বীরতরু কাঁটাযুক্ত মধ্যমাকার ঝাড়দার বৃক্ষ। গাছের কাঁটাগুলি সোজা ও শক্ত। দেখতে অনেকটা খয়ের গাছের মতো। গাছের কাঠ খুব শক্ত। অন্তঃকাষ্ঠ লাল, শক্ত ও ভারী, বেড়ানোর ছড়ি ও তাঁবুর খুটি তৈরীর কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। গাছের পাতা অনেকটা খদির (খয়ের) বা বাবলা পাতার মতো। বহু শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট গাছ। গাছের পাতা গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গাছের ছাল থেকে হরিদ্রাভ শ্বেত বর্ণের তন্তু পাওয়া যায়। ফুল পাখির পালকের মতো। এটি প্রথমে জাম রঙের, পরে গোলাপী এবং শেষে সাদা রঙের হয়ে থাকে। পুষ্পগুচ্ছের শেষাংশে কিছু পীত রঙের ফুলও দেখা যায়। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ফুল ও পরে ফল হয়। ফল চ্যাপ্টা এবং গাঢ় কালো রঙের, এর মধ্যে ৮ থেকে ১০টি বীজ থাকে।
এই গাছটির সংস্কৃত নাম বীরতরু, বেল্লন্তর ; এটিকে হিন্দীতে বরতুলী, বরতুলো, খেরী এবং বাংলায় বীরতরু বলা হয়। এর বোটানিক্যাল নাম Dichrostachys cinerea W. & A., ফ্যামিলী Leguminosae. ঔষধার্থে ব্যবহার্য অংশ—মূল, ছাল ও পত্র।
বিস্তৃতি: সাধারণতঃ এ গাছটি মধ্য ও দক্ষিণ ভারতের শুষ্ক ও মরু প্রদেশের অঞ্চল বিশেষে অধিক জন্মে। শুষ্ক ও মরু প্রদেশে এর জন্ম বলে এর শিকড় মাটির খুব নীচে চলে যায় জল সংগ্রহের জন্য। গুজরাটের পঞ্চমহাল জেলার বনাঞ্চলে এটিকে বহুল পরিমাণে দেখা যায়। মালয়, উত্তর অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি স্থানেও পাওয়া যায়।
ভেষজ ব্যবহার
এটি প্রধানভাবে কাজ করে রসবহ স্রোতে। গাছের কচি পাতার রস চোখের রোগ সারাতে ব্যবহৃত হয়। মূল সংকোচক এবং আমবাত, মূত্রাশ্মরী ও বৃক্ক রোগে ব্যবহার্য। সন্ধিবাত এবং শোথে মূলের প্রলেপ আরামদায়ক। এর মূল কফনাশক ও তৃষ্ণাহর; মূত্রাঘাত, অশ্মরী, যোনিরোগ, মূত্ররোগ, বাতবিকার, সন্ধিশূল ও মূত্রকৃচ্ছতা নাশক এবং অগ্নিদ্দীপক।
১. তৃষ্ণা রোগে— তৃষ্ণা রোগ হঠাৎই আসে না, আর ২/৪টি বড়ি (বটিকা) খেয়েও সারে না। এর উৎপত্তির কারণ দূর করার জন্য বীরতরু মূল বা গাছের ছাল। ৫-১০ গ্রাম একটু থেতো করে এক কাপ গরম জলে ভিজিয়ে রেখে সারাদিনে একটু একটু করে খেলে ওই তৃষ্ণা রোগের শান্তি হয়।
২. মূত্রাঘাতে (strangury)— অনেকের প্রস্রাব থেমে থেমে হয়। তবে এর মূল কারণ থাকে বায়ুবিকারে, কফ যখন আবদ্ধ হয়, তখনই এই উপসর্গ উপস্থিত হয়। এই ক্ষেত্রে বীরতরুর ছাল (ত্বক) ১০ গ্রাম ৫০০ মিলিলিটার জলে ১০/১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে পরে হেঁকে সেই জলটা ২/৩ দিন ব্যবহার করলেই সুফল পাওয়া যায়।
৩. যোনিকন্দে— যোনিদ্বারে এক রকম আবের মতো হয়, এর কারণ থাকে মেদোবিকার। এটাতে খুব যন্ত্রণা হয় যোনিশূল; আবার বেশিদিন থাকলে দূষিত ক্ষতও হয়, কোন কোন ক্ষেত্রে যোনির গহ্বরপথ রুদ্ধ হয়ে গিয়ে নিদারুণ যন্ত্রণা হয়। অথচ এগুলিতে কোন ঘাতক লক্ষণ (Malignancy) নেই। এই ক্ষেত্রে বীরতরু গাছের ছাল ১০ গ্রাম থেতো করে ৫০০ মিলিলিটার জলে সিদ্ধ করে আন্দাজ সিকিভাগ থাকতে নামিয়ে, ছেঁকে, সেই জলটা ২/৩ বারে (সমস্ত দিনে) খেতে হবে। আর ওই ছালের ক্বাথ দিয়ে তেল তৈরী করে সেই তেল ব্যাধিতস্থানে লাগালে আরও শীঘ্র উপশম হয়। তেল তৈরীর জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া বিধেয়।
৪. অগ্নিমান্দ্য— সাধারণভাবে হজম ক্ষমতা কমে গেলে বীরতরুর ছাল চূর্ণ ৫০০ মিলিগ্রাম মাত্রায় দিনে ২ অথবা ৩ বার জল সহ খেলে অগ্নিমান্দ্যের উপশম হয়। এটা কয়েকদিন ব্যবহার করলে অগ্নিবল ফিরে আসে।
৫. গাঁটে গাঁটে যন্ত্রণা (সন্ধিশূল) — এক্ষেত্রে বীরতরুর ছাল চূর্ণ ৫০০ মিলিগ্রাম মাত্রায় গরম জলসহ দিনে ২ বার খেতে হবে । কয়েক দিনের মধ্যেই ব্যথা কমে যাবে। এই সঙ্গে মূল বাটার প্রলেপ দিলে আরও সত্বর উপশম হয়ে থাকে।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৯, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ ১৪০৫, পৃষ্ঠা, ১৬-১৮।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।