শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট মাঝারি ধরনের গাছ। সাধারণতঃ ৮-১০ ফুটের বেশী উচু হতে দেখা যায় না। পাতা ৪ থেকে ১০।১২ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা, বোঁটার দিকটা গোলাকার। আকৃতি ও গঠনবিন্যাস দেখতে অনেকটা ডেলোমাদারের (Artocarpus lakoocha Roxb.) পাতার মত এবং খসখসে, এর গায়ে ও বোঁটায় সক্ষম রোম আছে, এমনকি কচি কাণ্ডও খসখসে। সমস্ত পাতা এক আকারের হয় না, ছোট বড় হয়, ফল গুচ্ছবদ্ধভাবে শাখা-প্রশাখায় জন্মে, এরা দেখতে যজ্ঞডুমরের মত হলেও তদপেক্ষা আকারে ছোট, ফলগাত্রও খসখসে, পাকলে এরা হলদে রঙের হয়। এটি আরব দেশের আঞ্জির ফলেরই ক্ষুদ্ররূপ। বারমাসই ফল হয় বটে, তবে বর্ষাকালেই এই গাছে ফল বেশী হয়।
ভারতের সর্বত্র অল্পবিস্তর দেখা যায়। পশ্চিমবঙ্গের প্রায় যেখানে সেখানে, পতিত জমির ধারে আপনা আপনি হয়। পাকা ডুমুর পাখীতে খাওয়ার পর বিষ্ঠা ত্যাগ করলেই তার মধ্যে যে বীজ থাকে সেই বীজেই গাছ হয়। কারণ এটা লক্ষ্য করা গেছে যে, গাছতলায় হাজার হাজার পাকা ডুমরে পড়ে থাকলেও সেখানে কিন্তু একটিও চারা হয় না।
এই গণের (Genus) প্রায় ৬০০ প্রজাতি আছে, তন্মধ্যে ১১২টি প্রজাতি ভারতে বর্তমান। এর সংস্কৃত নাম- কাকডুম্বরিকা, বাংলায় প্রচলিত নাম- কাকডুমুর, ডুমর ও হিন্দীতে- কাটগুলারিয়া বলে। এর বোটানিক্যাল নাম Ficus hispida Linn. ও পরিবার Moraceae. ঔষধার্থে ব্যবহার্য অংশ- ছাল, মূলের ছাল, ফল ও ক্ষীর।
কাকডুমুর–এর উপকারিতা
১. ভস্মকাগ্নিতে: লোকে চলতি কথায় বলে খাই-খাই করা রোগ। আসলে এই রোগটির উৎপত্তি বায়ুবিকারপ্রধান অগ্নিমান্দ্যেই। এই রোগের চিকিৎসা না করলে কৃশতা রোগ অনিবার্য। এটা হলে কাঁচা কাকডুমুর ফলের রস ২ চা-চামচ করে প্রত্যহ একবার অথবা ২ বার খেতে হবে। ২। ৩ দিন খাওয়ার পর ফল পাওয়া যায়।
২. অপুষ্টিজনিত কৃশতায়: পাকা কাকডুমরে কেটে দেখে নিতে হবে তার মধ্যে কোন পোকা আছে কিনা, তারপর তাকে রৌদ্রে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর প্রত্যহ ৫ গ্রাম মাত্রায় আধ কাপ দুধ ও দু’কাপ জলে সিদ্ধ করে আধ কাপ আন্দাজ থাকতে নামিয়ে ওই ডুমর সমেত দুধটা খেতে হবে।
এই অপুষ্টিজনিত কৃশতায় আর একটি জিনিস ব্যবহার করা হয়—সেটা হলো আঞ্জির, এটা আসে আরব অঞ্চল থেকে; এও ডুমুর, তবে শুকনা, মালার আকারে মেওয়ার দোকানে বিক্রি হয় (মেওয়া মানে ফল-ফারসী ভাষা) এই ডুমর একটি বা দুটি নিয়ে দুধে-জলে সিদ্ধ করে দুধ অবশিষ্ট থাকতে নামিয়ে খেতে হবে, তবে দুধ যদি এক কাপ হয় জল অন্ততঃ ৪ কাপ নিতে হবে। এক সপ্তাহের পর থেকেই শরীরে বল ও মাংস বৃদ্ধি যে হচ্ছে সেটা বোঝা যাবে। অবশ্য এটা ব্যয় সাপেক্ষ।
৩. শোথে অপুষ্টিজনিত: রক্তের বল কমে যাওয়ার জন্য ফোলে। পাকা ডুমুর ফলের রস (ফল কেটে দেখে নিতে হবে পোকা আছে কিনা) ২ চা-চামচ একটু গরম করে প্রত্যহ একবার অথবা দু’বার করে খেতে হবে। এর দ্বারা বুকের দুর্বলতাও কমবে, শোথও সারবে।
৪. রক্তপিত্ত রোগে: সে নতুন বা পুরোনো যাই হোক না কেন, পাকা ডুমুরের সঙ্গে জল মিশিয়ে নিংড়ে কিম্বা বাজার থেকে আঞ্জির কিনে এনে, তাকে ধুয়ে, ভিজিয়ে রাখুন (ছোট হলে ৩টি, বড় হ’লে দুটি), তারপর তাকে চটকে একটা জাল ন্যাকড়ায়। ছেকে সেই জলটা খেতে দিন (দুই-তিন বারে খেতে দিতে হবে)। এর দ্বারা দুই-তিন দিনের মধ্যে রক্ত ওঠা বন্ধ হয়ে যাবে আর গলা সুড়সুড় করা এবং কাসিও থাকবে না।
৫. প্রদরে: রক্ত বা শ্বেত প্রদর যাই হোক, ডুমুরের কাঁচা ছাল ১০ গ্রাম একট, থেতো করে তিন কাপ জলে সিদ্ধ করার পর আন্দাজ এক কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেকে ওই জলটা এবেলা ওবেলা খেতে হবে। এর দ্বারা রক্ত প্রদর তো সারবেই, কিছুদিন ব্যবহার করলে শ্বেত প্রদরও সেরে যাবে। তবে ওই ছালসিদ্ধ জল দিয়ে ওয়াস (স্প্রে ওয়াস) করালে আরও দ্রুত সেরে যাবে।
৬. পেটের দোষে: পেটের দোষটা যদি বারোমাসই চলে, সেক্ষেত্রে শুকনা ডুমুর ছাল (গাছের গোড়ার দিককার) ১০ গ্রাম একটু থেতো করে, ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করার পর আন্দাজ এক কাপ যখন থাকবে তখন তাকে নামিয়ে ছেকে, সেই জলটা সকালের দিকে অর্ধেকটা এবং বৈকালের দিকে অর্ধেকটা খেতে দিতে হবে।
৭. শ্বেতী রোগে: ডুমুরছাল (শুকনা) ১০ গ্রাম থেতো ক’রে ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে যখন আন্দাজ এক কাপ থাকবে, তখন তাকে নামিয়ে ছেকে, সেই জলটা এবেলা ওবেলা দু’বারে খেতে হবে। এর দ্বারা ওই দাগগুলির রং স্বাভাবিক হতে শুরু করবে। এর সঙ্গে ডুমুরের তরকারি সম্ভব হ’লে ভাত খাওয়ার সময় খেতে হবে।
এইটি খাওয়ার পর কারও কারও ঐ দাগের জায়গাগুলিতে প্রদাহ হ’তে থাকে, তখন কয়েকদিন ওটা খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে।
বাহ্য ব্যবহার।
৮. চর্মের বিবর্ণতায়: যেকোন কারণে চামড়ার রং অন্যরকম হ’য়ে গেলে কাকডুমর সিদ্ধ জলে (কাঁচা ডুমুর অথবা গাছের ছাল) ডুমুর অথবা ছাল অন্তত ১০। ১৫ গ্রাম নিতে হবে। ঐ ছাল থেতো করে ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে সিকি ভাগ থাকতে নামিয়ে ছে’কে ওই জলে চামড়াটা ধুয়ে ফেলতে হবে। এইভাবে ১৫। ২০ দিন ধোওয়ার পর দেখা যাবে যে ওই বিবর্ণতা চলে যাচ্ছে।
৯. দূষিত ক্ষতে: পচা বা দূষিত ঘা, সে নতুন বা পুরনো যাই হোক, ২০ গ্রাম ডুমুর ছাল সিদ্ধ জলে (৫। ৬ কাপ জলের শেষ পর্যন্ত এক/দেড় কাপ রেখে, সেটাকে ছেকে নিয়ে সেই জলে) ঘা ধুতে হবে। এর দ্বারা পচানিটা চলে যাবে ও সেরে যাবে।
CHEMICAL COMPOSITION
Ficus hispida
The latex contains: – Moisture 71.59%; Total solids 28.41%; Alcoholic extract 12.53%; Chloroform extract 13.38%; Residue 2.50%. · The bark contains :— tannin 2.1%; wax; and a glucosidic principle.
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৫, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ ১৪০৩, পৃষ্ঠা, ২০৭-২০৮।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।