জবা একটি ছোট আকৃতির ফুলের গাছ। লম্বায় পাঁচ থেকে আট ফুট পর্যন্ত হয়। বাসাবাড়ির ছাদের টবে নানা জাতের ফুলগাছ লাগিয়ে থাকে। এসব গাছের মধ্যে জবা একটি। দেশের সর্বত্রই এই ফুলের চাষ হয়।
রোগ নিরাময়ে জবা-এর ব্যবহার:
জবা ফুলে নানা ঔষধি গুনাগুণ রয়েছে। অনিয়মিত মাসিক, চোখ উঠা, মাথায় টাক , হাতের তালুতে চামড়া উঠা ইত্যাদি রোগে ঔষধি গুনাগুণ রয়েছে।
১. অতিরিক্ত ঋতুস্রাব: মহিলাদের অতিরিক্ত ঋতুস্রাবে জবাফুল পাঁচ থেকে সাতটি সামান্য গাওয়া ঘি দিয়ে ভেজে খেলে, অতিরিক্ত ঋতুস্রাব অব্যশই নিবারিত হবে। যদি এভাবে খাওয়ার অসুবিধা থাকে, পঞ্চমুখী জবার দু’টি কুঁড়ি ঢেঁকি-ছাঁটা আতপচাল ধোয়া পানি দিয়ে বেটে সেটা ৫০ মিলিলিটার পরিমাণ খেলে ঋতুর পরিমাণ স্বাভাবকি হবে; পঞ্চমুখী জবাফুলের রং অবশ্যই লাল হবে।
২. অনিয়মিত মাসিক: অনিয়মিত মাসিক শুরু হলেও এক থেকে দেড় দিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। আবার কোন সময় মাসিক শুরু হবার নির্দিষ্ট দিন পার হয়ে গেলে আদৌ ঋতু হয় না। তিনটি পঞ্চমুখী জবাব কুঁড়ি, দারুচিনি ৫০০ মিলিগ্রাম, এ দু’টি একসাথে বেটে শরবতের মত খেলে মেয়েদের স্রাব স্বাভাবিক হয়।
৩. চোখ উঠা: চোখ উঠা রোগে জবাফুল বেটে চোখের ওপর এবং নীচের পাতায় প্রলেপ দিলে উপকার হয়। তবে ঔষধ প্রয়োগ করে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে ফুলের রস চোখের ভিতর না যায়।
৪. সর্দি ও কাশি: যে কোন কারণে সর্দি এবং কাশি হলে জবা গাছের টাটকা মূল তিন থেকে চার গ্রাম পরিষ্কার পানি দিয়ে বেটে তার রসটা আধ কাপ ঠাণ্ডা পানিতে মিশিয়ে সকালে একবার এবং বিকেলে একই পরিমাণ আরও একবার খাওয়া দরকার। মাত্র তিন দিন খেলে রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে।
৫. ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র: এই রোগে প্রচণ্ড পিপাসা বোধ হয়। কাজেই তৃষ্ণা মিটাতে যেমন রোগী প্রচুর পরিমাণে পানি পান করে, তেমনি প্রস্রাবও হয় ঘন ঘন। গরমকালে হলে কষ্ট বেশি হয়। জবাগাছের ছালের রস দেড় চামচ এবং ঠাণ্ডা পানি আধ কাপ তার সাথে মিশিয়ে সেটা সকালে একবার করে কয়েকদিন খেলে প্রচণ্ড পিপাসা যেমন কমবে, তেমনি ঘন ঘন প্রস্রাবও বন্ধ হয়ে যাবে।
৬. টাক সমস্যায়: বহু মানুষের দেখা যায় মাথার খানিকটা অংশে চুল সম্পূর্ণ উঠে গিয়ে টাকের মত চক্ করছে। এরকম অবস্থা কেবল মাথায় নয়, দাড়ি এবং চোখের ভ্রুতেও হতে পারে। এটা এক ধরনের অতি ক্ষুদ্র পোকা যা চুলের কিছুটা খেয়ে ফেলে। চুল গজালেই তারা সেটা খেতে থাকে। ফলে মনে হয় টাক পড়েছে। জবা ফুল বেটে গোসল করার পর ভিজে চুল শুকিয়ে গেলে, ঐ জায়গায় দিনকতক প্রলেপ দিলে আবার নতুন চুল গজাবে এবং টাক থাকবে না। তবে রোগের প্রথম অবস্থায় ব্যবস্থা উপকার পাওয়া যাবে। তবে রোগ পুরানা হয়ে গেলে এ এত আর কাজ হবে না।
৭. চুল পড়া রোধ: জবা গাছের টাটকা পাতার রস এবং মসপরিমাণ জলপাই-এর তেল মিশিয়ে ভালভাবে ফোটাতে হবে। রস তেলের মধ্যে মিশে কেবল যখন তেলটা থাকবে তখন আঁচ থেকে পাত্রটি নামিয়ে ঠাণ্ডা হলে কাচের শিশিতে ভরে রাখতে হবে। এ তেল নিয়মিত মাখলে একদিকে চুল যেমন বাড়বে তেমনি চুল সহজে পারবে না।
৮. অকালে চুল পাকা দূর করতে: পাকা চুল কাল করতে হলে গরুর দুধ ৪ লিটার, জবাফুল বেটে তার রস সমপরিমাণ এবং যষ্টিমধুর কল্ক ৯০ গ্রাম একটি স্টিলের পাত্রে এক লিটার তেলের সাথে মিশিয়ে আগুনে ফোঠাতে হবে। দুধ ও ফুলের রস মিশে গেলে মাত্র আঁচ থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা হ’বার পর কাচের শিশিতে ভরে রাখতে হবে। এর তেল নিয়মিত ব্যবহার করলে পাকা চুল ধীরে ধীরে কাল হয়।
৯. হাতের তালুতে চামড়া উঠা: শীত কালে হাতের তালুতে চামড়া উঠে খসখসে হয়ে গেলে জবা ফুল তালুতে মাখলে খুব উপকার পাওয়া যায়। দিনে দুই তিন বার এক /দুইটা ফুল হাতের মধ্যেই ডলে ডলে লাগাতে হবে। লাগিয়ে স্বাভাবিক কাজ কর্ম করা যাবে। যতক্ষণ সম্ভব রাখতে হবে।
১০. বমি করবার প্রয়োজনে: যেসব দ্রব্য অস্বাস্থ্যকর বা কুখাদ্য হিসেবে পরিচিত, যেসব দ্রব্য আমরা খাই না তেমন কিছু, যেমন অজান্তে মাছি, চুল অথবা এই ধরনের কোনো জিনিস পেটে গেলে, তার পরিণতিতে বমির উদ্রেক হয়, অথচ বমি হচ্ছে না; এক্ষেত্রে ৪/৫ টি জবা ফুল নিয়ে বোঁটার সঙ্গে যে সবুজ ক্যালিস্ক অংশ থাকে, এই অংশটাকে বাদ দিয়ে ফুল অংশটাকে পানি ও চিনি পরিমাণমত দিয়ে চটকে সরবত করে দিনে ২/১ বার খেলে বমি হয়ে পেট থেকে ওগুলি সব বেরিয়ে যাবে।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. মাওলানা জাকির হোসাইন আজাদী: ‘গাছ-গাছড়ায় হাজার গুণ ও লতাপাতায় রোগ মুক্তি, সত্যকথা প্রকাশ, বাংলাবাজার, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ২০০৯, পৃষ্ঠা, ১৬৩-১৬৪।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Judgefloro
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।