগ ক্রমশ সরু। কচি কাপড় ও পাতার সংযোগস্থল থেকে এক একটি অথবা জোড়া জোড়া ঘি-রঙের একটু বাঁকা ফল বের হয়। এরা আকারে ১ ইঞ্চি লম্বা ও ৩টি পর পাপড়িযুক্ত। ফল এবড়ো থেবড়ো, গোলাকার, সবুজ বর্ণের, পাকলে সুগন্ধযুক্ত ও স্বাদে মধুর। ফলের ভিতরে শাঁসালো কোয় আছে। বীজ ঈষৎ ডিম্বাকৃতি ও চ্যাপ্টা, কালো রঙের। সাধারণতঃ মাচ মাসে ফুল, এপ্রিলে ফল ও সেটা পাকে মে-জুন মাসের দিকে।
নোনা ফল এটি বহিরাগত ফল, এর আদি বাসস্থান আমেরিকার উষ্ণপ্রধান অঞ্চলে, বহুকাল পূর্বে ভারতে এসেছে, এখন ভারতীয়। ভারতের সর্বত্র অল্পবিস্তর দেখা যায়।
এর সংস্কৃত নাম গণ্ডগাত্র, বাংলায় প্রচলিত নাম আতা ও হিন্দীতে সীতাফল নামে পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম: Anona squamosa Linn., পরিবার: Anonaceae. ঔষধার্থ ব্যবহার্য অংশ-বীজ ও ছাল।
আতা বা শরিফা-এর উপকারিতা:
আতা গাছের এক এক অংশ এক এক ধরনের রোগে কাজ করে; যেমন শিকড়ের (মূলের) রস ভেদক কিন্তু ফলের শাঁস বীর্যস্তম্ভক, আবার পাতার রস বাহ্য ব্যবহারে বিস্ফারক ও কীটনাশক।
১. আমাশায়: আতা গাছের মূলের ছালের রস ২০। ২৫ ফোঁটা ৭। ৮ চা-চামচ দুধসহ খেতে হবে, তবে ছাগলের দুধ হলে ভাল হয় অথবা ঐ আতাগাছের মূলের ছাল চূর্ণ ২০০ মিলিগ্রাম একবার বা দুইবার খেতে হবে। এর দ্বারা ২।৩ দিনের মধ্যে আমাশয় সেরে যাবে।
২. রক্তের বল কমে গেলে: অর্থাৎ যদি শ্লেষ্মবিকারের কোন ব্যাধি না থাকে, সেক্ষেত্রে পাকা আতাফলের শাঁসের রস ২। ৩ চা-চামচ করে সকালে ও বৈকালে ২ বার খেলে রক্তের নিস্তেজ অবস্থাটা নিশ্চয়ই সেরে যাবে। তবে যদি রস করা সম্ভব না হয়, তাহ’লে পাকা আতা এমনি খেলেই চলবে।
৩. অপুষ্টিজনিত: কৃশতায় শিশু, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ যেকোন বয়সেরই হোক, এক্ষেত্রে পাকা আতা ফলের রস ২। ৩ চা-চামচ করে একট, দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ালে ধীরে ধীরে পুষ্টি আনে এবং কৃশতাও দূর হয়।
৪. রক্তপিত্তজনিত দাহরোগে: হয়তো মাঝে মাঝে বমনের সঙ্গে রক্তও বেরোয়, আবার মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে গিয়ে স্বাভাবিক মনে হয়, আবার কারও কারও বা অনির বলও তেমন থাকে না, চিকিৎসকের দৃষ্টিতে এটা লো প্রেসার। এক্ষেত্রে পাকা আতা বা শরিফা-র রস ২। ৩ চা-চামচ করে প্রত্যহ খাওয়ালে ওসব উপসর্গগুলি থাকবে না এবং আর আসবেও না; এর সঙ্গে অনেকের দেহে সর্বদা একটা দাহ ভাব আসে, আর যদি আসে, এটার দ্বারা সেটাও চলে যাবে।
বাহ্য প্রয়োগ
৫. ফোড়ায়: যে ফোড়া দড়কচা অবস্থা, যাকে বলে পাকছেও না বসছেও। এক্ষেত্রে আতার বীজ বা পাতা বেটে সামান্য লবণ মিশিয়ে প্রলেপ দিলে ফোড়া পেকে, ফেটে পুঁজ বেরিয়ে যাবে।
৬. ক্ষতের পোকায়: পিত্তশ্লেষ্মপ্রধান শরীরে এই ক্ষত হ’লে তাড়াতাড়ি শুকোতে চায় না, দীর্ঘদিন চলতে থাকলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কীট হওয়াটাই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে কাঁচা আতা বা শরিফা-র ফল (বীজ সমেত) শুকিয়ে মিহি গুঁড়া করে, ঐ ক্ষতে ছড়িয়ে দিলে ক্ষতের কীটও মরে যাবে এবং ঘাও শুকিয়ে যাবে। তবে এই গুঁড়া ছড়িয়ে দেওয়ার আগে কালমেঘের পাতা সিদ্ধ জল দিয়ে ওই ক্ষতটা ধুয়ে নিলে আরও তাড়াতাড়ি সেরে যাবে।
৭. মূর্ছা রোগে: অনেক সময় মাসিকের (ঋতু) দোষে মূর্ছা রোগ হয়। এই রোগাক্রমণ হ’লে সেই সময় আতা পাতার রস ২। ১ ফোটা নাকে দিলে (ড্রপারে করে দিতে হবে) ২। ৩ মিনিটের মধ্যেই মূর্ছা ভেঙ্গে যায়।
৮. উকুনে: দেখতে উকুন বা খুবই ক্ষুদ্র কীট, কিন্তু এরা রোমকূপ থেকে দেহের রস খেয়ে বেচে থাকে, এটা যখন বহু হ’য়ে যায় তাতে শরীরের ক্ষতিসাধন করতে থাকে; চুলের গোড়া থেকেই এরা রস শোষণ করে, যার ফলে শরীর শুকিয়ে যেতে থাকে। অনেকের আবার পাড়ুরোগও হয়ে যায়। এক্ষেত্রে এই উকুনের বংশ নিবংশ করতে আতা পাতার রস ২ চা-চামচ এর সাথে ১/২ চা-চামচ জল মিশিয়ে লাগালে উকুন চলে যায়।
অনেকে বলেন যে, জল না মিশিয়ে লাগালেই উকুন তাড়াতাড়ি মরে যায়। একদিনে না গেলে ২। ৩ দিন বাদে আবার একবার লাগাতে হয়। এভিন্ন অনেকে পাতা বেটে মাথায় লাগিয়ে থাকেন। এর দ্বারাও উকুন মরে যায়। তবে সাবধানে ব্যবহার করতে হবে, যেন কোন রকমে চোখে না লাগে, তাহ’লে চোখ জালা করবে ও লাল হয়ে যাবে। তাছাড়া এই রস লাগানোর পর মাথা ঘুরতে থাকলে লাগানো উচিত নয়। তবে প্রথমে আধ চা-চামচ জল মিশিয়ে লাগিয়ে দেখাই ভাল।
সাবধানতা:
কোন গর্ভবতী নারীর আতার পাতা বা বীজ কোন কিছুই ব্যবহার করা উচিত নয়, গর্ভের ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
CHEMICAL COMPOSITION
Annona squamosa
1. Anonaine (Alkaloid 0.03%) 2. The pulp contains (a) Moisture (73.2%); (b) Glucose (14.5k); (c) Saccharose (1.7%); (d) Proteins (0.8%) 3. Vitamin C 4. Oven dried kernels of seeds contain 30.0% of oil.
Annona reticulata Bark contains :- An alkaloid, anonaine 0.12%. Root bark contains:— An alkaloid, reticulin. Fruit contains:— Moisture 72.3%; glucose 12.5% and proteins 2%.
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৫, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ ১৪০৩, পৃষ্ঠা, ১৬১-১৬৩।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।