রয়না বা পিতরাজ-এর মূল, ফুলের নানা ভেষজ গুণাগুণ

মাঝারি ধরনের গাছ, উচ্চতায় ২০। ৩০ ফুট পর্যন্ত হতে দেখা যায়, ছাল পুরু ও ভিতরের দিকটা ঈষৎ রক্তাভ। পাতা আকারে অনেকটা চাঁপা ফলের মত, পত্রদণ্ডের দু’দিকে সমান্তরালভাবে পাতা হয় এবং অগ্রভাগে একটি পাতা হয়। পুষ্পদণ্ডে স্ত্রী-পুরুষ ভেদে দু’রকমের ফুল ফোটে। ফল গোলাকার, মসৃণ, শাঁসযুক্ত এবং ঈষৎ লাল। অথবা ফিকে পীতবর্ণের হয়ে থাকে। এই ফলের বীজ থেকে তেল পাওয়া যায়। সাধারণতঃ বর্ষাকালে ফুল ও পরে ফল হয়।

এর আদিনিবাস সারা ভারতে হলেও বিশেষ করে আসাম, ছোটনাগপুর ও পশ্চিমবঙ্গ, এছাড়া বর্তমান বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই দেখা যায়।

এর সংস্কৃত নাম রোহিতক, বাংলার প্রচলিত নাম রয়না বা পিতরাজ ও তিক্তরাজ, হিন্দীতে হরিণহরা ও মারাঠীতে রোহদা নামে প্রখ্যাত। এর বোটানিক্যাল নাম Aphanamixis polystachya (wall.) parker. পরিবার Meliaceae. ঔষধাথে ব্যবহার্য অংশ— গাছের ছাল ও বীজের তেল।

রয়না বা পিতরাজ-এর গুণাগুণ

১. অর্শরোগে: রক্তবিকারজনিত অর্শ হলে তার বলিগুলির মুখ হবে ঠিক যেন জোঁকের মত। আর মাঝে মাঝে হবে শুধু রক্তদাস্ত এবং পিপাসা, এর সঙ্গে অরুচিও থাকে। তখনই বুঝতে হবে যে এটা রক্তবিকারজনিত অর্শ। সেক্ষেত্রে রোহিতক মূলের ছাল ৫ গ্রাম। কুটে নিয়ে তাকে ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে আন্দাজ এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেকে ওই কাথটা সকালের দিকে অর্ধেকটা এবং বৈকালের দিকে অর্ধেকটা সমান পরিমাণ। দুধ মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। আর একটা কথা বলে রাখি, রক্তবিকারজাত অর্শের জন্ম ভিতরে বাইরে একই আকৃতির হয়।

২. রক্তপ্রদরে: এ রোগটিও নারীর জীবনের একটা অভিশাপ। এই রোগটির যোগ্য চিকিৎসা না করলে বিসপ (ক্যানসার) হ’তে পারে। কিন্তু এই রোগ শুরু হওয়ার অল্পদিনের মধ্যেই যদি রয়না বা পিতরাজ ছাল (মূলের ছাল) খাওয়ানো যায়, তাহ’লে এ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

ব্যবহার বিধি: পিতরাজের মূলের ছাল ৫ গ্রাম ভাল ক’রে থেতো করে ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করার পর আন্দাজ আধ কাপ থাকতে নামিয়ে তাকে ছেকে, সেই জলটার দ্বিগুণ দুধ মিশিয়ে অর্ধেকটা সকালের দিকে আর অর্ধেকটা বৈকালের দিকে খেতে হবে।

আরো পড়ুন:  কাভ্রী গাছের নানাবিধ ভেষজ গুণাগুণ

৩. ক্রিমিরোগে: এমন এক ধরনের ক্রিমি হয় যেগুলির বাসস্থান রক্তে এবং জন্মও তাদের রক্তে, যারা রক্তবাহী শিরাতে অবস্থান করে তাদের সহজে কাব করা যায় না। এরা কিন্তু কুষ্ঠ পর্যন্তও উৎপাদন করে; এরা জাতিতে ছয় প্রকার। তবে সামান্য লক্ষণ প্রকাশ পেলে। (বাতর, কুষ্ঠের লক্ষণ) সঙ্গে সঙ্গে পিতরাজ মূলের ছালের ক্বাথ খাওয়ানো ভাল।

ব্যবহার বিধি: ওই ৫ গ্রাম মূলের ছাল ক্বাথ করে সমপরিমাণ দুধ মিশিয়ে সকালে ও বিকালে দু’বারে খেতে হবে, তবে ক্বাথটা এক কাপ রাখাই ভাল আর দুধও ওই পরিমাণ।

৪. মেহ রোগে (রক্তবিকারজনিত): যাঁরা রক্তবিকারজনিত মেহ রোগে ভুগে থাকেন তাঁদের প্রস্রাবটার রং খড় ভিজানো জলের মত হয়, তারপর কিছুদিন বাদে দেখা যায় সেটা আরও গাঢ়, তারপর একটু লালচে, তারপরেই সম্পূর্ণ লাল হয়। এক্ষেত্রে রোহিতক গাছের ছাল (মূলের ছাল হ’লে ভাল হয়) ৫ গ্রাম একটু, থেতো করে ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করতে হবে, তারপর সেটা এক কাপ আন্দাজ থাকতে নামিয়ে ছেকে অর্ধেকটা সকালে আর বাকী অর্ধেকটা বিকালের দিকে সমপরিমাণ দুধ মিশিয়ে খেতে হবে। এইভাবে ৪। ৫ দিন খাওয়ালে উপশমিত হবে।

৫. স্থৌল্য রোগে: মেদরোগ আর স্থৌল্য রোগ এক নয়; এই রোগের একটা বিশেষ লক্ষণ হচ্ছে শুধু জল খেয়ে থাকলে অথবা উপবাস করলেও মোটা হওয়া বন্ধ থাকে না বা রোগা হয় না। এই রোগে পায়ের উপরের অংশ ও নিতম্ব (পাছা) অস্বাভাবিক ভারী। এক্ষেত্রে ওই স্থূলতা কমাতে পিতরাজ বা রোহিতক ছাল ৫। ৭ গ্রাম থেতো করে ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করতে হবে, সেটা আন্দাজ এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেকে ওই জলটায় সমপরিমাণ জল মিশিয়ে দু’বেলায় খেতে হবে।

৬. যকৃৎ ও প্লীহার দোষে: যেখানে দেহের এই দুটি যন্ত্র ভাল কাজ করছে এবং তার জন্য বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টি হচ্ছে;  সেখানে রোহিতক ছাল ৪। ৫ গ্রাম এক কাপ গরম জলে ১০।১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে সেটা ছে’কে সকালে কিছু খাওয়ার পর খেতে হবে।

আরো পড়ুন:  শিয়ালমুঠা বাংলাদেশে জন্মানো ভেষজ বিরুৎ

বিশেষ জ্ঞাতব্য—  দেখা যায় যে, গা বমি বমি করছে অর্থাৎ বমনেচ্ছা উপস্থিত হ’চ্ছে, তাহলে সিদ্ধ না করে এক কাপ গরম জলে ভিজিয়ে রেখে, সেটা ছে’কে জলটায় সমপরিমাণ দুধ মিশিয়ে খাবেন।

CHEMICAL COMPOSITION

Aphanamixis polystachya

1. Aphanamixin. 2. Aphanamixol. 3. Aphamixinine.

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৫, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ ১৪০৩, পৃষ্ঠা, ২৩৯-২৪০।

Leave a Comment

error: Content is protected !!