শাখাপ্রশাখা বিশিষ্ট মাঝারি ধরনের গাছ। উচ্চতায় সাধারণতঃ ২০-২৫ ফুট পর্যন্ত হতে দেখা যায়। ছালের বর্ণ ধূসর। এরা কিন্তু কচি অবস্থায় অনেকটা রক্তাভ বর্ণের হয়ে থাকে ও পরে সবুজ বর্ণ ধারণ করে। কচি কাণ্ডের অগ্রভাগ থেকে গুচ্ছাকারে ছোট ছোট ঈষৎ লাল আভাযুক্ত ফুল বের হয়, তবে পুরাতন কাণ্ড থেকে যে ফুল বের হয় না তা নয়।
ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ কিন্তু পাকলে পীতবর্ণের ও সুগন্ধযুক্ত হয়ে থাকে। কাঁচাফল কষায় রসযুক্ত ও পাকলে অম্লমধুর হয়। এটি অনেকে অম্বল ও আচার করে খেয়ে থাকেন। সাধারণতঃ দুই প্রকারের কামরাঙ্গ দেখা যায়একটি মধুর ও অপরটি অম্ল। ভারতের সর্বত্রই বিশেষতঃ গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে একে লাগানো হয়ে থাকে।
কামরাঙা গাছ-এর অন্যান্য নাম:
এই গণের (Genus) ৩টি প্রজাতি আছে, তন্মধ্যে ২টি ভারত ও তৎসন্নিহিত অঞ্চলে বর্তমান। এর সংস্কৃত নাম কর্মরঙ্গ ও শিরাল, বাংলায় প্রচলিত নাম কামরাঙ্গা, ও হিন্দীতে খমরক, কামরাঙ্গা নামে পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম :Averrhoa carambola Linn. ও ফ্যামিলি Oxalidaceae.
ঔষধার্থ ব্যবহার্য:
কামরাঙা গাছ-এর ফল, পাতা ও মল। কাঁচা ফল স্বাদে অশ্ল, দেহের তাপ বর্ধক ও বক্ষের পীড়াদায়ক। পাকা ফল স্বাদে মধুরাম্লরস, বলকারক ও পিত্তবর্ধক। ঔষধাথ প্রয়োগ কম্বোডিয়ায় এই গাছের পাতা বেদনানাশক ঔষধ হিসেবে ও খোসপাচড়া সারানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও ইন্দোচীনে উক্ত পাতার রস ক্রিমির উপদ্রবে ও চুলকানিতে প্রয়োগ করা হয়। পাকা ফলের রস কোন কোন দেশে রক্তাতিসারে ও যকৃতের রোগে ব্যবহৃত হয়।
কামরাঙা গাছ-এর ঔষধ হিসাবে ব্যবহার:
১. অতিসারে: এই কামরাঙ্গা ধারক ঔষধরপে প্রয়োগ করতে হয়; তবে অতিসার রোগের প্রথম অবস্থায় কখনও ধারক ঔষধ দেওয়া উচিত নয়, অর্থাৎ প্রথমাবস্থায় কামরাঙ্গার রস খাওয়াতে নেই, কিন্তু রোগীর অত্যধিক পাতলা পায়খানা হতে হ’তে দেহের বলহীন হয়ে গেলে তখন আর অপেক্ষা করতে নেই, তৎক্ষণাৎ তাকে বন্ধ করতে হয়। ওই সময়ে বারে বারে খুব মিষ্টি পাকা কামরাঙ্গার রস এক চা-চামচ করে কয়েকবার খাওয়ালে ধীরে ধীরে দাস্ত হওয়াটা বন্ধ হবে আর প্রস্রাবটাও পরিষ্কার হবে।
২. বায়ুবিকার দূর করতে: আয়ুর্বেদের তিনটি পরিভাষা বায়ুবিকার, পিত্তবিকার আর শ্লেষ্মবিকার; কোষ্ঠাশ্রিত বায়ুবিকার হয়; অর্থাৎ যে সময়ে আমাশয়ে, মূত্রাশয়ে বায়ুবিকার হয়ে মূত্রাল্পতা হবে, পেটফাঁপ হবে, মলের তরলতা দেখা দেবে।
সেই সময় মিষ্টি পাকা কামরাঙ্গার রসের দ্বিগুণ ঠাণ্ডা জল মিশিয়ে, একটু চিনিসহ ২ থেকে ৩ চা-চামচ করে খাওয়ালে ওই বায়ুবিকারজনিত যে অসুবিধেগুলি দেখা দিয়েছিলো সেগুলি আর থাকে না।
৩. অর্শরোগে: খুব ধারালো অস্ত্র দিয়ে কামরাঙ্গা (মিষ্টি) কুচি কুচি করে কাটতে হবে, তাহলে ওর রসগুলি আর পড়বে না। সেই কুচিগুলিকে রৌদ্রে ভাল করে শুকিয়ে নিতে হবে, তারপর সেই কুচিগুলিকে বেটে আন্দাজ দেড়গ্রাম করে জলসহ খেতে হবে; অবশ্য এটাকে বড়ি করেও রাখা যায় এবং সেটা জলসহ খাওয়ান যায়। এইটা প্রত্যহ দু’বেলা খেলে অর্শের রক্তপড়া ও মলদ্বারের দপদপানি, যন্ত্রণা থাকে। তবে এটা বেশ কিছুদিন ব্যবহার করলে অর্শরোগটা অদৃশ্য হবে।
৪. পুরাতন জ্বরে: এক্ষেত্রে কামরাঙ্গার পাতার মিহি চূর্ণ ২ গ্রাম মাত্রায় ৩ থেকে ৪ দিন সকালে ও বিকালে দু’বার ক’রে জলসহ খেলে পুরনো জ্বরটা নিরাময় হবে, এবং অগ্নিবলও বেড়ে যাবে।
৫. যকৃৎ শূলে: পাকা কামরাঙ্গার রস ৩ থেকে ৪ চা-চামচ জল মিশিয়ে খেলে যকৃতের শূলজনিত ব্যথার উপশম হয় এবং এটাতে পিত্তশূলও দূর হয়।
বাহ্য ব্যবহার:
লোহার মরিচার দাগে: অনেক সময় অসাবধানতাবশতঃ কাপড়ে-চোপড়ে দাগ হ’লে সে সময় কামরাঙ্গা ফল পাওয়া গেলে, ওটাকে কেটে ওই টুকরো ওই দাগের উপর ঘ’ষলে ওটা উঠে যায়।
CHEMICAL COMPOSITION
Analysis of fruits :- Moisture 93.9%; protein 0.5%; fat 0.2%; carbohydrates 4.8%; mineral matter 0.2%; vitamin-A; iron 0.6 mg; potassium oxalate.
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৪, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ৫৫-৫৭।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।